Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাতে লবনে বাজার গরম সকালে উদাও : প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে ভেস্তে গেছে সিলেটে লবন কারসাজি

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম

হুজুগে মাত হয়ে যায় যেন জনগন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির ফাঁকে লবনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সোমবার রাতে হুলস্থ’ুল ঘটে যায় সিলেট জুড়ে। তবে রাত পোহালে মঙ্গলবার গ্রাম-পাড়া-মহল্লার, উপজেলা সদরও ও নগরীর বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পূর্বেকার স্বাভাবিক মূল্যেতে নেমে পড়েছে লবমের দাম। তবে রাতের মূল্যবৃদ্ধির গুজব নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। এদিকে সোমবার রাতে 

অসাধু বাজার সিন্ডিকেট কৌশলে গুজব ছড়িয়ে লবণের দাম আকাশে তোলে। মুর্হুতেই লবন গুজবে দিশেহারা হয়ে উঠেন সাধারন মানুষ। মুখে মুখে রটে যায় লবন গুজব। সিলেট সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় ইতিবাচক নেতিবাচক মন্তব্য। নগরী সহ উপজেলা সর্বত্র লবন সংগ্রহে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন একশ্রেনীর মানুষ। কপাল দু:চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয় সর্বমহলে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন দ্রুত নেমে পড়ে মাঠে। নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য তথা কারসাজি নিয়ন্ত্রনে মনিটরিং সেল গঠন করে সিলেট নগর পুলিশ। লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে এমন গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিনের কর্ম-কথায় সিলেটে দায়িত্বপালনের শুরু থেকেই নিরর্ভরতা ও আস্থাশীল সচেতন মহল সহ সাধারন মানুষও। একই সাথে বিভিন্ন উপজেলায় সক্রিয় ভূমিকায় নামে প্রশাসন। নগরীর বনেদি ব্যবসায়ী পাড়া কালিঘাটে সোমবার রাতেই অভিযানে নামেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযান চালিয়ে দুই ভ্যান ভর্তি লবন আটক করেছেন তারা। পরে বাড়তি দামে লবন বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এক ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সুমন্ত ব্যানার্জি। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় তার সাথে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেসবাহ উদ্দিন। জব্দকৃত লবন সিলেট কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়। লবণ নিয়ে গুজব গোয়াইনঘাটেও, প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসনের অভিযানে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার রাত ১০ হতে ১২ পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত পাল উপজেলার রাধানগর, জাফলং, মামার দোকান, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন মুদি দোকানে অভিযান চালান। অভিযানকালে লবণের অতিরিক্ত মুল্য আদায়ের দায়ে রাধানগরে দুই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা, মোহাম্মাদপুরে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় ইউএনও বিশ্বজিত পাল বলেন, লবণ নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের প্রতিহত করার আহবান জানিয়ে বলেন, কোথাও ব্যবসায়ী কর্তৃক লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি প্রশাসন ও পুলিশের নজরে আনুন। এসম গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ( ভূমি) লুসিকান্ত হাজং, গোয়াইনঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ, ওসি (তদন্ত) হিল্লোল রায়সহ পুলিশ সদস্যরা উপস্হিত ছিলেন।
একাধিক সূত্র জানায়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে সোমবার সন্ধ্যা থেকে লবণের মূল্যবৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়। বাজার সিন্ডিকেটের এমন একচ্ছত্র কারসাজিতে লবন সংকটে আতংক ছড়িয়ে পড়ে জনমনে। বাজারে প্রতি কেজি লবণের খুচরো মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সেই লবন ১০০/ ৮০ টাকায় সংগ্রহ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সাধারন মানুষ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মুর্হুতেই বিগড়ে দেয় লবনের বাজার। লোকজনের হাতে লবনে প্যাকেট সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রয় করতে দেখা যায় রাতে। লবণ কোম্পানির স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র বলছেন, লবণ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, নেই সংকটও। এমনকি লবণের দামও কোনো কোম্পানি বাড়ায়নি।

জানা গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ উপজেলায় কতিপয় ব্যবসায়ী লবণের সংকটের গুজব সৃষ্টির নৈপথ্যে ভূমিকায়। গুজব ছড়িয়ে তারা প্রতি কেজি লবণ অতিরিক্ত দামে বিক্রিতে তুঙ্গে তোলে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। অনেক দোকানদার লবন বিক্রি বন্ধ করে দেয় প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষনে।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের জানান, ‘গুজব সৃষ্টিকারীদের ধরতে আমরা মাঠে নেমেছি। কোনো ব্যবসায়ী গুজবে কান দিয়ে কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, ‘লবণের দামবৃদ্ধির বিষয়টি গুজব। গুজব ছড়িয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা রোধে প্রশাসন যথাযত পদক্ষেপ গ্রহন করবে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে লবণের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আজ (মঙ্গলবার) থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে, গুজব ছড়িয়ে সিলেট নগরীতেও লবণের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে। নগরীর কাজীরবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, শাহপরান প্রভৃতি এলাকায় সোমবার সন্ধ্যা থেকে লবণ বেশি দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। ৩০ থেকে ৩৫ টাকা মূল্যের প্রতি কেজি লবণ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করে তারা। এদিকে, লবণের কোনো মূল্যবৃদ্ধি হয়নি, এটা সম্পূর্ণ গুজব এমনটা জানিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলায় মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। মাইকিংয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা-তুজ-জোহরা, বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মাইকিংয়ে তারা সাধারণ মানুষকে গুজবে বিভ্রান্ত না হতে আহবান জানান। একইসাথে বেশি দামে লবণ ক্রয় না করতেও বলেন তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা বলেন, যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রি: সাবেক প্রশাসক ও সুজন সিলেটের সভাপতি বলেন, বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপে লবন কারসাজি ভেস্তে গেছে। পুলিশের ভূমিকা নি:সন্দেহে প্রশংসীয়। তিনি বলেন, উন্নত দেশেগুলোতে সর্বত্র মেগা শপের আস্থাশীল প্রতিযোগীতা। জনসাধারন মূল্যবৃদ্ধি বা স্থিতিশীলতার আভাস দ্রুত সেই শপগুলো থেকে যাচাই করতে পারে। সেকারনে ছড়িয়ে থাকা খুচরা বা পাইকারী অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান গুজব সৃষ্টি করে মূল্য কারসাজি করার সুযোগ পাই না। মোট কথা বাজার দরের মানদন্ড জনসাধারনের চোখের সামনে নিয়ে আসার জরুরী। জনগনও দ্রুত খোঁজ রেখে বাজার পরিস্থিতি সর্ম্পকে অহেতুক বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে, মেগা শপের মূল্যের প্রতি নজরধারী রাখা সর্বদা সম্ভবও প্রশাসনের। সেই শপগুলোর শাখা-প্রশাখা পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্টা করতে হবে আধুনিক দুনিয়ার ক্রেতা অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রেখে। এতে করে গুজব ও বাজার সিন্ডিকেট হোঁতাদের পর্দাও আড়ালের অশুভ তৎপরতা অনেকাংশে হ্রাস ঘটবে বলে তার বিশ্বাস।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লবন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ