Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ষণসহ নির্যাতনের বিরুদ্ধে অভিযান দাবি

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশুধর্ষণসহ নির্যাতনের বিরুদ্ধেও অভিযানের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার ‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়ন সংগঠন ও সচেতন মানুষেরা অংশগ্রহণ করেন। এতে শ্বশুর বাড়ির লোকদের অত্যাচারে নিহত খুলনার সালমা ফারহানা মুক্তির ভাই মাহবুব রহমানসহ বিভিন্ন সময়ে ধর্ষনের শিকারদের স্বজনরা অংশ নিয়ে রাষ্ট্রের বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন। 

কর্মসূচিতে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির, নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক, ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’র নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক প্রমুখ। অনশনকারীরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশুর উপর ধর্ষণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান।
প্রতীকী অনশন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে ৯ টি দাবির কথা জানানো হয়। দাবিগুলো হল- দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রুপান্তর করা; উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করতে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা; নারী নির্যাতনের মামলায় সাক্ষী প্রদান বিধি যুগোপযোগী করা; পারিবারিক নির্যাতন আইন এর উপর সরকারের প্রচারনা অব্যাহত রাখা; বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা; হাইকোর্টের দেয়া ২০০৯ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যকর করা; নারী ও শিশুর উপর ধর্ষণ ও সকল প্রকার যৌন সহিংসতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মতো নারী ও শিশুর উপর ধর্ষণ ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা এবং সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইনকে সংশোধন করে সময়োপযোগী করা।
এসময় দেশের ৯টি জাতীয় পত্রিকা থেকে সংগৃহীত একটি পরিসংখ্যান প্রতীকী অনশন কর্মসূচীতে তুলে ধরে বলা হয়, বছরের প্রথম দশ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ২৫৩ জন নারী অর্থাৎ প্রতি মাসে প্রায় ১৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৫১ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬২ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১০জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২০০ জনকে, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২২১ জন নারী। অপরদিকে একই সময়ে ৭৬৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১৩৫ জন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮০ জন মেয়ে শিশু এবং ২৬ জন ছেলে শিশু। ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন ৩ জন নারী ও ২জন পুরুষ।
প্রতীকী অনশনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ পারুল আক্তার বলেন, ‘মামলা করার পর আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছি। আমার মেয়েকে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বর্তমানে আমাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারের পর মূলহোতা সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন কারাগার থেকে তার স্বজনদের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে।’
২০১৭ সালে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার জাকিয়া সুলতানা রুপার ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেক কষ্টে বোনকে পড়ালেখা করিয়েছি। সে পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করতো। কি দোষ ছিল তার! স্বাধীন দেশে তাকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়। হত্যার ঘটনায় মামলার পর নিম্ন আদালত আসামীদের কয়েকজনকে ফাঁসি এবং একজনকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। কিন্তু আসামীরা উচ্চ আদালতে রিট করার পর ঘটনার দুই বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত শুনানির তারিখ দেয়া হয়নি। আমরা এখন সঠিক বিচার পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছি।’
প্রতীকী অনশনে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, বিভিন্ন জায়গায় কথা বলছি কিন্তু অপরদিকে নির্যাতন বেড়েই চলছে। এর প্রধান কারণ আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বললে বিচার হবে, না বললে বিচার হবে না। তিনি আরও বলেন, নারী নির্যাতনের গভীরে যে কারণ তা হচ্ছে সমঅধিকারের কথা বলা হলেও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকটি সমাজে আজও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা আজ এমন সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশে বাস করছি যেখানে জবাবদিহীতা নেই। ক্ষমতাবানরা নারীদের নির্যাতন করে বুক ফুলিয়ে হাঁটছে। আজকে বিচারহীনতার সমাজে বাস করছি বলেই বারবার নারীদের উপর যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ’##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ