Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ে নিয়ে প্রতারণা রোধে যুগোপযোগী আইন চাই

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ডি এফ মোল্লা তাঁর ‘মুসলিম আইনের মূলনীতি’ বইয়ে বিবাহের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘বিবাহ বা নিকাহ এমন একটি চুক্তি যার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো বৈধভাবে সন্তান লাভ ও প্রতিপালন।’ বিচারপতি মাহমুদ তাঁর ‘আঃ কাদির ও সালিসী মোকদ্দমার রায়ে বলেছেন, ‘মুসলিম বিবাহ কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, একটি বিশুদ্ধ দেওয়ানী চুক্তি, যার উদ্দেশ্য পারিবারিক জীবন যাপন ও বৈধ সন্তান দান।’ এই দুটি সংজ্ঞা থেকে আমরা অনায়াসে বলতে পারি যে, সম্ভোগ ও সন্তান সমূহের বৈধ করণার্থে যে চুক্তি সম্পাদিত হয় তাকে বিবাহ বলে।
দ-বিধির ৪৯৩ ধারা থেকে ৪৯৬ ধারা পর্যন্ত বিয়ে-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির বিধান আছে, যার অধিকাংশ অপরাধই জামিন অযোগ্য। ধারা ৪৯৩ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-ে দ-িত হবেন। ৪৯৪ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবেন এবং অর্থদ-েও দ-িত হবেন। তবে যে সাবেক স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, বিয়ের সময় পর্যন্ত সে স্বামী বা স্ত্রী যদি সাত বছর পর্যন্ত নিখোঁজ থাকেন এবং সেই ব্যক্তি বেঁচে আছেন বলে কোনো সংবাদ না পান, তাহলে এ ধারার আওতায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধী বলে গণ্য হবেন না।
৪৯৫ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা আগের বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবেন এবং অর্থদ-েও দ-িত হবেন। ৪৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনসম্মত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে সম্পন্ন করেন, তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-ে দ-িত হবেন।
৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের শাস্তির উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এমন কোনো নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি ব্যতীত যৌনসঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌনসঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের দায়ে দায়ী হবে, যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-সহ উভয় দ-। এ ক্ষেত্রে নির্যাতিতাকে অন্য লোকের স্ত্রী হতে হবে। তবে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রীলোকের কোনো শাস্তির বিধান আইনে নেই। ৪৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বিবাহিত নারীকে অন্যের স্ত্রী জানা সত্ত্বেও ফুসলিয়ে বা প্ররোচণার মাধ্যমে যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশ্যে কোথাও নিয়ে যাওয়া এবং তাকে অপরাধজনক উদ্দেশ্যে আটক রাখা অপরাধ। এ ধারা অনুযায়ী অপরাধী ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদ-সহ উভয় ধরনের শাস্তি পাবে।
কোনো মুসলমান ব্যক্তি প্রথম স্ত্রী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া এবং প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে ওই ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ- হতে পারে।
কেউ যদি স্বামী বা স্ত্রীর পরিচয়ে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে অথচ আদৌ কোনো বিয়ে সম্পন্ন হয়নি, তাহলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করার সুযোগ আছে এবং এ মামলা থানায় করতে হবে। এ ছাড়া ভুয়া কাবিননামা তৈরি করলে জালিয়াতির অভিযোগও আনা যাবে। বিয়ে যেভাবেই সম্পন্ন হোক না কেন কাবিননামা কিংবা বিয়ের সব দলিল নিজের কাছে রাখা উচিত। কাবিননামার ওপর কাজির সিল স্বাক্ষর আছে কি-না যাচাই করে নিতে হবে এবং কোনো কাজির মাধ্যমে বিয়েটি সম্পন্ন হলো তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই করে নেওয়া ভালো। মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটা স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই মনে রাখতে হবে।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন