Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মর্মান্তিক গ্যাস বিস্ফোরণ

| প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার একটি ভবনে গ্যাস বিস্ফোরণে দেয়ালচাপায় ও ইটের আঘাতে ৭ জনের মৃত্যু এবং ১৫ জনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা একইসঙ্গে মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়–য়া ভবনের নিচতলায় দিয়াশলাই জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে এবং দেয়াল ধসে যায়। ধসে যাওয়া দেয়াল ও তার ইট প্রবল বেগে আশ-পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে যখন এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন পার্শ্ববর্তী ব্যস্ত সড়কে বহু লোকের সমাগম ছিল। মূলত তারাই হতাহত হয়েছে। কী কারণে এমন ভয়ংকর গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে, এখনো তা জানা যায়নি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা মতে, ভবনটির গ্যাস লাইনের রাইজার লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, তারা পুরো ঘর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেখানে রান্নার চুলা ঠিক আছে। গ্যাস নিঃসরণের কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তাদের এই অভিমত নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদি গ্যাস নিঃসরিত না হয়ে থাকে তবে বিস্ফোরণের কারণ কী? গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক কারণ বলতে পারেননি। জানিয়েছেন, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্তে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের তরফে একাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। যথাযথ তদন্ত হলে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে আশা করা যায়। 

সাধারণভাবে বিস্ফোরণের কারণ নিঃসরিত জমে থাকা গ্যাস বলেই এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে। এই নিঃসরণের উৎস কি চুলা, না গ্যাস লাইন, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। চুলা হলে বলতেই হবে, চুলা ছিল পুরানো ও ত্রুটিপূর্ণ। অনেকেই ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদ উর্ত্তীণ চুলা ব্যবহার করে। প্রায়ই এ ধরনের চুলা থেকে দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানির মতো ক্ষতি হয়। চুলার প্রকৃতি ও অবস্থা সম্পর্কে অসচেতনতা ও অবহেলাই এধরনের দুর্ঘটনা ও ক্ষতির কারণ। কাজেই, চুলা ব্যবহারকারীদের সর্তক ও সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই। গ্যাস লাইনে ত্রুটি বা লিকেজ থাকার কারণে গ্যাস নিঃসরিত হয়ে থাকলে এবং সেটাই বিস্ফোরণের কারণ হলে, স্বীকার করতেই হবে, সেটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জানা গেছে, বাড়িটির গ্যাস লাইন অনেক পুরানো। পুরানো লাইনে গ্যাস লিকেজ অসম্ভব নয়। অতীতে পুরানো গ্যাস লাইন ফেটে গ্যাস নিঃসরণ ও অগ্নিকান্ডের অনেক ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু গ্যাস দাহ্য ও দুর্ঘটনাপ্রবণ, সেক্ষেত্রে গ্যাস লাইনের বয়স ও ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রতি নজর রাখা অপরিহার্য। আর একটি সম্ভাব্য কারণের কথা উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনাবিদ। তিনি বলেছেন, এখানে যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, তা যথাযথ আইন মেনে হয়নি। তার মতে, ভবনের সেফটিক ট্যাংকে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বলা নিষ্প্রয়োজন, গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোকে সম্ভাব্য সকল কারণই খতিয়ে দেখতে হবে। তদন্তে প্রকৃত কারণ নির্ণীত হলে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তাতে কোনো লাভ বা উপকার হবে না। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধান হওয়া সম্ভবপর হবে।
গ্যাস বিস্ফোরণ, অগ্নিকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতি এখন অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ চুলা থেকে এবং ছিদ্র ও ভাঙ্গা গ্যাস লাইন থেকে নিঃসরিত গ্যাসের বিস্ফোরণ বা অগ্নিকান্ডের কথা যেমন এখানে উল্লেখ করা যায়, তেমনি বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ও যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের কথাও উল্লেখ করা যায়। সেফটিক ট্যাংকের গ্যাসে কিংবা ভাঙ্গা জাহাজের ট্যাংকে জমে থাকা গ্যাসে মানুষের মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। আকস্মিক ও বেঘোরে মৃত্যুর এইসব কারণ ও ঘটনা-দুর্ঘটনা অবশ্যই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি সকলের মধ্যে উপযুক্ত সচেতনতা ও সতর্কতা জাগ্রত হয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে চলতি বছর এই নিয়ে গ্যাসজনিত দুর্ঘটনার অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটেছে। পূর্ববর্তী দুটি ঘটনায় একজন নিহত ও দু’জন দগ্ধ হয়েছে। চাঁদগাঁওয়ের একটি বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনাটি ঘটছে। আর হাটহাজারীতে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে এবছর গ্যাসজনিত বহু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। গ্যাস দুর্ঘটনা কমাতে হলে গ্যাসের চুলা ও লাইন ঠিক করতে হবে। ত্রæটিপূর্ণ চুলা ও লাইন বদলাতে হবে। বাসাবাড়ি ও যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের মান নিশ্চিত করতে হবে এবং তার নিয়মিত পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সেফটিক ট্যাংক কিংবা ভাঙ্গা জাহাজে কাজ করানো ও কাজ করার সময় সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পরিশেষে আলোচ্য দুর্ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। এমন মর্মান্তক ক্ষয়ক্ষতি যেন আর না হয়, সেই কামনা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন