Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাটকল শ্রমিকের জানাজা সম্পন্ন

ক্রমেই অসন্তোষ দানা বাঁধছে

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪৮ পিএম

অনশন কর্মসূচির চতুর্থ দিন শুক্রবার পর্যন্ত অসুস্থ এক শ্রমিকের মৃত্যু এবং প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনশনস্থলে শতাধিক শ্রমিককে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা। শ্রমিক অসন্তোষে উত্তপ্ত খুলনার শিল্পাঞ্চল।

মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১দফা দাবিতে খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের আমরণ অনশন কর্মসূচি চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হওয়া আমরণ অনশন কর্মসূচির চতুর্থ দিনে অসুস্থ ৪০ জনকে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে গত দু’দিনে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক জামাল হোসেন (৪০), স্টার জুট মিলের নারী শ্রমিক আলেয়া (৪৩), একই মিলের শ্রমিক আলাউদ্দিন (৫৫), জামাল হাওলাদার (৫০), আলমগীর হোসেন (৪৫), মোঃ শাহজাহান বাবুল (৬০), আঃ রাজ্জাক (৬৫), আঃ কুদ্দুস (৬০), ইসমাইল হোসেন (৫৫), মোঃ ফারুক (৫৫), আব্দুস সালাম (৬৫), করিম শেখ (৫৫), প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মোয়াজ্জেম হোসেন (৫০), মুক্তা বেগম (৪৫), মিনহাজ উদ্দিন (৫৫), মোঃ সোহরাব হোসেন(৫৫), আবুল কালাম (৪৫), আঃ মালেক (৫৫), মোঃ বাচ্চু (৫৬), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৯)। অনশন প্যান্ডেলের ভেতরে স্যালাইন চলছে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিকের শরীরে।
এদিকে অনশন প্রত্যাহারের কোনো অনুরোধই রাখছে না শ্রমিকরা। স্থানীয় সাংসদ ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিকদের নেতাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে বললেও তারা রাজি হননি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে পাটকল শ্রমিকরা। অপরদিকে প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন পাটকল শ্রমিকদের কর্মসূচিতে সংহতি জানাচ্ছে।
অনশনরত শ্রমিকরা বলেছেন, এবার আর কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, মজুরি কমিশন না নিয়ে আমরা এখান থেকে উঠবো না। বেঁচে থাকার এবং রুটিরুজির দাবি মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না।
শ্রমিক নেতারা জানান, এর আগেও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে কয়েকবার আন্দোলন করেছেন শ্রমিকরা। প্রতিবারই শ্রম প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের ঘরে ফিরে যেতে বলেন। তার ওই আশ্বাসে ভর করে শ্রমিকরা ঘরেও ফিরে গেছেন। কিন্তু দেখা গেছে কোনো বারই মজুরি কমিশন আর বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে শ্রমিকরা চাইছেন দাবি আদায় না করা পর্যন্ত তারা অনশনেই থাকবেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদর যুগ্ম-আহায়ক খলিলুর রহমান বলেন, শীতকাল হওয়ায় অনশনে অসুস্থ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। অনশনে থাকা শ্রমিকরা ক্ষুধার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু এবার দাবি আদায় না করে তারা ঘরে ফিরবে না।
ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকরা না খেয়ে অনশনে রয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) কোনো কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বিজেএমসি’র দুই কর্মকর্তা অনশনস্থলে এসে চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে অনশন তুলে নেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। তাদের ওই কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যান তারা। শ্রমিকরা এখন ক্ষুধার আগুনে ফুসছে। কোনো প্রতিশ্রুতিই এখন তারা শুনতে নারাজ। তারা প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান।
প্লাটিনাম জুটমিলের মৃত শ্রমিক আব্দুস সাত্তারের জানাজা সকাল ১০টায় মিলের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে খুলনা বিভাগীয় শ্রম কর্মকর্তা মিজানুর রহমান নগদ ৫০ হাজার টাকা তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। জানাজা শেষে তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে মরদেহ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার মা তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে আন্তরিক বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় খুলনা যুগ্ম-শ্রম অধিদপ্তরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন এবং অনশনে এক শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের মজুরি কমিশনের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বৈঠক ডেকেছে। সেখানে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা হবে। সেখানে মজুরি কমিশনের বিষয় সমাধান হবে। না হলে তিনি সবসময় শ্রমিকদের পাশে আছেন এবং থাকবেন বলে জানিয়েছেন। মৃত শ্রমিকের পরিবারকে শ্রম দফতর থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনশন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ