Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হেগের আদালতে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:২১ পিএম

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার বাদী গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে’তে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানিতে বাদী গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সোমবার দ্য হেগের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসও সেই শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থাকবেন আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।
কূটনীতিক ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে। ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসি’র পক্ষে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে দ্যা হেগে’র আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাটি করেছে গত ১১ই নভেম্বর। এখন এর শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ কিভাবে সহযোগিতা করবে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে তথ্য প্রমাণ সহ প্রতিনিধি দল শুনানি উপস্থিত থাকবে।
“গাম্বিয়া মামলাটি করেছে ওআইসি’র পক্ষ থেকে। যেহেতু রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেজন্য ওরা যদি কোনো ধরণের তথ্য চায়, আমরা গাম্বিয়াকে সাহায্য করবো।”
“কেননা অনেক সময় মিয়ানমার অনেক মিথ্যা তথ্য দেয়। মনে করেন, মিয়ানমার বলে ফেললো যে, আমরা বাংলাদেশের সাথে অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছি এবং আমরা ওদের নিয়ে যাব। এমন কথা বললে, তখন আমরা বলবো যে, আমরা চুক্তি করেছি। আমরা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছি যে, আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত হলে তারপার আমরা পাঠাবো। এনিয়ে তারা আরও কিছু বলতে চাইলে তখন আমরা আমাদের ডকুমেন্ট দেখিয়ে দেবো। এধরণের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের লোক গেছে।”
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতে রোহিঙ্গাদের আসার প্রেক্ষাপট নিয়েই বেশি বিতর্ক হতে পারে, সে ব্যাপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য এবং তথ্য প্রমাণ প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত এ সর্ম্পকিত কমিশনের রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট গাম্বিয়াকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ২০১৭ সালে। তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়েও তাতে সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবেও একটা চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ কৌশল হিসেবে ইসলামী দেশগুলোর জোটে সিদ্ধান্ত নিয়ে গাম্বিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছে।
এই আদালতে শুনানিতে বাংলাদেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সেজন্য বাংলাদেশ তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থেকে শুনানিতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছিলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের সাথে রাখতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তথ্য প্রমাণ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গাম্বিয়াকে সহযোগিতার বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন।
“আমি মনে করি, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে আলাদা যে আলোচনা হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক আদালতের বিষয়টি খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সাহায্যও প্রয়োজন। ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাহায্য না করলে তারাও বাংলাদেশের সাথে থাকবে না। সেজন্য সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে গাম্বিয়াকে বাংলাদেশ সাহায্য করলে মামলার পক্ষে যথাযথ তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।”


বাংলাদেশ সরকার কি বলছে?
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানি করবেন অং সান সু চি নিজে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ঘটনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অং সান সু চি’র মনোভাবের পরিবর্তন হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সম্মানজনক সমাধান হবে বলে বাংলাদেশ এখনও আশা করছে।
তবে এখন এই বিচারের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে এবং সেটা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্ত্রী মি: মোমেন মনে করেন।
“জবাবদিহি করা না হলে এধরনের জাতিগত নিধন এবং গণহত্যা বারবার হবে। আগামীতে এমন যেন আর না হয়, সেজন্য এখান থেকে শিক্ষা নেয়ার বিষয় আসবে। আমরাও রোহিঙ্গাদের বলতে পারবো যে, বিশ্বের আদালত তোমাদের প্রটেকশন দিতে বলেছে। সুতরাং তোমরা ফিরে যাও।” সূত্র : বিবিসি বাংলা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ