পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
উন্নয়ন কাজের নামে রাজধানীতে সমন্বয়হীন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এই খোঁড়াখুড়ি নতুন কোনো বিষয় নয়। বছরের পর বছর ধরেই তা চলছে এবং জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। বর্তমানে রাজধানীর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিসহ এমন কোনো সড়ক নেই যা খোঁড়া হয়নি। একদিকে মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে প্রধান সড়কগুলো সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে এই সংকীর্ণ সড়কেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে রাজধানীতে চলাফেরা করা এখন দায় হয়ে পড়েছে। এটি পরিণত হয়েছে দুর্গম এক নগরীতে। শুধু রাজধানী নয়, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তির দুই প্রধান নগরীর এই করুণ দশা অব্যাহতভাবেই চলছে। এর ফলে চলাচল ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। যান চলাচলের শম্ভুকগতির কারণে সময় মতো আমদানি-রপ্তানির গতিও শ্লথ হয়ে পড়ছে। এর প্রভাব সার্বিক অর্থনীতির ওপরও পড়ছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এক যানজটের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। যানজটকে আরও জটিল করে তুলেছে সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি।
উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। যানজট, পানিবদ্ধতা নিরসন ও অন্যান্য সেবামূলক উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতেই হবে। তবে এসব কর্মকান্ডে সিটি করপোরেশনসহ যেসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয়ই নেই। কোন প্রতিষ্ঠান কখন তার উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করবে, এ নিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় থাকে না। দেখা যায়, এক প্রতিষ্ঠান রাস্তা খুঁড়ে কোনো রকমে তা মাটি চাপা দিয়ে ফেলে রাখার কিছুদিনের মধ্যে একই জায়গায় আরেক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। বিশেষ করে, বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের খোঁড়াখুঁড়ির যেন হিড়িক পড়ে। এই লাগামহীন কর্মকান্ড দেখে মনে হয়, রাজধানীর কোনো অভিভাবক নেই। এর কারণটিও অজানা নয়। বর্ষা মৌসুমে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করলে সময় বেশি লাগে, আর সময় বেশি লাগলে এ অজুহাতে বরাদ্দও বাড়িয়ে নেয়া যায়। বলা যায়, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির কর্মকর্তার অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্যই এ কাজটি করা হয়। বর্ষাকালে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করলে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা সকলেরই জানা। বৃষ্টির পানি জমে সড়কগুলো একেকটি খালে পরিণত হয়। পানিবদ্ধতার কারণে পুরো শহর ডুবে থাকে। জমে থাকা এ পানির মধ্য দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে কত যে দুর্ঘটনা ঘটে এবং মানুষ আহত হয়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ভুক্তভোগী নগরবাসীকে তখন ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তাদের এ ক্ষোভ যারা সড়ক কেটে কুটিকুটি করে ফেলে তাদের কোনো বিচলন ঘটায় না। তাদের মনোভাবই থাকে উন্নয়ন চাইলে এ ভোগান্তি সইতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কতকাল? আর উন্নয়নই যদি করা হবে, তা অসময়ে কেন করা হবে? নগরবাসীর চলাচলের সুবিধা-অসুবিধার কথা একটু বিবেচনা করে কি তা সমন্বয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত সময়ে করা যায় না? রাজধানীতে প্রায় ৫৪টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়েই সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। একটির কাজ শেষ হতে না হতেই আরেকটির কাজ শুরু হয়। এভাবে বছর জুড়েই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজেদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় করে নেয়, তাহলে জনভোগান্তি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। যেহেতু সকলেই জানে রাজধানীতে চলাচলের জন্য যে পরিমাণ সড়ক প্রয়োজন, তা নেই এবং এর মধ্যেই উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতে হবে, তাই এক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। মেট্রোরেল নির্মাণের কারণে এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রে এ পরিকল্পনা আরও বেশি প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানই বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এর ফলে জনভোগান্তি কতটা তীব্র হয়ে উঠেছে, তা যারা সড়কে চলাচল করেন, তারা ভালভাবে টের পাচ্ছেন। এখন সব স্কুল-কলেজে ফাইনালসহ গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। রাজধানীর সড়কগুলোর যে দুরবস্থা, তাতে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে পরীক্ষা কেন্দ্রে যথাসময়ে হাজির হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তার মনের মধ্যে পড়ার পাশাপাশি পরীক্ষায়ও পড়ছে। এর দায় কি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিচ্ছে? শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিই নয়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলো-বালি ও কাদায় পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে নগরবাসী বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখেও আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাস কষ্ট থেকে শুরু করে হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা জানি না, নগরীর উন্নয়নের নামে এই উন্নয়ন কর্মকান্ড কবে শেষ হবে এবং জনগণ স্বস্তির সাথে চলাফেরা করতে পারবে।
রাজধানীর উন্নয়ন কর্মকান্ডের সূত্রে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তার মূলে রয়েছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। যতক্ষণ না সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে এ কাজ করছে, ততক্ষণ নগরবাসীকে এই দুর্ভোগ পোহাতেই হবে। এটা যেন তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী যখন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে, তখন তাতে সমন্বয় ও শৃঙ্খলা থাকে। সড়ক উন্নয়ন কাজ যেমন তারা করে, তেমনি ট্রাফিক সিস্টেম ও জগণের যাতায়াতে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে-এমন ব্যবস্থা করে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কাজ করা যায়, তার নজির সামনে থাকার পরও রাজধানীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেন তা গ্রহণ করে না, তা এক রহস্য। আমরা মনে করি, রাজধানীর চলাচলের সীমিত জায়গায় উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতীতের কর্মধারা মোতাবেক কাজ করলে হবে না। তাদের স্বল্প জায়গার মধ্যে দ্রুত উন্নয়ন কর্মকান্ড যেমন চালাতে হবে, তেমনি জনভোগান্তি যাতে কম হয়, তাও খেয়াল করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।