Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে

শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ নিচ্ছেন না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছেই। ব্যাংক টাকা নিয়ে বসে আছে। কিন্তু ঋণ নিচ্ছেন না শিল্পোদ্যোক্তারা। দেশে নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে না বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ছয় বছরে বেসরকারি ঋণ সর্বনি¤œ পর্যায়ে আছে। চলতি বছরের অক্টোবর শেষে বার্ষিক ঋণপ্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশে, যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। জানা গেছে, খেলাপি ঋণের আধিক্য, ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের চাপে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতিতে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংকই শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ধ করেছে। এছাড়া উচ্চ সুদসহ আরও কিছু কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারাও ব্যাংকঋণের চাহিদা করছেন কম। উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। বিনিয়োগ না হলে নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি হবে না। অবকাঠামোগত সমস্যা, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়ে ঋণও নিতে চাচ্ছেন না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। চলতি বছরের (২০১৯) অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধির ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ হয়েছে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রæয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রেকর্ড ২৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি কমে হয় ১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এরপর টানা তিন অর্থবছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ আরও নাজুক অবস্থায় পৌঁছায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পরের অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে হয় ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা আরও কিছুটা বেড়ে হয় ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহের গতি অনেকটাই জোরদার হয়। ওই অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ গতি কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। ওই অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশে। যদিও এর পরের অর্থবছরেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আবার বেড়ে হয় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরে এটি রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস পেয়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এর আগে প্রথমার্ধে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও অর্জিত হয় মাত্র ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এদিকে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ মুদ্রানীতিকে কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি সহায়ক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি বলছেন গভর্নর ফজলে কবির।
নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা গেল অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
বেসরকারি খাতের ঋণ ধারাবাহিক কমতে থাকলে ভবিষ্যতে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ পর্যায়ে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ না বাড়লে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে উন্নয়ন হবে না। যেকোনো মূল্যে সরকারকে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঋণ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ