পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী ঢাকা এখন ধুলাবালির ভয়াবহ আগ্রসনের অসহায় শিকার। ঘরে-বাইরে ধুলাবালির যন্ত্রণায় নগরীর অধিবাসীরা অতীষ্ট। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া কঠিন ও কষ্টকর। ধুলাবালির ব্যাপকতা ও বায়ুদুষণের দিক দিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লী বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে। কোনোভাবেই দিল্লীকে ধুলাবালির অত্যাচার ও বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ঢাকাও দিল্লীর পথ ধরেছে। ঢাকার অবস্থা আরো অবনত হলে দিল্লীর মতোই শত চেষ্টা করেও তা আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে না। দিল্লীকে গ্যাস চেম্বারের অভিধায় চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকাও আসলে সেরকমই হতে যাচ্ছে। এটা ঢাকাবাসীর জন্য সঙ্গতকারণেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঢাকার অবস্থা কোনো দিক দিয়েই সুবিধার নয়। ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে, ঢাকা বিশ্বের নিকৃষ্ট নগরীর একটি। ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দমেস্ক ও নাইজেরিয়ার লাগোস। এয়ার ভিজ্যুয়ালের মতে, বাংলাদেশ বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে শীর্ষে। ঢাকার অবস্থা শোচনীয়। বছরের প্রায় দু’শ দিন এর বায়ু মারাত্মকে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকে। বিশেষজ্ঞরা বায়ুতে ভাসমান বাস্তুকণার উপস্থিতির নিরিখে ঝুঁকি নিরূপন করে থাকেন। তাদের মতে, বায়ুতে প্রতি ঘনমিটারে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বাস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূণ্য থাকে ৫০ এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বায়ু ভালো। এই মাত্রা ৫০ থেকে ১০০ হলে মধ্যমানের। ২০০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে বিপদসীমার কাছে। ১৫১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর। ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুব অস্বাস্থ্যকর। এবং ৩০১ থেকে ৫০০ হলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার বায়ু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বস্তুকণার পরিমাণ ২৪০ পিপিএম। ঢাকা বায়ু কতটা খারাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ থেকেই তা বুঝা যায়। উল্লেখ্য, বায়ু দূষণ জনিত রোগব্যাধি মারাত্মক স্বাস্থ্য ও ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। শ্বাসকষ্ট, হাপানি, সর্দিকাশি, ব্রংকাইটিস ইত্যাদির কারণ বায়ুদূষণ।
ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ যে ধুলাবালি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যানবাহন ও কলকারখানার ধুয়া, ঢাকার আশপাশের ইটভাটার উদগীরিত ধুয়া, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বায়ুদূষণের উল্লেখযোগ্য প্রধান কারণ। বর্ষায় ধুলাবালির অস্তিত্ব থাকে না। অন্যান্য সময় কমবেশি ধুলাবালি সৃষ্টি হয়। শীত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত হয় সবচেয়ে বেশী। শীতের আগে থেকেই ধুলাবালিতে ধূষর হয়ে ওঠে ঢাকার পরিবেশ রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে ঢাকার ধুলাবালির আধিক্য ও বিস্তার এর মধ্যেই মারাত্মক রূপ নিয়েছে। খবরে এও উল্লেখ করা হয়েছে, ধুলাবালি নিরোধে সেটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে পরিস্থিতির দ্রুতই অবনতি ঘটছে। ঢাকার বায়ু ও পরিবেশে ধুলাবালির আধিক্যের একটি বড় কারণ, বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্প যার কাজ চলছে, অত্যন্ত মন্থর গতিতে। অন্যদিকে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার মূলক কাজ চলেছে। রাজপথ থেকে গলিপথ সবই খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষতবিক্ষত। বর্ষাবাদলে যা এতদিন ছিল কাদাপাঁকের উৎস এখন সেই কাদাপাঁক ধুলাবালির উৎসে পরিণত হয়েছে। নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি ছিটালে ধুলাবালি নিরোধ হতে পারে। দুই সিটি কর্পোরেশন এব্যাপারে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ধুলাবালি নিরোধে পানি ছিটানোর ব্যাপারে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনাও আছে। তা সত্তে¡ও দুই সিটি কর্পোরেশন হাত গুটিয়ে বসে আছে। জানা গেছে, প্রয়োজনীয় পানির সংস্থান না থাকায় পানি ছিটানোর কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ডিএনসিসির অধীন তিনটি গভীর নলকূপ থাকলেও এর পানি চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে দুই সিটি কর্পোরেশনই মূলত ঢাকা ওয়াসার পানির ওপর নির্ভরশীল। আগে দিলেও এবার ওয়াসা পানি দিতে রাজি হচ্ছে না খাবার পানি ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে। এ অবস্থায় পানি ছিটানোর কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
তাহলে কী হবে? ধুলাবালির যাতনা চলতেই থাকবে? এ থেকে নগরীর অধিবাসীদের রেহাই দিতে হলে, বলাই বাহুল্য, পানি ছিটানোর কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে সমস্যাটি আরো প্রকট ও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কাজেই, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। এবারের সমস্যার যে কোনোভাবে সমাধান করতে হবে। দুই সিটি কর্পোরেশনকে তাদের নিজস্ব উৎসের পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াসার সহযোগিতাও চাইতে হবে। ভবিষ্যতে পানির প্রয়োজন কীভাবে পূরণ করা যাবে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। একথা ঠিক, ঢাকার পানি সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু তার পক্ষে খাবার ও নিত্য ব্যবহার্য পানি সরবরাহ করাই সম্ভব হয়ে ওঠে না। পানি ছিটানোর মত বাড়তি পানি যোগান দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পানির একটি বাস্তবসম্মত সংস্থান হতে পারে যদি নগরীর অধিবাসীদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত পানি সংরক্ষণ করে পুনর্ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য দেশে পানির অপচয় না করে ব্যবহৃত পানি রিট্রিটমেন্ট করে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে এই পানির পুরোটাই নষ্ট বা অপচয় হয়ে যায়। দুই সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে অবিলম্বে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে। চট্টগ্রাম ও অন্যান্য মহানগরীতেও অনুরূপ প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। মোটা কথা, ঢাকাসহ সব নগরীর বায়ু, পানি, শব্দ ও বর্জ্য দূষণ দূর করে তাদের উত্তম বসবাসোপযোগী ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।