Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গ্রাম আদালতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দেশে ‘গ্রাম আদালত’ চালু আছে। ১৯৭৬ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যম এই আদালত আইনগত ভিত্তি লাভ করে। ২০১৩ সালে আইনটিতে সংশোধনী আনা হয়। গ্রাম আদালতের ধারণা এ দেশ থেকেই উদ্ভূত। যুগ যুগ ধরে গ্রামে যে শালিসী ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, কার্যত এতে তারই আইনগত স্বীকৃতি ও অনুমোদন দেওয়া হয়। নাম গ্রাম আদালত হলেও এটি ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত। সে হিসাবে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি গ্রাম আদালত রয়েছে। কীভাবে আদালত গঠিত হবে, কোন কোন বিষয়, অপরাধ বা বিরোধ এ আদালতে মামলাযোগ্য হবে, আদালতের এখতিয়ার কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে- এসবের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে অধ্যাদেশে। বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের মনোনীত দু’জন করে প্রতিনিধি, যার একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হবেন এবং চেয়ারম্যানকে নিয়ে গঠিত হবে গ্রাম আদালত। চেয়ারম্যান আদালতেরও চেয়ারম্যান হবেন। অনাস্থা বা পক্ষপাতের আশংকার ক্ষেত্রে আদালত কীভাবে গঠিত হবে, অধ্যাদেশে তারও উল্লেখ আছে। দেওয়ানী ও ফৌজদারী উভয় ধরনের বিষয়, অপরাধ বা বিরোধ ফয়সালার এখতিয়ার আছে এই আদালতের। তবে বড় ও গুরুতর অপরাধ যেমন- খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি বিচারের এখতিয়ার নেই। কিছু অর্থদন্ডে দন্ডিত করার ক্ষমতা থাকলেও কারাদন্ডে দন্ডিত করার কোনো ক্ষমতা নেই গ্রাম আদালতের। আসলে এটি শালিসী আদালতই। তবে তা আইন দ্বারা গঠিত ও নিয়ন্ত্রিত। এর কার্যকারিতা স্বভাবতই বেশি। এই আদালতের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা যেমন বাড়ছে তেমনি এ থেকে উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রচলিত আদালতের বাইরে ফয়সালা বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত।

আমাদের আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা বিপুল। বলা যায়, আদালতে আদালতে মামলার জট লেগে আছে। এ মুহূর্তে আদালতগুলোতে মোট সাড়ে ৩৭ লাখ মামলা বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। এসব মামলার বিচার কবে হবে, কেউ বলতে পারে না। এমন অনেক মামলা আছে, যা একনাগাড়ে দু’তিন পুরুষ ধরে চলছে। ‘বিচারে বিলম্ব বিচার না পাওয়ার শামিল,’ এই প্রবাদটির কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে। বস্তুত, মামলার সংখ্যা কমানো, সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে বিচার নিষ্পন্ন করা, মামলার খরচপাতি থেকে বিচারপ্রার্থীদের রেহাই দেওয়ার মতো বিষয়গুলো সামনে রেখেই গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, গ্রাম আদালত ছোটখাটো বিষয়, অপরাধ বা বিরোধ নিষ্পতিতে ভালো রকমের ভূমিকা রাখতে এবং সামাজিক শৃংখলা ও শান্তি সুরক্ষায় প্রত্যাশিত অবদান যোজনা করবে। স্বীকার করতেই হবে, এ আকাক্সক্ষা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। না হওয়ার কারণ, সরকারের উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। সরকার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দিচ্ছে অথচ গ্রাম আদালতকে যথোযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে ডোনারদের অনুদান-সহযোগিতা আছে বলেই সম্ভবত: গ্রাম আদালত এখনো টিকে আছে। অনেকেরই এটা অবিদিত থাকার কথা নয় যে, একদা গ্রাম সরকার গঠিত হয়েছিল। গ্রাম আদালতের বিষয়টিও তখনকার। গ্রাম সরকার ও গ্রাম আদালতের কনসেপ্ট দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কোনো সরকারই এ দুটি ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্ব দেওয়ার তাকিদ বোধ করেনি। বলা দোষের হবে না যে, রাজনৈতিক সংকীর্ণতাই এর কারণ।

‘কাজ নেই, তাই চাচার নামে নালিশ করে আসার’ লোক আমাদের সমাজে কম নেই। অসম্ভব মামলাজটের এটা অন্যতম কারণ। বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি, জটিলতা, তদন্তকারী ও আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটাও ঠিক যে, আগের চেয়ে দেশে অপরাধপ্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। সেকারণে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে বা বাড়ছে। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণেও মামলা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, গ্রাম আদালতকে আরো সক্রিয় ও জোরদার করা হলে বহুসংখ্যক মামলার ফয়সালা করা এই আদালতের পক্ষে সম্ভব হবে। আদালতের পর আদালতে যাওয়ার দরকার হবে না। মামলার ব্যয় নির্বাহ কঠিন ব্যাপার। জমিজিরাত বিক্রি করে পর্যন্ত অনেককে মামলার খরচ যোগাতে হয়। অনেকেই মামলার ফেরে পড়ে সর্বহারা বা দিনভিখারী হয়ে যায়। অথচ গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত মামলায় খরচপাতি নেই বললেই চলে। নিচে দুই-চার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গ্রাম আদালতে অধিক সংখ্যাক মামলার নিষ্পত্তি হলে দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতসহ উচ্চ আদালতে মামলার সংখ্যা কম হবে। আর এই কম সংখ্যক মামলার বিচার দ্রুতায়িত হবে। একইভাবে পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাজের চাপ কমবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার গ্রাম আদালতের প্রতি বিশেষ নজর দেবে বলে আমরা আশা করি। গ্রাম আদালতকে আরো ইফেক্টিভ কীভাবে করা যায় সেটা ভেবে দেখতে হবে। আদালতের কার্যক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিশেষ করে আলেমদের সম্পৃক্ত করা গেলে আদালত অধিকতর আগ্রহযোগ্য হবে এবং অধিকতর সুফল পাওয়া যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন