Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির অনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হু হু করে বাড়ছে দেশীয় ওষুধের দাম। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারি নির্দেশনা ও নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করছে না কোম্পানিগুলো। দেশে ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারে বিধি নিষেধ থাকলেও দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের ওষুধের বাজার ধরতে ডাক্তারদের প্রভাবিত করতে নানা ধরনের অনৈতিক উপায় অবলম্বন করছে বলে জানা যায়। একহাতে তালি বাজে না, ওষুধ কোম্পানির কমিশন, উপঢৌকন, বিদেশ ভ্রমণসহ নানা ধরনের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ডাক্তাররাও ব্যবস্থাপত্রে অপরীক্ষিত, অননুমোদিত ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টের নাম লিখে দিচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বিআইডিএসের এই প্রতিবেদনে ওষুধ কোম্পানিগুলোর সাথে ডাক্তারদের অনৈতিক লেনদেনের বিস্তারিত উঠে আসে। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক টার্নওভার ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর শতকরা ২৯.৩৬ ভাগ বা ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিপণন ব্যবস্থার অনৈতিক চ্যানেলে খরচ করা হচ্ছে বলে বিআইডিএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের কমিশন এবং ওষুধ কোম্পানির এমআরদের মাধ্যমে নানা রকম উপহার সামগ্রী প্রদানের কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বাসায় ফ্রিজ পাঠানো, ফ্ল্যাট বা গাড়ির মত লাখ লাখ টাকা মূল্যের উপঢৌকন ও সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণের মত খরচের হিসাব ধর্তব্যের বাইরে। এভাবেই বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।

দেশীয় ওষুধ কোম্পানীর অনৈতিক বিপণন ব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে না পেরে বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় ৬ দশক ধরে বাংলাদেশে ওষুধ বিপণন ও উৎপাদনের সাথে জড়িত ফরাসি ওষুধ কোম্পানি সানোফি সম্প্রতি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। এই লাভজনক বড় ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর অনৈতিক বিপণন ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো যেভাবে চিকিৎসকদের ঘুষ দেয়াসহ বিপণনের জন্য বিপুল ব্যয় করে থাকে তা অনৈতিক ও বৈশ্বিক বিপণন নীতির পরিপন্থী হওয়ায় তারা এভাবে বাজার ধরে রাখার প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা জানিয়েছে। সহযোগী বিদেশি কোম্পানির কাছে দেশের ওষুধ কোম্পানির এই বিপণন ব্যবস্থা তাদের নীতি বিরোধী বা অনৈতিক মনে হলেও আমাদের ওষুধ প্রশাসন বা সরকারের সংশ্লিষ্টদের যেন তাতে কোনো মাথাব্যথা নেই। এ ধরনের অনৈতিক বিপণন ব্যবস্থায় ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের পেছনে বছরে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মাশুল আদায় করা হচ্ছে ক্রমাগত ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে। এর ফলে ওষুধের মান এবং বিপণন নীতির সাথে আপস না করা নামি-দামি ওষুধ কোম্পানির বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ার কারণে বিপাকে পড়ছে দেশের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ।

ওষুধ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর মাইলফলক অর্জন। দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রফতানি করে এই শিল্পের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। পাশাপাশি দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মানহীন, ভেজাল ও নকল ওষুধের কারখানা। চিকিৎসকদের পেছনে টাকা খরচ করে মানহীন ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টের বাজার সৃষ্টির কারণে রোগীদের বেহুদা খরচ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। ডাক্তারি একটি মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃত। এই পেশার মান মর্যাদা ও মহত্ব টিকিয়ে রাখার মূল দায়িত্ব দেশের চিকিৎসক সমাজের। ওষুধ কোম্পানির অনৈতিক বিপণন বাণিজ্যের পাশাপাশি মানহীন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কমিশন বাণিজ্য, সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে সময় না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে বেশি সময় দিয়ে অল্প সময়ে বাড়ি-গাড়ি ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা চিকিৎসা পেশাকে গরিব মারার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ওষুধ কোম্পানির অনৈতিক বিপণন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একেকজন ডাক্তারের পেছনে জনগণের ট্যাক্সের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। ডাক্তারদের অবশ্যই এই পেশার দায়-দায়িত্ব, মান-মর্যাদা ও দেশের দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতে হবে। আইন বা বিধি নিষেধের মাধ্যমে নীতিহীন চিকিৎসকদের নৈতিকতার মান বৃদ্ধি হয়তো সম্ভব নয়। তবে স্বাস্থ্য সেবা খাতে মানুষের ভোগান্তি লাঘব, ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলা, রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয়-লুটপাট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • ash ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:৩৬ পিএম says : 0
    OI SHOB DOCTOR DER LICENCE CANCLE KORE DEW A WCHITH ! AT LEAST FOR 10 YERS
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন