দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রিয় নবীর উপরোক্ত হাদিস থেকে মিলাদুন্নবী তথা প্রিয় নবীর জন্ম দিবস ও নুযুলে কুরআন দিবসের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবসের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন ও নেয়ামত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোজা পালনের বৈধতা প্রমাণিত হলো। সুতরাং সাপ্তাহিক হিসেব অনুসারে প্রতি সোমবার যেমনি মুসলমানদের নিকট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে তেমনি বার্ষিক হিসেবে ১২ রবিউ আউয়াল শরীফের সোমবার বিশ্ব মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ এবং এ মাসে এ দিবসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম ২৭ শে রমজান পবিত্র কুরআন অবতবনের দিন হিসেবে যেভাবে গোটা রমজান মাস সম্মানিত স্মরণীয় বরণীয়। তেমনিভাবে প্রিয় নবীর বেলাদত দিবস সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল মাসে হওয়ার কারণে গোটা মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত এবং এ মাসের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ওলামায়ে ইসলামের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। প্রসঙ্গত ঃবোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কুস্তালানী মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) এর মতো বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম বলেন-প্রিয় নবীর জন্মদিবস শবে ক্বদর থেকে উত্তম, আরো বলেন শুক্রবার আদম (আঃ) এর জন্ম দিবস হওয়ার কারণে যদি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত হয় তাহলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবসের পবিত্র ক্ষণ ও মুহূর্ত তোমার ধারণা মতে কেমন হওয়া উচিত। তাঁর সমুন্নত মর্যাদার যথার্থ বর্ণনা আদৌ কি সম্ভব। (জুরকানী শরহে মাওহেব পৃঃ ১৩২-১৩৫ মাদারেজুন্নবুয়ত ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা)
ঈদ শব্দের মর্মার্থঃ উপর্যুক্ত বর্ণনার আলোকে প্রতীয়মান হলো, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লামার ঘোষনানুসারে পবিত্র জুমাবার যেরূপ আদম (আঃ) এর জন্ম দিবস তেমনিভাবে ঈদের দিবসও বটে। বরঞ্চ আল্লাহর নিকট ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিবসের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ। (মিশকাত শরীফ ১২৩-১৪০ সংক্ষিপ্তসার) সুতরাং আদম (আঃ) এর জন্ম দিবস যদি ঈদের দিবস বরঞ্চ উভয় ঈদ হতে শ্রেষ্ঠ দিবস হতে পারে তাহলে ইমামুল আম্বিয়া সৈয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর শুভাগমন দিবস ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে কেন শ্রেষ্ঠ দিবস হবেনা?
কুল কায়েনাত যার নুরানী কদম পাকের কৃপায় সৃজিত, যাঁর নুরানী আলোকা ধারায় কুল মাখলুকাত আলোকিত লক্ষ কোটি দরুদ সালাম যারই তরে নিবেদিত, সেই অসহায়ের সহায় মানবতার কান্ডারী মুক্তর দিশারী বিশ্বশান্তির মূর্ত প্রতীক সৈয়্যদানা মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর শুভাগমনের স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যময় দিবসের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনাতীত নিঃসন্দেহে।
ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অভিমতঃ একদা হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) “আল ইওমা আক্মালতু লাকুম্ দ্বীনাকুম্ ওয়াত্মাতু” আয়াতটি পাঠ করলে এক ইয়াহুদী বলল এ আয়াতটি যদি আমাদের উপর অবতীর্ণ হতো তাহলে আমরা অবতরনের দিবসকে ঈদের দিবস হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন এ আয়াত সেদিনই নাযিল হয়েছে যেদিন দু’টি ঈদ ছিল শুক্রবার দিবস এবং আরাফাত দিবস (মিশকাত শরীফ ১২১ পৃঃ) মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে অত্র হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাবরানীসহ অন্যান্য বর্ণনা সূত্রে অনুরূপ প্রশ্নোত্তর সম্বলিত হাদিস হযরত ওমর (রা.) থেকেও বর্ণিত আছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, উভয় সাহাবী একথা বলেননি যে, ইসলামের মধ্যে শুধুমাত্র ঈদুল আযহা, ঈদুল ফিতর নির্ধারিত; আমাদের জন্য তৃতীয় কোন ঈদ উদযাপন করা বিদয়াত ও নিষিদ্ধ। বরঞ্চ জুমাবার ছাড়াও আরাফাত দিবসকে ঈদ ঘোষণা করে এ কথা প্রমাণ করলেন যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত প্রাপ্তির দিবসকে বিশেষভাবে স্মরণ করা এবং নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং শরীয়ত সম্মত উপায়ে আনন্দ ও খুশী উদযাপন করা কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ যা শরীয়ত সম্মত ও কুরআন সুন্নাহ কর্তৃক অনুমোদিত। তাছাড়া বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী (র.) এক স্থানে বর্ণনা করেন যে, প্রত্যেক খুশী ও আনন্দ বিষয়ক দিনের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তে ঈদ শব্দ ব্যবহারযোগ্য। জুমার দিন ঈদ হওয়া, আরাফাত দিবস ঈদ হওয়া, আয়াত অবতরনের দিবস ঈদ হওয়া, প্রত্যেক অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তির দিবস ঈদ হওয়া এবং প্রত্যেক শরীয়ত সম্মত খুশী পালনের দিন ঈদ হওয়া যখন সুষ্ঠভাবে প্রমাণিত হলো, সে ক্ষেত্রে সকল দিনের শ্রেষ্ঠ দিন ও উত্তম দিন মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্ম দিবস ঈদের দিন হওয়াতে বাধা কোথায়? নিঃসন্দেহে তা ঈদের দিবস। এ কারণে মুসলিম ও মিল্লাত ওলামায়ে-কেরামের দৃষ্টিতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবস উদযাপন ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা হিসেবে বহুল প্রচলিত। পবিত্র কুরআন অনুসন্ধানে এ সত্যের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায় মরিয়ম তনয় হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন-হে প্রতিপালক আমাদের জন্য আসমান হতে একটি মায়িদা অবর্তীণ করুন যা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ হিসেবে পরিগণিত হবে (পারা-৭-রুকু-৫) সুবহানাল্লাহ, মায়িদা তথা দস্তরখান এবং মান্না সালাওয়া জাতীয় খাদ্য নেয়ামত স্বরূপ অবতরণ হওয়ার দিন যখন ঈদের দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেল সেক্ষেত্রে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে খুশী উদযাপন করা নিঃসন্দেহে শরীয়ত সম্মত।
মুহাদ্দিসগণের অভিমতঃ ইমাম আহমদ বিস মুহাম্মদ কুস্তুলানী। আল্লামা মুহাম্মদ বিন আবদুল বাকী জুরকানী শায়খ মুহাক্কিক আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) প্রমূখ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ নি¤েœাক্ত দোয়া বর্ণনা করেন, ফরহেমাল্লাহ ইমরান এত্তাখাজা লায়ালীয়া শাহরে মাওলাদিহীল মোবারকে আয়াদান, অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক যে ব্যক্তি তাঁর প্রিয় নবীর শুভাগমনের মাসের রাত্রি সমূহকে ঈদের মত উদযাপন করে (জুরকানী মাওয়াহেব ১ম খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠা মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ ৬০ পৃষ্ঠা) স্থানের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পদধুলি ধন্য প্রিয় নবীর জন্ম স্থানটি পুণ্যময় ও বরকতময়।
উপরের বর্ণনায় বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ শুধুমাত্র একদিন নয় বরঞ্চ রবিউল আউয়াল মাসের সকল রাত্রি সমূহকে ঈদ আখ্যায়িত করেছেন এবং মিলাদুন্নবী উদযাপনকারীদের জন্য রহমত কামনা করেন যে দিনের সৌভাগ্যে গোটা রবিউল আউয়াল মাস সম্মানিত ও বরণীয় মাস হিসেবে পরিগণিত সেক্ষেত্রে ১২ রবিউল আউয়ালের সে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিবসটি কেন ঈদের দিন হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের সোপানে অভিষিক্ত হবেনা? বরং মাহযাবের ইমামগণ বলেন, মক্কা শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর পবিত্র স্থানটি মসজিদে হেরম ব্যতীত পৃথিবীর সকলস্থানের মধ্যে সর্বোত্তম। মক্কাবাসীগণ আজিমুশ্শান শান শওকতের মাধ্যমে ধর্মীয় উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সেখানে গুরুত্বসহকারে মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) স্বয়ং এসব মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করতেন এতে উপস্থিত থাকতেন (জাওয়াহেরুল বেহার ৩য় খন্ড ১১৫৪ পৃঃ ফুয়জুল হারমাঈন ২৭ পৃঃ) সাতশত হিজরীর বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফিজুল হাদিস আল্লামা শায়খ আবদুস সাত্তার দহীরা প্রণীত “আত্তানভীর ফি মাওলিদিল বশিরিন্নজির” কিতাবে উল্লেখ রয়েছে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি একদা নিজগৃহে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা এর বেলাদত তথা আবির্ভাব সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনাবলী বর্ণনা করতেছিলেন, এমতাবস্থায় প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন এবং এরশাদ করলেন-তোমাদের জন্য আমার সুপারিশ হালাল হয়েছে। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।