মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে পরিবার। লঙ্কায় অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পরিবার। দেশটির রাজনীতিতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রভাব খাটিয়ে আসছে এই পরিবার। বাবার হাত ধরে ছেলে, ভাইয়ের পিছু পিছু ভাই, চাচার দেখাদেখি ভাতিজা- এভাবেই গোটাদ্বীপ রাজ্যের পুরো ক্ষমতাই পারিবারিক চৌহদ্দিতেই আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছে প্রতাপশালী এই পরিবার।
এ দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এখন রাজত্ব করছে রাজাপাকসে পরিবারের তৃতীয় পুরুষ। চতুর্থ পুরুষ সবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি নিচ্ছে। তৈরি হচ্ছে আগামীর জন্য। তিন প্রজন্ম ধরে লঙ্কা শাসন করে আসা রাজপাকসে পরিবার এখন আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, আরও বেশি মজবুত।
শ্রীলঙ্কার প্রধান তিনটি পদ দখল করে রেখেছে তিন ভাই। সেজো ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে (৭০)- দেশের সর্বোচ্চ চেয়ার প্রেসিডেন্টের আসনে বসা। তামিল টাইগারদের বিচূর্ণ করার ব্যাপারে তিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে যখন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি তখন তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব। ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলমের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এই অভিযানের ফলেই টাইগারদের পরাজয় ঘটেছিল এবং টাইগার নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ নিহত ছিলেন।
মেজো ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে (৭৪) প্রধানমন্ত্রী। পোড়খাওয়া রাজনীতিক। টানা এগারো বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা। তাদের বড় ভাই চামাল রাজাপাকসে (৭৭) লঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসেও রাজনীতিক। ছিলেন মাহিন্দা সরকারের উপদেষ্টা এবং এমপি।
বাবা-দাদাও ছিলেন ডাকসাইটে। আর এসবের ঠিক বিপরীতে ছিলেন এই ‘চার রতেœর’ মা দান্দিনা সামারাসিংহে দিশানায়েকে। পারিবারিক নথি ঘেঁটেও কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বামী-শ্বশুর-সন্তানরা খ্যাতির ভাড়ে আজও ‘দ্বীপবাসীর অখ্যাত’ই থেকে গেছেন রাজাপাকসেদের এই ‘রত্নগর্ভা’ মা।
যেভাবে রাজাপাকসে পরিবারের উত্থান
রাজপাকসে পরিবারের রাজনৈতিক উত্থান শুরু মাহিন্দা-গোতাবায়ার দাদা ডন ডেভিড রাজাপাকসের হাত ধরে। ১৮৮০-এর দশকে ডেভিড ছিলেন প্রাচীন রুহুনা রাজ্যের বৌদ্ধধর্মের অন্যতম প্রচারক। প্রাচীন ব্রিটিশ শাসনের গুচ্ছগ্রামের গ্রামপ্রধান ছিলেন তিনি। রাজাপাকসে পরিবারের অঞ্চলটি ‘গিরুয়েভা’ নামে পরিচিত ছিল। এটি ছিল শস্য-সবজি উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। বর্তমান সময়ে প্রচলিত দৈনিক শ্রমের ভিত্তিতে শ্রমিক ভাড়া করার পদ্ধতি তার গ্রামে চালু করেছিলেন ডেভিড। তিনি কখন মারা যান- তা জানা যায়নি।
ডেভিডের ছোট ছেলে তথা মাহিন্দা-গোতাবায়ার বাবার নাম ডন অলউইন (ডিএ) রাজাপাকসে। ১৯৬৭ সালে মৃত্যুবরণ করা এ রাজনীতিক ছিলেন শ্রীলঙ্কার কৃষিমন্ত্রী। ডেপুটি স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। অলউইনের বড় ভাই ডন ম্যাথিউ রাজাপাকসেও শ্রীলংকায় দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে তৎকালীন শিলংয়ের (শ্রীলঙ্কার পূর্ব নাম) আইনসভার সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৫ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ম্যাথিউয়ের মৃত্যুর সময় তার বড় ছেলে লাক্সম্যান রাজাপাকসের বয়স মাত্র ২১। পরবর্তীতে তিনিও রাজনীতিতে আসেন। বাবার মৃত্যুর মাত্র দুই বছর পর হাম্বানটোটার এমপি হন লাক্সম্যান। ১৯৮১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার ছোট ভাই জর্জ রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭৬ সালে মারা যান।
জর্জের মেয়ে (চতুর্থ প্রজন্ম) নিরুপমা রাজাপাকসে (৫৭) শ্রীলংকার পানি ও পয়নিষ্কাশন বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। বাবা জর্জের চাচাত ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকারের আমলের দ্বিতীয় দফায় (২০১০-১৫) এ মন্ত্রণালয় নিপূণ হাতে দেখভাল করেন।
এ পরিবারের তৃতীয় পুরুষ বর্তমানে লংকায় রাজত্ব করছে। অলউইন-দান্দিদা দম্পতির ৫ মেয়ে ও চার ছেলে। মেয়েরা সংসারি হলেও চার ছেলেই শ্রীলংকার বড় বড় মাথা। গত ১৮ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন গোতাবায়া। এর তিন দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মাহিন্দা।
পরে বড় ভাই চামালকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে বসান গোতাবায়া। দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা নিষিদ্ধ হওয়ার সংসদীয় আইনের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়ে মাহিন্দার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন। কিন্তু ভাইদের এ পদে এনে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ানোর কৌশল হাতে রয়ে যায়। ফলে নির্বাচনে প্রার্থী করেন সেজো ভাই গোতাবায়াকে। তার জয়ে আবারও ক্ষমতা পাকাপাক্ত হয় রাজাপাকসে পরিবারের। এর ফাঁকে মাত্র চার বছর ক্ষমতা থেকে দূরে ছিল পরিবারটি।
মাহিন্দার এক দশকের (২০০৫-১৫) দীর্ঘ শাসনামল নির্লজ্জ স্বজনপ্রীতির বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ছিল। তার চার ভাই সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও সরকারি অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতেন।
ভাইয়ের পুরো শাসনামলে প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন গোতাবায়া। আরেক ভাই বাসিল মেজো ভাই মাহিন্দার উপদেষ্টা ও অর্থমন্ত্রী (২০১০-১৫) ছিলেন।
বড় ভাই চামাল ২০১০-১৫ সালে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন। এ চার রত্নকে গর্ভে ধরে কালের গর্ভে রত্নগর্ভা হয়ে রয়েছেন দান্দিদা (তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি)। শ্রীলঙ্কার ডিএ রাজাপাকসে মেমোরিয়াল জাদুঘরে স্বামীর পাশে বসে থাকা অবস্থায় তার একটি মমির মূর্তি রয়েছে।
রাজাপাকসে পরিবারের ডিএনএ-তে মিশে রয়েছে রাজনীতির রক্ত। চতুর্থ পুরুষ রাজনীতিতে ধীরে ধীরে পাকাপোক্ত হয়ে উঠছে। মাহিন্দা-গোতাবায়ার ভাতিজা তথা চামালের বড় ছেলে শশিদ্রা কুমারা রাজাপাকসে (৪৩) উভা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। মাহিন্দার তিন ছেলে। বড় ছেলে নামাল রাজাপাকসে (৩৩) ২০১০-১৫ সালে এমপি ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।