Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত থেকে চাল আমদানি নয়

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

চাল রফতানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশ ভারতে চালের দাম গত সপ্তাহে ছিল সর্বনিম্ন। পাঁচ শতাংশ ভাঙা আধা সিদ্ধ চালের দাম টন প্রতি প্রায় ৩৫৮ থেকে ৩৬২ রুপিতে ছিল, যা ২০১৭ সালের পর সর্বনিম্ন। দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গ্রীস্মে চাষ করা ফসল উঠা শুরু করলেও রফতানি চাহিদা কমে যাওয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার নির্ধারিত কুইন্টাল বা ১০০ কেজি চালের দাম ১৮৩৫ থেকে নিচে নামতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় দেশটি বাংলাদেশে চাল রফতানি করার চিন্তা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখন চালের দাম কিছুটা বাড়তি থাকায় ভারত থেকে চাল আমদানির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে আভাস দিয়ে বলা হয়েছে, এখনও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে চালের বাজার স্থিতিশীল না হলে ভারত থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেয়া হতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত মে মাসে দেশে চালের দাম একেবারে কমে যাওয়ায় কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে ভারত থেকে চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫৫ শতাংশ করা হয়। তবে ভাল ফসল হওয়া এবং পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্তে¡ও দেশে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দাম কিছুটা বাড়লেও সরকারের চাল আমদানি করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। 

বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশে বোরো ও আমনসহ অন্যান্য ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। চাহিদা ও উৎপাদন টার্গেট পূরণ করেও ধান-চাল উদ্বৃত্ত থাকছে। সরকারি গুদামগুলোতে ধান-চাল রাখার জায়গা নেই। এই উদ্বৃত্তের কারণে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সড়কে ধান ফেলে, এমনকি জমিতে আগুণ দিয়ে প্রতিবাদও করেছে। ন্যায্যমূল্য পাওয়া দূরে থাক, ধান উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে, অনেক কৃষক তাও পায়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের হতাশ হতে হয়েছে। সরকার চাল রফতানির কথা বললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দেশ ধান-চালের উদ্বৃত্ত ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। এরপরও কিছু ব্যবসায়ী ভারত থেকে চাল আমদানির পাঁয়তারা করে। কৃষকদের জন্য তা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয়। তারা প্রতিবাদ করলে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানির শুল্ক দ্বিগুণ করে দেয়। খাদ্যভান্ডার যখন উপচে পড়ছে, তখন হঠাৎ করে চালের দাম কেজি প্রতি পাঁচ-ছয় টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। সরকার পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদের কথা বললেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থায়, ধারণা করা অমূলক নয় যে, ব্যবসায়ীদের একটি অসাধু চক্র ভারত থেকে নতুন করে চাল আমদানির জন্যই দাম বাড়ানোর কারসাজি করে থাকতে পারে। এ প্রেক্ষিতে চাল আমদানির সুযোগ দেয়া হলে, তা হবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে এখন চালের যে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সাময়িক। ইতোমধ্যে আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। অচিরেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। চালের এই দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হলেও তার মূল্য দেশেই থেকে যাবে। ভারত থেকে আমদানি করা হলে, দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাবে। এমনিতেই কৃষক ধান-চালের যথাযথ মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। শাক, সবজি, রবিশস্য এমনকি তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। ধান-চালের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের মাধ্যমে যে খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টি হয়েছে, এই ঝুঁকে পড়া তাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শুল্ক হার কমিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির যে কথা শোনা যাচ্ছে, এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া মোটেও উচিত হবে না। এতে ভারত লাভবান হলেও আমাদের কৃষকরা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের উৎপাদিত ফসলের দাম আরও নিচে নেমে যাবে। বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে যে উদ্বৃত্ত চাল থাকে, তা নিয়মিত রফতানির কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্চনীয়। এতে কৃষক যেমন তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাবে, তেমনি দেশে আরেকটি সমৃদ্ধ রফতানি খাত সৃষ্টি হবে। বলা বাহুল্য, এক সময় বিশ্বব্যাপী আমাদের পাট রপ্তানি হতো। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত ছিল। কালক্রমে এ খাতটির প্রতি যথাযথ দৃষ্টি ও পদক্ষেপ না নেয়ায় তা এখন ধ্বংসের দিকে ধাবিত। এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র মূল ভূমিকা পালন করেছে। ধান-চাল উৎপাদনে আমরা সবেমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। রফতানি করার মতো অবস্থায় রয়েছি। এ অবস্থায়, চাল আমদানির কোনো কারণ থাকতে পারে না। একটি মহল দাম বাড়িয়ে চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে আমদানির সুযোগ নেবে, এটা হতে পারে না। পেঁয়াজের মতো চালকে আমদানি নির্ভর পণ্যে পরিণত করা যাবে না। এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো অজুহাতেই যাতে ভারত থেকে চাল আমদানি করা না হয়, এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।



 

Show all comments
  • Sufian Rakib ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সব উৎপাদনশীল সেক্টর ধংশ করে দেয়া হবে ধীরে ধীরে আর সেটাই হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful Islam Fahim ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    ভারত যখন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় এইসব শর্ত রাখে তাদের কাছ থেকে নানান রকমের তৃতীয় শ্রেনীর পন্য আমদানী করতে হবে। এমন অনেক পন্য ভারত থেকে আমদানী করা হয় যা অল্প খরচে বাংলাদেশে বানানো সম্ভব। উদাহরণ বিদ্যুৎ এর মিটার। এইগুলো বাংলাদেশে তৈরী করা হয়েছিল প্রতিটা ৬০০০ টাকা খরচে। হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে একই জিনিস আরো নিম্ন মানের ভারত থেকে আমদানী করছে প্রতিটা ২৫০০০ টাকায়। বন্ধুত্বের নামে বাংলাদেশকে হরিলুট করছে গরুস্থান।
    Total Reply(0) Reply
  • Aasif Shuvo ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    সমস্যা টা কোথায়!? ভারত থেকেই তো আনা হচ্ছে বাহিরের দেশ থেকে তো আর না!
    Total Reply(1) Reply
  • কাজী হাফিজ ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    ভারত থেকে চাল আমদানি করে দেশের কৃষক মারার কোনো মানে হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ১ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    আমাদের দেশেই যথেষ্ট চালের মজুদ আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন