পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজকের লেখাটি বিষয়বস্তু হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পৃথিবীর বহু দেশ নিয়ে। কিন্তু আমরা এখানে মূলত বাংলাদেশের সাথে ভারত, চীন, আমেরিকা ও মিয়ানমারের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবো। তবে এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মানচিত্রের সাথে নিবিড় সম্পর্ক না থাকলে, লেখাটি পড়ে সম্মানিত পাঠকরা মজা না-ও পেতে পারেন। তবে আমি বিনয়ের সাথে নিবেদন করে রাখছি যে, লেখাটি ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের জন্য নয়, তা ওই সব পাঠক ভাইবোনের জন্য যারা দেশ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন এবং খুঁটিনাটি জটিল বিষয় বোঝার জন্য সময় পান না। বাংলাদেশ ও ভারত যে পরস্পরের প্রতিবেশী, এ কথাটিকে অতি সুস্পষ্ট। আজকের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের আগে ছিল পাকিস্তানের অংশ তথা পূর্ব পাকিস্তান নামক প্রদেশ। পাকিস্তান নামক দেশটির দু’টি প্রদেশ ছিল এবং অপর প্রদেশটির নাম ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। উভয় প্রদেশের মাঝখানে দূরত্ব ছিল বারো শত থেকে পনেরো শত মাইল। মাঝখানে ছিল ভারত নামক একটি দেশের বিশাল ভূখন্ড। তখন পূর্ব পাকিস্তান নামের প্রদেশটির আলাদা পররাষ্ট্রনীতি ছিল না, থাকার কথা নয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি উভয় প্রদেশে অনুসৃত হতো।
১৯৪৭ সাল থেকে নিয়ে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারত নামক উভয় রাষ্ট্র কোনো দিনই পরস্পরের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয়নি; উভয় দেশ বৈরিতায় নিমজ্জিত ছিল। উভয় দেশ ১৯৪৭-৪৮ সালে একবার এবং ১৯৬৫ সালে আরেকবার পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ করার বিষয় হলো, ওই দু’টি যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কোনো জায়গায় পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো যুদ্ধ হয়নি। অর্থাৎ যুদ্ধ যদিও দু’টি দেশের মধ্যে হয়েছিল, কিন্তু সশরীরে বা সরেজমিনে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তের এপার-ওপার। ১৯৪৭-৪৮ সালের যুদ্ধের সময় আমার জন্ম হয়নি। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সময় আমি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। যুদ্ধের কারণে আমাদের কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ কলেজটি ছিল আবাসিক এবং চট্টগ্রাম মহানগরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১০ মাইল উত্তরে, বঙ্গোপসাগরের পানি থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে, নিচু পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। বর্তমানে যেমন, সেই ১৯৬৫ সালেও চট্টগ্রাম ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। অতএব, পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য, ভারত চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর আকাশ পথের আক্রমণ চালানোটা স্বাভাবিক ছিল। যদি আকাশ পথে আক্রমণ চালাত, তাহলে বড় বড় স্থাপনাগুলো অবশ্যই আক্রমণের শিকার হতে পারে, তাই কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিশেষত ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন জনগোষ্ঠি, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা ও মূল্যায়ন করার সুযোগ পায়। সেই চিন্তা ও মূল্যায়নের উপসংহার ছিল এই যে, পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত তথা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার প্রতি চরম অবহেলা করেছে তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ভারতীয় সম্ভাব্য আক্রমণের দুশ্চিন্তায় সন্ত্রস্ত ছিল। কিন্তু ভারত তৎকালীন (১৯৬৫) পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক তৎপরতা না চালানোর ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন জনগোষ্ঠি এবং সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
ভারত কেন পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু করেনি, তার পেছনে নিশ্চয়ই ভারতীয় সমরবিদ এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের মনের ভেতরে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। একটা যুক্তি হলো, ভারতীয় সামরিক শক্তিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা। এক ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেক ভাগ পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এশিয়ার মানচিত্রটি যাদের কাছে সুপরিচিত, তারা ভালোমতো জানেন যে, ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের উত্তর সীমান্তটি, চীন বা মহাচীন নামক বিশাল দেশের দক্ষিণ সীমান্তের বিশাল অংশের সাথে লাগোয়া এবং ১৯৬২ সালে এ অঞ্চলেই চীন ও ভারতের মধ্যে প্রকাশ্য ও সশস্ত্র যুদ্ধ হয়েছিল, যেই যুদ্ধে ভারত পরাজিত হয়েছিল।
১৯৬২ সালের তিন বছর পর ১৯৬৫ সালে এসে, ভারত কোনোমতেই, পাকিস্তানের সাথে চলমান যুদ্ধের একই সময়টাতে চীনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায়নি। না চাওয়াটাই স্বাভাবিক। উত্তর-পূর্ব ভারতের চীন সীমান্তে, চীনের বিরুদ্ধে, ভারত যুদ্ধে লিপ্ত হতে না চাইলেও, চীন তো একই অঞ্চলে বা অন্যত্র, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতেই পারত যেকোনো বাহানা সৃষ্টি করে। আমরা ১৯৬৫ সালের কথা বলছি। ওই সময়টিতে বর্তমানের মতোই, চীন ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যদি পাকিস্তানের একটি অংশ (অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান) বিপদে পড়ে, তাহলে সেই বিপদের দিনে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীন, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর থেকে ভারতীয় আগ্রাসনের চাপ কমানোর জন্য, চীন-ভারত সীমান্তে একটা ঝামেলা লাগাতেই পারত। এটাকে এভয়েড করার জন্য, ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেনি।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোর মহানগরীতে উপস্থাপিত পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের বঙ্গপ্রদেশ (অর্থাৎ বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কংগ্রেসের কিছু সংখ্যক জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদের কূটিলতায় সেই পাকিস্তান প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৪৬ সালে নতুন প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়েছিল। এখানে বিস্তারিত আলোচনার জায়গা নেই। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, ভারত নামক দেশটি চাচ্ছিল, পাকিস্তান যেন ভেঙে যায়। শুধু চাওয়া নয়, তার জন্য কিছু ‘দাওয়া’ বা ‘দাওয়াই’ অবশ্যই প্রয়োগ করা হচ্ছিল। তার থেকেও বড় কথা, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নেতাগণ বা শাসকগোষ্ঠি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি তথা বাঙালি জনগণের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক, বঞ্চনামূলক, প্রতারণামূলক আচরণ করেই যাচ্ছিলেন। যার ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের মনে ধীরে ধীরে তিলে তিলে পাকিস্তানের প্রতি বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হতেই থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত সব প্রচেষ্টা বিফল হওয়ার কারণে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই উপসংহারে আসেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশই মাত্র এর সমাধান। এইরূপ প্রেক্ষাপটেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের সূচনালগ্নে এসে দাঁড়িয়েছিল। যদি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আন্তরিক ও সৎ হতো, তাহলে পরিস্থিতি কী রকম হতো সেটা ভিন্ন আলোচনার বিষয়। ভারত সরকারের কাজ ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা ও প্রমোট করা, ভারত সরকার তাই করেছে, কিন্তু পাকিস্তান সরকারের কাজ পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করা, কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা করেনি, এটাই হলো মোদ্দা কথা। অতএব, যখন বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করল, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ও বঙ্গবন্ধুর নামে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণায়, তখন ভারত দেখল তার ২৩ বছরের অপেক্ষার স্বর্ণদ্বার খুলে গিয়েছে!
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত আকুণ্ঠ সার্বিক ও সর্ব আঙ্গিকের সমর্থন দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের তথা বাংলাদেশকে। যার কারণে, ১৯৭১-এর পরবর্তী দীর্ঘদিন, ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধ সুস্পষ্ট ছিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের দৈর্ঘ্য ২৬৬ দিন বা ৯ মাস। সাত কোটি বাঙালি, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিজয়ী হতো কিন্তু, যদি ভারত আমাদের পাশে না দাঁড়াত, তাহলে ঠিক ৯ মাসে আমাদের যুদ্ধ শেষ হতো কি না বা আমরা কখন বিজয়ী হতাম, সে সম্বন্ধে এখানে আলোচনা করছি না। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস বা বাঙালি জনগণের সাহস বা মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের সাহস ও দক্ষতা ইত্যাদির ওপর মন্তব্য করছি না, আমি শুধু মন্তব্য করছি, সময় ও যুদ্ধ সামগ্রীর প্রসঙ্গে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস হলো ১৬ ডিসেম্বর। পুরো ৯ মাস বিভিন্ন প্রকারের সহযোগিতা দিলেও, ৭১-এর নভেম্বরের ২১ তারিখ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে জড়াতে শুরু করে এবং ডিসেম্বরের ৩ তারিখের পরপরই, ভারতীয় সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে সামরিক অভিযান শুরু করে। ভারতীয় সামরিক অভিযানের অন্যতম অংশীদার ছিল তৎকালীন মুক্তিবাহিনী তথা মুক্তিযোদ্ধারা। আমি পাঠক স¤প্রদায়ের কাছে সূ²ভাবে উপস্থাপন করছি যে, মুক্তিযুদ্ধের সর্বশেষ ১৩ দিন ছিল দুই আঙ্গিকের যুদ্ধ। একটি আঙ্গিক হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় এবং আরেকটি আঙ্গিক হলো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ওই সর্বশেষ ১৩ দিন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে শুধু পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মাটিতে নয়, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে ও মাটিতেও যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
২০১৯ সালে আমরা কল্পনা করতে পারি যে, যদি কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি যুদ্ধ লাগে, তাহলে বাংলাদেশের ভূখন্ডটি বন্ধুপ্রতীম ভূখন্ড থাকবে। বাংলাদেশের সীমান্তে যুদ্ধ করার জন্য ভারতকে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না। ১৯৬২ সালে যখন ভারত ও চীনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, তখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল পাকিস্তানের অংশ এবং পাকিস্তান ছিল চীনের বন্ধু, ভারতের শত্রু। অতএব, সেই ১৯৬২ সালে ভারত কোনো মতেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভূখন্ডটি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠেনি। ২০১৯ সালে যদি চীনের সাথে ভারতের কোনো সীমান্ত সংঘর্ষ হয়, তাহলে বর্তমান সরকারের আমলে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে যে, ভারতীয় সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করবে। অর্থাৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা বিহার থেকে ভারতের মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল এই সব প্রদেশে সামরিক বাহিনী ও গাড়ি-ঘোড়া-মালামাল যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহৃত হবে। আমি আশা করি, অতি সা¤প্রতিক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটিকে বোঝার ক্ষেত্রে এই বর্ণনা কিছুটা সহায়ক হবে।
শুধু যুদ্ধ নয়, দুইটি দেশের সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্য একটি বিরাট বিষয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ সীমিত এবং ভারসাম্যটি প্রচন্ডভাবে ভারতের অনুকূলে। আরো একটি মজার কথা আছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ভারতের যেই অংশ, সেখানে ভারতের সাতটি প্রদেশ আছে। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম নামক চারটি প্রদেশের সীমান্ত বাংলাদেশের সীমান্তের লাগোয়া; আর তিনটি একটু দূরে। মনে করুন, আমরা ১৯৪৭-এর আগের ভূখন্ডে আছি। তখন বাংলাদেশ ও ভারত ছিল না। তখন পুরো ভূখন্ডের নাম ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া। সেই ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশ থেকে, শুধু ভৌগোলিক দূরত্বে বা সময়ের দূরত্বে নিকটতম সমুদ্রবন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম। কিন্তু ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বাংলাদেশ নামক একটি ভিন্ন দেশের বন্দর। তাই ২০১৯-এর উত্তর-পূর্ব ভারতকে সমুদ্র বন্দরের সুবিধা নিতে হলে, প্রায় দেড় হাজার মাইল ঘুরে কলকাতা যেতে হয়। এমন কোনো পদ্ধতি যদি থাকত যে কলকাতা না গিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়, তাহলে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য কতই না উপকার হতো। ওইরূপ পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে এবং ওই পদ্ধতির নাম বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব এবং ওই পদ্ধতির উপনাম ট্রানজিট। ট্রানজিট মানে বাংলাদেশের ভূখন্ডের ওপর দিয়ে, ভারতের দুইটি অংশের মধ্যে, নৌপথে বা সড়কপথে, মানুষ ও মালামালের যাতায়াত। ট্রানজিট মানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বা পায়রা বা মংলাবন্দরের মাধ্যমে ভারতীয় মালামাল রফতানির জন্য যাতায়াত।
আরো একটি কথা আছে। বাংলাদেশের কথা ভুলে যাই। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে বা উত্তর প্রদেশ থেকে বা এমনকি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে কোনো মানুষ বা কোনো মালামাল যদি উত্তর-পূর্ব ভারতে যেতে হয়, তাহলে তাকে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। মালামাল যদি দীর্ঘ পথের ওপর দিয়ে যাত্রা করে, তাহলে তার খরচ বেড়ে যায়। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বড় কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। কারণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়তে গেলেই খরচ পড়ে বেশি। এখন থেকে দেড়-দুই বছর আগে আগরতলায় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভীষণ ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নেয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। কলকাতা থেকে দেড় হাজার মাইল ঘুরে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় ওই মালামাল নেয়ার কোনো বাস্তবসম্মত পন্থা ছিল না। তাই বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ছত্রছায়ায়, বাংলাদেশ সরকার ট্রানজিট অনুমোদন করে। ৬০ কিংবা ৬২ চাকার গাড়ি এবং প্রচন্ড ভারী মালামাল যায়। আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা যাওয়ার পথে তিতাস নদী পড়ে। ওই তিতাস নদীর একটি স্থানে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করে, তার ওপরে সড়ক নির্মাণ করে ওই যানবাহনগুলো পার করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক বড় একটি উদারতা। বাংলাদেশ যদি এই উদারতা না দেখাত, তাহলে আগরতলায় বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র কোনো দিন হতো না। বাংলাদেশে উৎপাদিত কোনো কাঁচামাল বা শিল্পসামগ্রী বা খাদ্যসামগ্রী, যদি উত্তর-পূর্ব ভারতে যায় তথা রফতানি হয়, তাহলে সেটার খরচ অনেক কম তথা ওই মালামালগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজারে সস্তায় পাওয়া যাবে। কিন্তু এটাতে ভারতের উদার সম্মতি নেই। ভারত চায়, মূল ভারতের যেকোনো স্থান থেকে, বাংলাদেশের ভূখন্ডের ওপর দিয়ে মালামাল যেন উত্তর-পূর্ব ভারতের যেকোনো স্থানে যেতে পারে।
উপরের সব অনুচ্ছেদে আমি প্রতিরক্ষা ও বাণিজসংক্রান্ত কিছু বিষয় তুলে ধরেছি। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলো। আমাদেরও সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু ভারতের প্রাপ্য অংশ বেশি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের প্রতি এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য যেই রাজনৈতিক পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে ভারত মনোযোগ দিয়েছে বিগত বহু বছর ধরে কিন্তু মোক্ষম মনোযোগ দিয়েছে গত এগারো বছর। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের মধ্যকার পারস্পরিক পররাষ্ট্রনীতি এগুলোকে কেন্দ্র করেই গঠিত বা লালিত-পালিত।
বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণে ভারত মহাসাগর। বঙ্গোপসাগরের পূর্ব তীরে বাংলাদেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড তথা তিনটি দেশের ভূখন্ড অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম তীরে দুইটি দেশের যথা ভারত ও শ্রীলঙ্কার ভূখন্ড অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের উত্তর তীরে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভূখন্ড অবস্থিত। এই বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে তীরবর্তী দেশগুলোর যেকোনো কিছু পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সাগর পথে যেতে পারে। মিয়ানমার চাইবে বঙ্গোপসাগরে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। বাংলাদেশ চাইবে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। ভারত চাইবে তার প্রাধান্য বিস্তৃত থাকুক। প্রতিযোগিতায় কোন দেশটি জিতে, নাকি কোনো দেশই জিততে না পেরে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে, সেটি নির্ভর করে দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক শক্তির ওপর। মিয়ানমারের সাথে কমন সীমান্তরেখা আছে চীন বা মহাচীন নামক বিরাট দেশটির। বাংলাদেশের সাথে চীনের কমন সীমান্তরেখা নেই। চীন এত বড় একটি দেশ যে, এর পূর্ব-পশ্চিম দৈর্ঘ্য কল্পনা করাই কঠিন। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের কোনো মালামাল যদি সমুদ্র পথে কোথাও যেতে হয়, তাহলে সেই মালামালকে প্রথমে নিতে হবে চীনের পূর্ব অংশে অবস্থিত সমুদ্রের কাছে, অতঃপর সেটি যাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। অনেক দীর্ঘ সময় ও খরচের ব্যাপার। অপর পক্ষে চীন যদি তার বন্ধুপ্রতীম কোনো রাষ্ট্রের ভূখন্ড ব্যবহার করে এই সময় ও খরচ বাঁচাতে পারে, তাহলে চীনের অনেক লাভ। এই লাভ অর্জনের জন্য চীন চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। ভারত যেমন নিজের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থে বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করতে চায়, তেমনই চীনও নিজের বাণিজ্যিক ও সামরিক স্বার্থে বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করতে চাইতেই পারে। কিন্তু চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কমন সীমান্ত নেই। অপর পক্ষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কমন সীমান্ত আছে। আবার মিয়ানমারের সাথে ভারতের যেমন কমন সীমান্ত আছে, তেমনই মিয়ানমার ও চীনের মধ্যেও কমন সীমান্ত আছে। তাহলে চীন যদি বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যবহার করতে চায় বা বঙ্গোপসাগর থেকে কোনো উপকার পেতে চায়, তাহলে চীনকে অবশ্যই মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে হবে। শুধু মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে হবে না, সাপ্লিমেন্টারি বন্ধুত্ব বা সহায়ক বন্ধুত্বও লাগবে বাংলাদেশের সাথে। আরো একটি কথা। চীন ও ভারত কোনো দিনই পরস্পরের আন্তরিক বন্ধু নয় বরং বলাই চলে যে, তারা পরস্পরের প্রতি বৈরী। চীন যেমন বিশাল দেশ, চীন থেকে ছোট হলেও, ভারতও একটি বিশাল দেশ। চীন চাচ্ছে পৃথিবীর বুকে নিজেকে অন্যতম সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে; প্রায় হয়েই গিয়েছে। ভারত চাচ্ছে পৃথিবীর একটি অংশের বুকে অন্যতম নয় বরং প্রধান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। অতএব বাংলাদেশ যেহেতু ভারতের প্রতিবেশী এবং বাংলাদেশ যেহেতু বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ তীরে অবস্থিত, সেহেতু বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার না হলেও, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতি ও পররাষ্ট্রনীতির প্রতি চীনের আগ্রহ থাকবেই থাকবে। ভূখন্ড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তাটিও স্বীকৃত। অতএব বাংলাদেশ, চীন ও ভারতের উভয়ের আগ্রহের মধ্যখানে আছে। এটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে। এই কারণেই, চীন মোটামুটি উদারভাবে, বাংলাদেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। সাবমেরিন দিয়েছে, সাবমেরিন বেইজ বানিয়ে দিবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, সচেতন নাগরিকরা বলছেন যে, এই সাবমেরিন সংক্রান্ত কারণেই, ভারত বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে সারভেইলেন্স-রাডার বসাবার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার থেকে চুক্তি আদায় করে নিয়েছে।
চীন বা গণচীন নামক বিশাল রাষ্ট্রটি যদি বাংলাদেশ থেকে বেশি সুবিধা আদায় করতে না পারে, অথবা বাংলাদেশ থেকেও বেশি সুবিধা যেই দেশটি থেকে আদায় করতে পারবে, সেই দেশের সাথেই তার বন্ধুত্বকে গভীর ও নিবিড় করবে। এরকম একটি দেশের নাম মিয়ানমার। মিয়ানমারের সর্ব পশ্চিমের প্রদেশটির নাম রাখাইন প্রদেশ। এই রাখাইন প্রদেশের আগের নাম ছিল আরাকান। এই রাখাইন প্রদেশে দুই প্রকারের জনগোষ্ঠী ছিল এবং আছে। একপ্রকারের জনগোষ্ঠী হলো রোহিঙ্গা যারা দেখতে বাঙালিদের মতো এবং যাদের ভাষা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের চট্টগ্রামের ভাষার মতো। সাবেক আরাকান ও বর্তমানের রাখাইন প্রদেশের পশ্চিম সীমান্তের একটি অংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের বান্দরবান জেলার সাথে মিলে যায়। এই অঞ্চলটি পার্বত্য ও গভীর জঙ্গলে ভরা। অতএব পার্বত্য চট্টগ্রামের তথা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের নিরাপত্তার জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশের দিকে নজর রাখা উচিত; যদিও যথেষ্ট নজর রাখা সম্ভব হয়নি। রাখাইন প্রদেশের সাথেই হলো বঙ্গোপসাগর। অতএব চীন যদি এই বঙ্গোপসাগরের পানি, সামরিক বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে অবশ্যই একটি বন্ধুপ্রতীম রাখাইন প্রদেশ লাগবে। বন্ধুপ্রতীম রাখাইন মানে, বন্ধুপ্রতীম মানুষ ও বন্ধুপ্রতীম ভূমি। এবং রাখাইন প্রদেশ যেহেতু মিয়ানমারের ভূখন্ড, অতএব এই বন্ধুত্ব প্রদানের দায়িত্ব মিয়ানমারের ঘাড়েই পড়ে। রাখাইন প্রদেশের উত্তর অংশ থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিতাড়ন করে দেয়ার প্রেক্ষাপট কিছুটা হলেও এই প্রয়োজনীয়তার সাথে জড়িত।
পৃথিবীর পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমেরিকা। আমেরিকা ও চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে আমেরিকা ও চীন উভয়েই যুগপৎ পাকিস্তানের ও বাংলাদেশের বন্ধু। বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতায় আমেরিকা একটু পিছিয়ে আছে; ভারত ও চীন একটু এগিয়ে আছে। আমেরিকা ও চীন আন্তর্জাতিক প্রাধান্য বিস্তারের ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতিযোগী ও পরস্পরের প্রতি বৈরী। আমেরিকা ও ভারত কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতিযোগী এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি সম্পূরক। প্রতিযোগী হলেও সেটা লোপ্রোফাইল। আর সম্পূরকতার প্রসঙ্গে প্রধান ক্ষেত্র হলো চীনকে কেন্দ্র করে। চীন ও ভারত যেহেতু বৈরী এবং চীন ও আমেরিকা যেহেতু বৈরী, তাহলে আমেরিকা ও ভারত বন্ধু হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা কী? বাংলাদেশের ভূমিকা হলো, আমেরিকার জন্য একটি অবস্থান সৃষ্টি করা, কারণ বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী। বাংলাদেশের ভূমিকার আরো কারণ আছে। হাজার হাজার বললে ভুল, লাখ লাখ বাঙালি আমেরিকায় থাকে, লেখাপড়া করে, ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ওই সব বাঙালি আমেরিকার ভূখন্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি নিজেও এক বছর মেয়াদি সামরিক উচ্চশিক্ষা নিয়েছি আমেরিকায়। জাতিসঙ্ঘের সদর দফতর আমেরিকাতে অবস্থিত। জাতিসঙ্ঘের অধীনে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ ব্যাপক অবদান রাখে এবং জাতিসঙ্ঘের এইরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য পরিমাণে অনেক বড়। বাংলাদেশ ও আমেরিকার সম্পর্কের সাথে কিছুটা সম্পৃক্ত হলো বাংলাদেশ ও ইউরোপের সম্পর্ক কারণ, ইউরোপের প্রধান দেশগুলো যথা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ও জার্মানি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ। মুসলিম বিশ্বের ভৌগোলিক ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্রভূমি হলো সৌদি আরব এবং সৌদি আরব হলো আমেরিকার ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা যেমন আছে তেমনই, বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের ভূমিকা আছে। অতএব আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সালের এপ্রিল-মে মাসের কথা। ২৯ এপ্রিল ১৯৯১ তারিখে, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে মারাত্মক রকমের একটি ঘূর্ণিঝড় আক্রমণ করেছিল। সেই সময় বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মহল থেকে সাহায্য আহ্বান করেছিল। ৯১-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমেরিকা, কুয়েত মুক্ত করার জন্য ও সাদ্দাম পতনের জন্য, ইরাক আক্রমণ করেছিল। সেই সময় পারস্য উপসাগরে ও আরব সাগরে আমেরিকার নৌবাহিনীর ও মেরিন কোরের জনশক্তি ও জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর মেরিন কোরের জনশক্তি ও জাহাজ, আরব সাগর থেকে তাদের স্থায়ী ঠিকানা জাপান উপকূলে ফেরত যাচ্ছিল। তারা যখন শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি ছিল, তখন বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় হয়। বাংলাদেশের আহ্বানে ওই মেরিন কোরের একটা অংশকে বাংলাদেশের ত্রাণ তৎপরতায় মোতায়েন করা হয়েছিল। এটা বন্ধুত্বের লক্ষণ ছিল। আবার এটাও উদ্ভাসিত হয়েছিল যে, বঙ্গোপসাগর যদি সামরিক দৃষ্টিতে নিরাপদ না হয়, তাহলে আমেরিকার চলাচলে অসুবিধা হবে। অতএব বঙ্গোপসাগরকে বন্ধুপ্রতীম রাখতে হলে আমেরিকা ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব প্রয়োজন। উপরের অনেক অনুচ্ছেদে আমি বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-চীন প্রসঙ্গে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরেছি। সর্বশেষে তুলে ধরেছি আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব। কিন্তু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির সামনে চ্যালেঞ্জ হলো, তিনটি বিরাট রাষ্ট্রের সাথে বা তিনটি মাঝারি শক্তির সাথে বন্ধুত্বের ভারসাম্য রক্ষা করা।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।