দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় রবিউল আউয়াল মাস, সেই পবিত্র মাস যে মাসে নবীকুলের সরদার, তুলনারহিত পুতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী, জ্ঞান বিজ্ঞানের আধার, স্রষ্টার সর্বোত্তম সৃষ্টি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইহধামে তাশরীফ এনেছেন, জড় জগৎসহ কুল কায়েনাতকে আলোকময় করেছেন হে রবিউল আউয়াল শুভ বসন্তের নববার্তা নিয়ে তোমার আগমনে আকাশ-বাতাস মুখরিত মানব দানব, কুল কায়েনাত পুলকিত। তোমার সমুন্নত মর্যাদায় আমাদের অন্তরাত্মা শ্রদ্ধার নিবেদিত। তোমার সমীপে শত সহ¯্র সালাম, তোমাকে জানাই অকৃত্রিম অভিবাদন। আহলান সাহলান! তুমি তো সুমহান মর্যাদায় ঐশ্বয্যমন্ডিত। মদীনার দুলাল, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম আর্দশ নবী মোস্তাফাকে তুমি বরণ করেছ, তুমি ধন্য মহিমান্বিত গৌরবান্বিত মদীনার প্রেমাস্পদকে ধারণ করে। তোমার স্মরণ মুসলিম মিল্লাতের তরে চির অম্লান। তোমার মর্যাদা অতুলনীয়, অপরিসীম। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব মদীনার তাজেদার বিশ্ববিজয়ী সিপাহ্সালার মালিকে আবে কাউছার নবী মোস্তাফার আগমন ঘটেছে তোমারই স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যময় মাসে; তাইতো তুমি চির অক্ষয়, চির অব্যয়। তোমার আগমনে নবী প্রেমিকরা পাগলপারা। মর্দে মুমিন বীর মুসলিমরা মাতোয়ারা তোমাতেই প্রিয় নবীর শুভাগমনে মুমীনদের অন্তরাত্মা আলোকিত। নিখিল বিশ্বভুবন ফুলে ফলে সৌরভে সুরভিত ও সুশোভিত, রহমতের বার্তাবাহী মাহে রবিউল আউয়ালের চন্দ্র পশ্চিমাকাশে উদিত হওয়ার সাথে সাথে নবী প্রেমিক মুসলমানরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। প্রিয় নবীর বেলাদতের স্মৃতি বিজড়িত এ মোবারক মাসে প্রিয় নবীর প্রতি নিবেদিত উম্মতরা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার সওগাত ও ভক্তির নযরানা পেশে বিভোর হয়ে পড়ে। সর্বত্র সাড়া পড়ে যায় ঐতিহাসিক জাতীয় ধর্মীয় আনন্দোৎসব ঈদ-এ- মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি। সর্বত্র উচ্চকিত তৌহিদ ও রেছালতের জয় ধ্বনি।
বক্ষমান নিবন্ধে কুরআন, সুন্নাহ, এজমা, কিয়াসের আলোকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সর্ম্পকে সৃষ্ট নানাবিধ বিভ্রান্তির অবসানে মুসলিম মিল্লাতের ঈমান আক্বিদা সংরক্ষণে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপস্থাপনে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বাণী ঃ অর্থাৎ যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে গুণে শেষ করতে পারবেনা। (পারা ১৩ রুকু ১৭) নিঃসন্দেহে আল্লাহর নেয়ামতরাজি অসংখ্য যা গণনাতীত ও বর্ণনাতীত। কিন্তু সকল নেয়ামতের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত উপরন্ত সকল নেয়ামতের প্রাণ সৃষ্টির উৎসমূল ঈমানের প্রাণ হল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পবিত্র সত্তা। যার কৃপায় অফুরন্ত সম্পদ ও নেয়ামত রাজি জগৎবাসীর প্রতি ¯্রষ্টার আর্শীবাদ স্বরূপ। আলা হযরত আহমদ রেযা খান কতই সুন্দর লিখেছেন-
উহ্ যো নথে তুকুছ নথে উহ যো নহো তুকুছ নহো
জান হে উহ্ জাহান কি জান হে তু জাহান হে
কাব্যানুবাদ ঃ তিনি যখন হয়নি ভবে কেউ ছিলনা তখন। সৃষ্টির কুলের প্রাণ তিনি মহান প্রভুর প্রথম সৃজন। এজন্যই মহীয়ান ¯্রষ্টা বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর প্রিয় হাবীব রাহ্মাতুল্লীল আলামীনের প্রেরণকে মহান আল্লাহর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত বলে অভিহিত করেছেন, এরশাদ করেছেন লাক্বাদ মান্নাল্লাহু আলাল মুমিনীনা ইয বাআছা ফিহীম রাসুলান মিন আনফুছিহীম (পারা ১৪ রুকু ৮)
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমীনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্যে তাদেরই কল্যাণ্যার্থে একজন সম্মানিত রসুল প্রেরণ করেছেন। ঈমানদারদের উপর সর্বোত্তম নেয়ামত প্রেরণ করে তাদেরকে ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। সুতরাং ঈমানদার মাত্রই সকলের উপর এ নেয়ামতের যথার্থ মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অবশ্যই কর্তব্য। বিশেষত ঃ যে মাসে যে দিনে এ মহান অনুগ্রহ দান করেছেন সে মাসে সেদিনে এ নেয়ামতের আলোচনা করা স্রষ্টার নির্দেশেরই অনুগামিতা। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের বহুস্থানে খোদাপ্রদত্ত নেয়ামতের আলোচনা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বিভিন্নভাবে এ নেয়ামতের যথার্থ স্মরণ করার নির্দেশ করেছেন। বিশেষতঃ সুরা দোহায় এরশাদ করেছেন, ওয়াম্মা বেনেমাতী রব্বীকা ফাহাদ্দিস, অর্থাৎ আপনার পালন কর্তার নেয়ামতের র্চচা করুন।(পারা-৩০ রুকু ১৮)
অতঃপর আল্লাহ পাক নেয়ামতের অবমূল্যায়ন ও অস্বীকারকারীদের পরিণতি সম্পর্কে এরশাদ করেছেন- আলাম ত্বারা ইলাল্লাযিনা বাদ্দালু নিআমাতাল্লাহে কুফরান, অর্থাৎ আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা অকৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহর নেয়ামতকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।(পারা ১৩ রুকু ১৭)
বোখারী শরীফ ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহে মুফাসসিরকুল শিরোমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ও হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞ হতে পারে। আয়াতে বর্ণিত নেয়ামতুল্লাহ দ্বারা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে।( বুখারী শরীফ ৩য় অধ্যায় ৬পৃষ্ঠা)
পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হলো হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ও রহমত, যাকে আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ বলে ঘোষণা করেছেন উক্ত নেয়ামত ও রহমতের স্মরণ ও আলোচনা করার আদেশ করেছেন। সুতরাং প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভাগমনের মাসে ও দিনে তারই স্মরণ সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুছ, আলোক সজ্জা, শোভাযাত্রা, খানা পিনার আয়োজন, মিষ্টান্ন বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা এবং তাঁর স্মরণে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর ও রাসুলের আনুগত্য বৈ কি? পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক; অকৃতজ্ঞতা কুফরীর নামান্তর।
রহমত লাভে খুশী উদযাপনঃ পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হয়েছে কুল বিফদলিল্লাহি ওয়াবিরাহমাতিহি ফবেজালিকা ফালয়াফরাহু হুয়া খায়রুন মিম্মা ইয়াযমাউন (পারা ১১ রুকু ১১)
অর্থাৎ হে প্রিয় হাবীব আপনি বলে দিন, তারা যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে উক্ত খুশি ও আনন্দ তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে অতি উত্তম। উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহে যেরূপভাবে নেয়ামতের র্চচা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের নির্দেশ রয়েছে। প্রিয় নবী যে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর রহমত, এতে মুসলিম মিল্লাতের কোন দ্বিমত নেই। অত্র আয়াতে যদি ফজল ও রহমত দ্বারা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করা হয় তাও হুজুরের ওসীলায় সৃজিত। সর্বাবস্থায় প্রিয় রাসুলের পবিত্র সত্তা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হওয়া প্রমাণিত। উভয় জাহানে তারই রহমতের বারিধারা প্রবাহিত, সুতরাং তাঁর গুণগান শান মান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য স্মরণ করাও আলোচনা করা বিধাতার আনুগত্যের নামান্তর, পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা করা অস্বীকার করা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।
বেলাদত দিবসের গুরুত্বঃ হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসুলের কাছে সোমবার দিবসে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে প্রিয় নবী এরশাদ করেন, ফিহী উলিদতু ওয়াফিহী উনযিলা আলাইয়্যা অর্থাৎ এ দিনেই আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং এদিনেই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।(মিশ্কাত শরীফ ১৭৯ পৃষ্ঠা) (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।