পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ৩১ আগস্ট আসামে নাগরিকত্ব পঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের পর সেখানের প্রায় ১৯ লাখ নাগরিক অনেকটা দেশহীন হয়ে পড়েছে। এসব নাগরিকের বেশিরভাগ বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে বলে সেখানকার কর্তৃপক্ষ বলেছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের নাগরিকত্ব হারানো এসব মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশ্বস্থ করে বলেছিলেন, ভারতের এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তার এই আশ্বাসে কোনো কাজ হচ্ছে না। গত বুধবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন, সারা ভারতেই এনআরসি কার্যক্রম চলবে। এই ঘোষণার পর থেকেই ভারতজুড়ে নাগরিক সনদবিহীনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকে এখন বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এনআরসি থেকে বাদ পড়া এবং যাদের নাগরিকত্বের সনদ নেই, তাদের অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। অনেকে অনুপ্রবেশের জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে। তারা যশোরের বেনাপোল, ঝিনাইদহের মহেশপুর দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৩০০ জনকে বিজিবি গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। পুলিশ মামলা দিয়ে তাদের কোর্টে চালান দিয়েছে। কোর্ট তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই মুসলমান। তাদের অধিকাংশ ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুর থেকে এসেছে। অনুপ্রবেশকারীদের অনেকের দাবী তারা বাংলাদেশের নাগরিক, তবে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বৈধ কোনো কাগজপত্র, ট্রাভেল ডকুমেন্ট কিংবা পাসপোর্ট দেখাতে পারেনি। এমনকি অনেকে বাংলাদেশের কোন এলাকায় বসবাস করতেন তাও বলতে পারেননি। এতেই অনুমান করা যায় তারা কোথাকার মানুষ। ভারত থেকে যদি এভাবে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে, তাহলে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ভারত থেকে দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ সঙ্গত কারণেই উদ্বেগজনক। মিয়ানমার যেভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি বলে নিপীড়ন ও নির্যাতন করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে, ভারতও অনেকটা এনআরসি’র নামে সেখানের লোকজনকে চাপে ফেলে উচ্ছেদ করছে। এসব লোকজন ভয়ে ভারতে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফেলে বাংলাদেশের দিকে আসছে বলে অনুপ্রবেশকারীদের অনেকে জানিয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস সত্তে¡ও এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। এ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, মুখে বললেও বাস্তবে নরেন্দ্র মোদির কথার প্রতিফলন হচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের এনআরসির তালিকায় থাকাদের সিংহভাগই মুসলমান। এখন তাদের তাড়িয়ে দিলে তাদের গন্তব্যস্থল একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশ নেই। মুখে না বললেও ভারতও এটা ভালো করেই জানে। ফলে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে মিয়ানমার ও ভারতের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকল না। অথচ বাংলাদেশ সরকার ভারতকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে। বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরূপ বিগত এক দশকে ভারত যা চেয়েছে, যেভাবে চেয়েছে, তার সবকিছুই বিনাবাক্যে দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ভারত থেকে আমাদের ন্যায্য প্রাপ্তি শূন্য। আমাদের সরকার তা আদায় করতেও সমর্থ্য হচ্ছে না। এর মধ্যেই এনআরসির নামে ভারত থেকে লোকজন বিতাড়ন করে তার ভার প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারত থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের প্রাথমিক এ ঢল থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে যেসব অনুপ্রবেশকারী আসছে তা প্রাথমিক পর্যায়ের। যতই দিন যাবে ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে মানুষের ঢল নামবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই যে শত শত অনুপ্রবেশকারী কারাগারে রয়েছে, তারা যখন জামিন নিয়ে বের হবে, তখন এদের বাসস্থান কোথায় হবে, তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এদের তখন না কারাগারে রাখা যাবে, না অন্য কোথাও রাখা যাবে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মতো আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসা মানুষের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তের গ্রামগুলোতে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্তে অচেনা লোকজন দেখলে বিজিবিকে জানাতে বলা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এ উদ্যোগ সাময়িক এবং পর্যায়ক্রমে যখন অনুপ্রবেশকারীদের ঢল বৃদ্ধি পাবে তখন তা ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। আশংকিত এ পরিস্থিতির অবসান করতে হলে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ের উদ্যোগ প্রয়োজন এবং এ উদ্যোগ এখনই নেয়া জরুরি। আমরা মনে করি, পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আগেই ভারতের লোকজনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে অনতিবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে সীমান্ত নিñিদ্র করতে হবে। একজন ভারতীয়ও যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।