মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দুর্বল অর্থনীতি, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে থাকা দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কায় শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে রেকর্ড সংখ্যক ৩৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা নির্বাচন করছেন না। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রধান দুই প্রার্থী ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)’র সাজিথ প্রেমাদাসা ও বিরোধী শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট (এসএলপিপি)’র গোতাবায়া রাজাপাকসার মধ্যে।
গোতাবায়া হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার ভাই ও সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব। এসএলপিপি’র নেতা মাহিন্দা। গোতাবায়া নির্বাচনে লড়ছেন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তিনি প্রতিরক্ষা সচিব থাকাকালে ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়ী হয় শ্রীলঙ্কা। সে সময় তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এসএলপিপি’র অনুগতদের মধ্যে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার দল এসএলএফপি গোতাবায়াকে সমর্থন দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের মধ্যে জনপ্রিয় না হলেও সংখ্যাগুরু সিনহলা বৌদ্ধদের মধ্যে তার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা বর্তমানে মন্ত্রিসভার সদস্য ও ক্ষমতাসীন ইউএনপি’র প্রার্থী। তার পিতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ১৯৯৩ সালে তামিল বিদ্রোহীদের বোমা হামলায় নিহত হন। এরপর ১৯৯৪ সাল থেকেই রাজনীতিতে যাওয়া আসা করছেন সাজিথ। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিঙ্গে তাকে সমর্থন করলেও দুই জনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়। নির্বাচনে সাজিথের প্রার্থী হওয়ার আগে বিষয়টি দেখা গেছে। তিনি ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ইউএনএফ) জোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তিনিও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাকে মূলত দেশের সংখ্যালঘু তামিল ও মুসলিম ভোটের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার ২১ মিলিয়ন জনসংখ্যার ২০% এই দুই ধর্মীয় গোষ্ঠী। আরেক শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন অনুরা কুমারা দেশানায়েক। তিনি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (জেভিপি) জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই বাম জোট ১৯৯৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করে রাজনীতিতে যোগ দেয়। তিনি কলম্বোর এমপি এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলীয় হুইপ ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালের সাংবিধানিক সংকটের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সুপরিচিত। ওই সংকট প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিঙ্গেকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলো।
এবারের নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে নিরাপত্তা। চলতি বছরের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডের অনুষ্ঠান চলাকালে শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকটি গির্জা ও বিলাসবহুল হোটেলে একযোগে আত্মঘাতি বোমা হামলা হয়। এতে ২৬৯ জন নিহত ও চারশ’র বেশি আহত হয়। এই হামলা ছিলো শ্রীলঙ্কা সরকারের জন্য বিস্ময়ের। এর তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে চরম নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, গোয়েন্দা প্রধানসহ অনেকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ ধরনের হামলা যাতে আর না হয় সে বিষয়টিতে এবার ভোটাররা নজর দেবেন বলে মনে হচ্ছে। ওই হামলার জেরে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দাঙ্গাও হয়েছে। এতে সিনহলা বৌদ্ধরা জড়িত ছিলো। তারা দেশটিকে একটি মেরুকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঋণের ভারে ধুকতে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ইস্টার হামলার ধকল সইতে পারেনি। পর্যটন খাত বিনষ্ট হয়। যে-ই ক্ষমতায় আসুন না কেন তাকে দেশের ৩৪.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিঙ্গেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তার জায়গায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দাকে বসান। তবে দেশের শীর্ষ আদালত বিক্রমাসিঙ্গেকে ফিরিয়ে আনে। নির্বাচনে সাজিথ জয়ী হলে তাকে পার্লামেন্টে বিরোধী দল গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দার নেতৃত্বাধিন এসএলপিপি’র মুখোমুখি হতে হবে। অন্যদিকে গোতাবায়া জয়ী হলে পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন ইউএনপি হবে তার বিরোধী। সাজিথ নির্বাচিত হলে স্থিতিশীলতা আসবে না। কারণ তার সঙ্গে ইউএনপি নেতার বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের হাতেও কম ক্ষমতা নেই।
শ্রীলঙ্কার লোকজন ব্যাপকহারে ভোট দেন বলে রেকর্ড রয়েছে। ২১.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ভোটার ১৫.৯ মিলিয়ন। গত নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ৮১.৫%। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেকর্ড। তবে ভোটের ৫০ শতাংশ কোন প্রার্থী না পেলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে ফেস-অফ ভোট হবে। কেউ ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেলে ১৭ নভেম্বর ফল ঘোষণা করা হতে পারে।
দেশটির সরকার আধা-প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির। সেখানে প্রেসিডেন্টের হাতে ব্যাপক নির্বাহী ক্ষমতা থাকলেও তাকে তারই নিয়োগ করা প্রধানমন্ত্রীর মতামত দিয়ে দেশ চালাতে হয়। মন্ত্রিসভা নিয়োগ দেন প্রধামন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট ও সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে তাকে সরানো যেতে পারে। পার্লামেন্ট এক কক্ষের, আসন রয়েছে ২২৫টি। এর মধ্যে ১৯৬টি সরাসরি নির্বাচিত। বাকি ২৯টি পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক। পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। তাদেরকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই এবং মন্ত্রিসভা শুধু পার্লামেন্টের কাছেই জবাবদিহি করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।