Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পেঁয়াজ সঙ্কট : তোফায়েল আহমদের বিজ্ঞ ও প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেছেন, পেঁয়াজ বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই এবং জোর করে বা শক্তিপ্রয়োগে পেঁয়াজের দাম কমানো সম্ভব নয়। পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে আমাদের বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী ও সুবিজ্ঞ প্রবীণ রাজনীতিক ব্যবসায়ীদের বর্তমান সরকারের বান্ধব হিসাবে বর্ণনা করে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে উল্লেখ করেছেন, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রক্ষিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বিশেষ করে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করে বিনা লাভে বিক্রী করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে। গত রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তোফায়েল আহমদ আরও বলেছেন, সাংবাদিকরা এই পণ্যটির মূল্যহ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন যদি তারা আকাশছোঁয়া দামের কথা না বলেন। অনেক দেশেরই মিডিয়া মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি কাভার করে না। তোফায়েল আহমদ আরো একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বলেছেন, পেঁয়াজের ব্যাপারে ভারতের ওপর অধিকতর নির্ভরশীলতার সরকারি নীতি বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এই ভুল নীতি থেকে ভবিষ্যতে সরকার শিক্ষা গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

অভিজ্ঞ ও বহুদর্শী রাজনীতিক এবং সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের প্রতিটি বক্তব্যই অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও প্রণিধানযোগ্য। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের ব্যাপারে আমাদের ভারতনির্ভরতা অত্যন্ত বেশি। পেঁয়াজ সেইসব পণ্যের একটি। পেঁয়াজ অন্য অনেক দেশেই উৎপন্ন হয়। কিন্তু আমরা সেসব দেশ থেকে আমদানি করতে তেমন আগ্রহ দেখাই না। নিকটতম প্রতিবেশী হিসাবে ভারত থেকেই আমদানি করি। একটি মাত্র দেশের ওপর যে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের নির্ভরতা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে, যেমন এ ক্ষেত্রে এনেছে। ভারত প্রথম পেঁয়াজের আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেয় এবং পরে রফতানিও বন্ধ করে দেয়। এরই পরিণতিতে পেঁয়াজের এই উচ্চমূল্য, যার খেসারত পুরোটাই দিতে হচ্ছে ক্রেতাসাধারণকে। পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকায় এবং সব দেশের সবকালের রেকর্ড ভঙ্গ করায় এরকম একটা ধারণা সৃষ্টি হয় যে, ব্যবসায়ীরা ঘোঁট পাকিয়ে পেঁয়াজ আটকে রেখে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পত্রপত্রিকায় সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দামে এই লাগাতার উল্লম্ফন ঘটছে বলে দাবি করা হয়। এহেন প্রেক্ষাপটে পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের উড়োতাড়া, জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে হানা দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে, যাতে তাদের মধ্যে একটা ভীতি-আতংক দেখা দেয়। বাস্তবে এসব তৎপরতার কোনো সুফল দেয়নি, বরং নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তদন্ত-তল্লাশি করে যেমন সিন্ডিকেট খুঁজে পাওয়া যায়নি। তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে বড় রকমের কোনো মজুদও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতীতে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের উড়োতাড়া ও ধরপাকড় করে কোনো লাভ হয়নি। এতে বরং আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ও ক্ষতি হয়েছে। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। লব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে তাই সরকারকে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষা নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে হবে, অভয় দিতে হবে এবং তাদের সাথে নিয়েই পণ্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

সঙ্গতকারণেই আশা করা যায়, দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে আসতে থাকায় আগামী কিছু দিনের মধ্যে দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটা বহুদিন মনে থেকে যাবে এবং উল্লেখিত হবে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দান করে, জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটায়। আমরা পরিষ্কার এটা বুঝতে পেরেছি, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর একচেটিয়া নির্ভরতা আমাদের জন্য মোটেই বাঞ্ছিত হয়নি। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও এটা সমানভাবে প্রযোজ্য। কাজেই, আমাদের ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনের পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের মাটি খুবই উৎকৃষ্ট। প্রচুর পেঁয়াজ এখানে উৎপাদিত হয় এবং এ উৎপাদন আরো বহুগুণে বাড়ানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ উদ্যোগী হয়ে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গরু আমদানিতে এক সময় ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল ব্যাপক। ক’বছর আগে হঠাৎ সে দেশের সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়। ফলে একটা নাজুক পরিস্থিতি দেখা দেয়। কোরবানির ঈদসহ সারা বছরের জন্য গরুর যে চাহিদা তাতে বড় রকমে ঘাটতি দেখা দেয়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গবাদি পশু ও ছাগল- ভেড়া উৎপাদনে ব্যাপক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া হয়। যথা সময়ে তার সুফলও পাওয়া যায়। এখন দেশ গবাদি পশু ও ছাগল-ভেড়া ছাড়াও হাঁস-মরগী, ডিম-দুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই সাফল্যের দিকে লক্ষ্য রেখে তোফায়েল আহমদ যথার্থই বলেছেন, গরু রফতানি বন্ধে ভারতের মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশে গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে পেঁয়াজের চাষ শুরু হলে আগামী দু’ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশ পরিণত হবে। তিনি পেঁয়াজ চাষে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরা আশা করতে চাই, পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকার এক্ষেত্রে কৃষকদের উদারহস্তে সহযোগিতা দেবে এবং কৃষকরাও নব উদ্যমে পেঁয়াজ উৎপাদনে মনোযোগী হবে।



 

Show all comments
  • ** মজলুম জনতা ** ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৮:৫১ এএম says : 0
    আসলেই আমরা ভারতের প্রতি অতি নির্ভরশীল হওয়ার কারনে পেয়াঁজবাজারের এই বেহাল দশা।শীল্প ও কৃষিতে সরকারের নেক দৃষ্টি এখন জরুরী ।নইলে এ রুপ সমাস্যার সম্মুখিন হতে বাধ্য।জনাব সম্পদক সাহেব,শুধু সমাস্যা তুলে ধরলেই হবেনা।সাথে সমুহ সম্ভবনা ও তুলে ধরতে হবে।আপনাদের কলম চলুক বিরামহীন গতিতে সে প্রত্যাশা আমার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন