পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ট্রানজিট সুবিধা দ্রæত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে ভারত। নয় বছর আগে বাংলাদেশ ভারতকে এই ট্রানজিট সুবিধা দিতে রাজি হয়। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পণ্যের শুল্ক নির্ধারণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সমস্যার কারণে এর বাস্তবায়ন ধীর গতিতে চলে। এখন ভারত এই ট্রানজিট সুবিধা কাজে লাগাতে বেশ জোরেসোরে কাজ শুরু করেছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী মাসে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রানজিটের শুরুতে কোন রুট ব্যবহার করা হবে এবং ভারত বাংলাদেশকে কত করে ট্রানজিট ফি দেবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১০ সালের নভেম্বরে ভারত ও বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ২০১৫ সালে কলকাতা এবং মুর্শিদাবাদ থেকে আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় পর্যন্ত বাংলাদেশের চার নদীর পথ ব্যবহারের জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করা হয়। এতে ভারতের জন্য বাংলাদেশের সড়ক, নদী ও রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া নিয়ে দেশে যথেষ্ট আপত্তি এবং তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। শুধু ট্রানজিট চুক্তি নয়, ভারতের সাথে অন্যান্য যেসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক হয়েছে সেগুলো নিয়েও দেশের মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব এবং সন্দেহ-সংশয় কাজ করছে। এর কারণ, এসব চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে কী ধরনের সুবিধা রয়েছে এবং কোন দেশ বেশি লাভবান হচ্ছে, তার বিস্তারিত কোনো কিছুই জনসম্মুখে তুলে ধরা হয়নি। এমনকি জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়নি। দেশের মানুষ শুধু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য শুনে ধারণা লাভ করেছে। এ ধারণার মধ্য দিয়ে তারা এটাই জ্ঞাত হয়েছে যে, এসব চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতই বেশি লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশ উল্লেখ করার মতো কোনো কিছু পাচ্ছে না। শুধু পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে শুল্ক পাবে, এ বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে। এই শুল্ক আবার বাংলাদেশ কর্তৃক নির্ধারিত হারে নয়। ভারতের পছন্দ মতো নির্ধারণ এবং সে যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই হয়েছে এবং হচ্ছে। এর ফলে দেশের মানুষের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ভারত তার চাহিদা অনুযায়ী যা চেয়েছে ও চাচ্ছে, তার সবই সরকার দিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে আমারা কিছুই পাচ্ছি না। সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে স্পষ্ট করে তেমন কিছু বলা হয় না। সরকারের বক্তব্য একটাই, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং তা বিশ্বে রোল মডেল। বন্ধুত্বের এই সম্পর্ককে সামনে তুলে ধরেই দেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতও একই কথা বলে আমাদের ন্যায্য দাবির কোনোটিই পূরণ করছে না। অভিন্ন নদ-নদীর পানির হিস্যা দিচ্ছে না। তিস্তা চুক্তি করব, করছি করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ চুক্তি কবে হবে, তা অনিশ্চিত। শুধু নদ-নদীর পানিই নয়, সীমান্তে বিএসএফ নির্বিচারে বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে মারছে, ধরে নিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন করছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানাভাবে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করে রেখেছে। অর্থাৎ, ভারত পানিতে শুকিয়ে, সীমান্তে গুলি করে, বাণিজ্য বৈষম্যের মাধ্যমে আমাদেরকে বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখাচ্ছে। আমাদের সাথে যা খুশি তাই করছে। দুঃখের বিষয়, ভারতের এমন বৈরী আচরণে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় না। বরং সরকার কেবল একতরফাভাবে বন্ধুত্বের কথা বলে যাচ্ছে এবং ভারতকে আরও কতভাবে খুশি করা যায় এমন প্রবণতা প্রদর্শন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই ভারতের প্রতি মানবিকতা দেখানোর কথা বলা হয়। মানবিকতার কথা বলে খাদ্য পরিবহনের সুযোগ থেকে শুরু করে ফেনী নদীর পানি পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে ভারত যে আমাদের সাথে কতভাবে অমানবিক আচরণ করছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। প্রশ্ন হলো, আমরা কি কেবল একতরফা মানবিকতাই দেখাব? আমাদের সমস্যাগুলোর প্রতি কি ভারত কোনোই মানবিকতা দেখাবে না? এ ধরনের একপাক্ষিক বন্ধুত্ব বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই।
ভারতকে যেহেতু আমরা ট্রানজিট দিয়েই দিয়েছি এবং তা দ্রুতই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে শুল্কহারসহ অন্যান্য যেসব সুবিধা আদায়ের সুযোগ রয়েছে, সেসব আমাদেরকে দরকষাকষি করে আদায় করে নিতে হবে। ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নের এ সময়ে বিষয়গুলো নিয়ে রিভিউ করা যেতে পারে এবং আমাদের সুবিধাদির সর্বোচ্চটুকু আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা মনে করি, এসব সুযোগ-সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত। ট্রানজিট ও এমওইউ-এর আওতায় সড়ক, নদী ও রেলপথ ব্যবহার করতে দেওয়ার বিনিময়ে সম্ভাব্য সব ধরনের সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের সুযোগ সাময়িক কোনো বিষয় নয়, এটা দীর্ঘ সময়ের। তাই শুরুতেই দেশের স্বার্থে সব সুবিধা আদায় করে নিতে হবে এবং কী সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে ও যাবে তা খোলাখুলিভাবে দেশের মানুষকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো ভারতের একপাক্ষিক চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া সমীচীন হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।