Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সস্তায় দূষণমুক্ত হবে বাতাস, নতুন পথের সন্ধান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৯, ৫:৪৮ পিএম

প্রতি মুহূর্তে আমাদের শ্বাসের বাতাস ভরে উঠছে বিষে। দূষণের কারণে সেই বিষের পরিমাণ প্রতিনিয়ত এতই বেড়ে চলেছে যে, বাতাসে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তাই বাতাস দূষণমুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা সহজ নয়! কারণ, দূষিত বাতাসের বেশিরভাগ জুড়ে থাকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। যা বায়ুমণ্ডলের অন্যতম একটি উপাদানও।

এবার অল্প খরচে বিাতাস দূষণমুক্ত করার পথ দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর ১৩ নভেম্বেরের সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র। যা আসলে নিকেল ও লোহা দিয়ে বানানো একটি অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট। এই অনুঘটকই বাতাসের বিষ কার্বন ডাই অক্সাইড অণুকে ভেঙে দিতে পারে, তা থেকে তৈরি করতে পারে এমন একটি পদার্থের অণু যা আমাদের রোজকার জীবনে কাজে লাগার জিনিসপত্রের জন্ম দিতে পারে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের একটি অণু তৈরি হয় একটি কার্বন পরমাণু আর দুটি অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে। আর সেই কার্বন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন পর পরমাণুদুটির বন্ধন (বন্ড) এতই শক্তিশালী যে, কার্বন ডাই-অক্সাইড অণুকে ভাঙার কাজটা মোটেই সহজ নয়। বহু দিন ধরেই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা। সেই কঠিন কাজটা এত দিন করা হচ্ছিল একটি তড়িৎ-রাসায়নিক (ইলেক্ট্রো-কেমিক্যাল)পদ্ধতিতে। যেখানে প্ল্যাটিনাম ধাতুর একটি অনুঘটক ব্যবহার করা হচ্ছিল কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু ভেঙে কার্বন মনোক্সাইড অণু বানানোর জন্য। তাতে দুটি কাজ হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু ভেঙে যাওয়ার ফলে বাতাসে বিষের বোঝা কমে। আবার সেই ভাঙার পর তৈরি হওয়া কার্বন মনোক্সাইড অণু অনেকের সঙ্গেই চটপট বিক্রিয়া করে আমাদের রোজকার জীবনে লাগে এমন নানা পদার্থের জন্ম দিতে পারে। তৈরি করতে পারে প্লাস্টিক আর গ্যাসোলিনের মতো বহু প্রয়োজনীয় পদার্থ। যা আমাদের রোজকার জীবনে খুব কাজে লাগে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে প্ল্যাটিনাম অনুঘটক দিয়ে এখন কার্বন ডাই-অক্সাইড অণু ভাঙার কাজটা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, সেই প্ল্যাটিনাম খুব দামি। চট করে পাওয়াও যায় না। ফলে, আমাদের জীবনে কাজেও লাগানো যাচ্ছিল না তেমন ভাবে।

নতুন গবেষণার কৃতিত্ব, এ বার সেটা করা যাবে খুব সহজে। আরও দ্রুত। অনেক কম খরচে। শুধু তাই নয়, যে ব্যাটারির মাধ্যমে সেটা করা হবে তার আয়ুও হবে অনেক বেশি। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অনুঘটকটি বানানো হয়েছে নিকেল আর লোহার অক্সাইড কার্বোনেট একটি যৌগ দিয়ে। যার মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। তার মধ্যে দিয়ে দূষিত বাতাস গেলে সেখান থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে টেনে নিয়ে তাকে ভেঙে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসে বদলে দেবে। এই কাজটা করতে অবশ্য গবেষকদের প্রচুর বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে। তবে সুবিধেটা এই যে নিকেল আর লোহা, দুটি পদার্থই খুব সহজলভ্য। দামেও প্লাটিনামের তুলনায় খুবই সস্তা।

গবেষকরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিকিকরণের চেষ্টা হচ্ছে। মূলত শিল্প কারখানা থেকেই বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের মতো বিষ এসে মেশে, তাই প্রযুক্তিকে প্রাথমিক ভাবে মূলত শিল্প সমৃদ্ধ এলাকাগুলিতেই ব্যবহার করা হবে। সেখাকার বাতাসে মিশে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইডের বিষের বোঝা কমাতে ওই গ্যাসকে কার্বন মনোক্সাইডে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হবে। গবেষকদের আশা, আগামী এক-দেড় দশকের মধ্যেই এই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশ

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ