নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের ১৩তম আসরে আগেরদিন বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণ জিতেছিলেন দিপু চাকমা। তিনি তায়কোয়ান্ডো ডিসিপ্লিনের পুমসে ইভেন্টে ভারতের প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে সাফল্য তুলে নেন। গতকাল এই সংখ্যা তিনগুণ করেন লাল-সবুজদের কারাতেকারা। তাদের নজরকাড়া পারফরমেন্সে এদিন গেমসের কারাতে ডিসিপ্লিন থেকে আরো তিন স্বর্ণপদক জিতল বাংলাদেশ। তাই বলা চলে কাল লাল-সবুজদের জন্য কারাতের সোনায় মোড়ানো দিন ছিল। গেমসের তৃতীয় ও পদক লড়াইয়ের দ্বিতীয় দিন সকালে দেশের হয়ে সোনালী হাসি হাসেন কারাতেকা আল-আমিন ইসলাম। তাকে অনুসরণ করেন দুই নারী কারাতেকা মারজান আক্তার প্রিয়া ও হুমায়রা আক্তার অন্তরা। তারাও দুই সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেন। ফলে এদিন নেপালের কাঠমান্ডুর সাদ্দোবাদো স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তিনবার বেঁজে ওঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। সব মিলিয়ে দু’দিনে চার সোনা জিতে এসএ গেমসে গত আসরের সাফল্যকে ছুঁয়ে ফেললেন লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদরা। এখন সংখ্যা বাড়ানোর পালা।
স্বপ্ন চোখে নিয়ে কাল কাঠমান্ডুর হিম সকালে সাদ্দোবাদো স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ম্যাটে নামেন বাংলাদেশের আল-আমিন ইসলাম। সকাল ৯টায় কুমি ইভেন্টের পুরুষ একক অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি ওজন শ্রেনীতে তিনি ৭-৩ পয়েন্টে পাকিস্তানের জাফরকে হারিয়ে দিনের প্রথম স্বর্ণপদক জিতে নেন তিনি। এর আগে সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালের প্রতিযোগিকে ৭-৫ পয়েন্টে হারান আল-আমিন। স্বর্ণ জিতেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ম্যাটে শুয়ে পড়েন রাজশাহীর এ কারাতেকা। পরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিন, ‘আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছি। এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কি আছে। আমি যখন ম্যাটে নেমেছি, তখন আমার মনে হয়েছে দেশের মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে কিছু করতেই হবে। সে ভাবনা থেকেই আমি আমার মনপ্রান উজার করে খেলেছি। আর তাতেই সাফল্য পেয়েছি। আমার প্রিয় এই ইভেন্ট থেকে পদক জয়ের প্রত্যাশা ছিল। প্রথমবারের মতো এসএ গেমসে খেলতে এসেই সেরা হওয়ার আনন্দ আসলেই আলাদা। আমি আমার কোচ, কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন, আমি তাদের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি।’
আল-আমিনের স্বর্ণ জয়ে উজ্জ্বীবিত হয়েই ম্যাটে নামেন মারজান আক্তার প্রিয়া। কারাতের নারী বিভাগে কুমি ইভেন্টে অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে প্রিয়া ৪-৩ পয়েন্টে পাকিস্তানের কউসার সানাকে হারিয়ে স্বর্ণ জয়ের আনন্দে মাতেন। খেলার সময় সানার একটি পাঞ্চ সরাসরি আঘাত হেনেছিল প্রিয়ার নাকে। সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত ঝরে। মেডিকেল টিম এসে তাকে চিকিংসাও দেন। রক্তাক্ত অবস্থাতেই লড়াই চালিয়ে যান প্রিয়া এবং শেষ পর্যন্ত সাফল্যও তুলে নেন। স্বর্ণ জেতার পরও তার নাকে রক্তের জমাট ছিল স্পষ্ট। তবুও হাসি যেনো ঠোঁটে লেগেই ছিল। হাসিমুখেই প্রিয়া বলেন, ‘আমি এ খুশী ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এরচেয়ে বেশি খুশী আমি কখনো হইনি। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন এটা। গতকাল (সোমবার) রাতেও আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলতে বলতে বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার কাছে স্বর্ণ প্রত্যাশা করছি’। বাবার কথা শুনে আমিও প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- স্বর্ণ পদক নিয়েই যেন দেশের মাটিতে পা রাখতে পারি। আজ সে আশা পূর্ণ হয়েছে।’ গেমসে দেশের প্রথম মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বর্ণ জিতে দারুণ উচ্ছ¡সিত প্রিয়া আরো বলেন, ‘আগেরদিন পর্যন্ত আমি কিছুটা হতাশ ছিলাম। কিন্তু দিনের প্রথম ইভেন্টে আল-আমিন যখন স্বর্ণ জিতেন তখন আমার আতœবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’
নেপাল এসএ গেমসে হুমায়রা আক্তার অন্তরার হাত ধরে বাংলাদেশের প্রথম পদক এসেছিল। ব্রোঞ্জপদক দিয়ে গেমস শুরু করায় কিছুটা হতাশ ছিলেন তিনি। কিন্তু কাল সেই হতাশা কেটে গেলো স্বর্ণ জয়ের মাধ্যমে। এদিন মেয়েদের কুমি ইভেন্টের অনূর্ধ্ব-৬১ কেজি ওজন শ্রেনীর ফাইনালে অন্তরা ৫-২ পয়েন্টে নেপালের অনু গুরুংকে হারিয়ে সোনা জয়ের উৎসবে মেতে ওঠেন। ক্যারিয়ার সেরা সাফল্য পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্নই ছিল এসএ গেমসের স্বর্ণ জেতা। সেটা পূরণ হয়েছে। এই গেমসের জন্য আমি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। আজ যদি জিততে না পারতাম, তাহলে সেই কষ্টটা থেকে যেতো। এখন আমার কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে দেশ বড় কিছু দিতে পেরেছি বলে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।