নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
২৯ অক্টোবর ২০১৯। থমথমে বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গণ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অভ্যর্থনা কেন্দ্রে উপস্থিত সাকিব আল হাসান। লিখিত একটি বিবৃতি মৌখিকভাবে পড়ে শোনালেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। তার পরপরই উপস্থিত বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স এর চেয়ারম্যান আকরাম খান। তিনি ঘোষণা করলেন বাংলাদেশের ১১তম টেস্ট অধিনায়কের নাম। তিনি মুমিনুল হক। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট যাকে চেনে বাংলাদেশী ডন ব্র্যাডম্যান হিসেবে।
‘এটা ছিল অপ্রত্যাশিত’ বাংলাদেশের নতুন অধিনায়কের কথার শুরুটাই ছিল এমন। অধিনায়ক হওয়ার কখনো স্বপ্নও দেখেন নি এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, ‘কখনো চিন্তাও করিনি এ (অধিনায়কত্ব) ব্যাপারে। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি একদিন আমি বাংলাদেশের অধিনায়ক হবো। কিন্তু ঘোষণার পর অনুভূতিটা ছিল দারুণ।’
মুমিনুলের প্রতিক্রিয়াটা বোধগম্য। সাকিবের উপর বোমাবর্ষণের তীব্র প্রভাব ছিল খেলোয়াড়দের মাঝে, দেশের ক্রিকেটাঙ্গণেও কঠিনভাবে পড়েছিল এর প্রভাব। সাদা পোষাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহর মতো খেলোয়াড়দের উপেক্ষা করে অধিনায়ক হয়েছেন মুমিনুল। যারা পূর্বে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। মুমিনুলে এতটাই নির্ভার বিসিবি, যে সহ-অধিনায়কের নামও ঘোষণা করা হয়নি।
ক্রিকেটীয় দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে, সঠিক সময়ে এটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। ২০১৩ সালে অভিষেক হওয়া মুমিনুল একজন প্রতিষ্ঠিত টেস্ট ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারে তার আছে ৮টি সেঞ্চুরি। শুধুমাত্র তারচেয়ে এগিয়ে আছেন তামিম ইকবাল (৯টি)। মুমিনুল্ বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান, যিনি ২৫০০ রান অতিক্রম করেছেন চল্লিশের বেশি গড় নিয়ে।
স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের কারণে মানুষের মনে মুমিনুল সম্পর্কে ভালো ধারনা বিদ্যমান। মাত্র ৩৬ টেস্ট খেলেছেন তিনি, কিন্তু তাতে স্পষ্ট-বাংলাদেশ টেস্ট কত কম খেলার সুযোগ পেয়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে চার বছর আগেই ছিটকে গেছেন তিনি, কিন্তু তাতে তার দক্ষতার কোন হেরফের হয়নি। রান করে যাচ্ছেন নিয়ম করেই। ভারতের ইন্দোরে প্রথম টেস্টের পর নিজেদের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টেও আক্রমণাত্বক নেতৃত্ব বজায় রাখতে চান মুমিনুল, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি আক্রমণাত্বক হতে চাই। তাতেই সফলতা আসবে বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি, সময়ের প্রেক্ষাপটে আক্রমণাত্বক মনোভাবের মধ্যে রক্ষণাত্বক প্রকাশ বজায় রাখতে হবে।’
অধিনায়ক হওয়াকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন কক্সবাজারের এই ক্রিকেটার। দায়িত্ব পাওয়াকে ভালো অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছেন তিনি এবং এতে কোন চাপ অনুভব করছেন না, ‘অধিনায়ক হিসেবে অতিরিক্ত চাপের কিছু নেই। এটা একটা সুযোগ, দারুণ অনুভূতি। আমার চিন্তায় বাড়তি কিছুই আনতে চাই না। স্বাভাবিক ধারায থাকতে চাই।’ দলের জন্য কিছু করতে পারাটাই বড় স্বার্থকতা বাংলাদেশর নতুন অধিনায়কের কাছে। তার ভাবনায় শুধু কেন্দীভূত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে, ‘দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি, ভাবনার বিষয় এটিই। দলের জন্য ভালোকিছু করতে চাই।’
ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের পঞ্চপা-রে (মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ) অধিনায়কত্বেই খেলেছেন মুমিনুল। সবার থেকেই সেরাটা নিয়ে তা উজাড় করে দিতে চান মাঠে, ‘বিভিন্ন অধিনায়কের কাছ থেকে শিখেছি অনেককিছু। প্রত্যেকের কাছ থেকেই নিতে চাই ইতিবাচক দিকগুলো। জটিল পরিস্থিতি কে কিভাবে সামাল দিত দেখেছি এবং সেখান থেকে শিখেছি। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেখেছি-কখনো আক্রমণাত্বকভাবে, কখনো রক্ষনাত্বকভাবে। তাদের কাছ থেকে অনেককিছু গ্রহন করেছি।’
মুমিনুল দায়িত্ব পেলেন এমন এক ক্রান্তিলগ্নে, যেখানে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে। কাজটা মোটেই সহজ হবে না তার। মেহেদী হাসান ও তাইজুল ইসলাম। এ দুই স্পিনারই মুমিনুলের আক্রমণের মূল হাতিয়ার। মুস্তাফিজুর রহমান টেস্ট দলে আছেন, তবে বর্তমান ফর্মের নিরিখে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। আবু জায়েদ, আল আমিন হোসেন, ইবাদত হোসেনের মতো বোলার থাকায় মূল একাদশ তৈরি করাও হবে চ্যালেঞ্জিং।
তবে ইতিবাচক ব্যাপার হচ্ছে, দলের দুই স্তম্ভ সাকিব-তামিম না থাকার পরও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর মতো তারকা ব্যাটসম্যান আছে মুমিনুলের প্লাটফর্মে। তাদের কাছ থেকে তরুণদের প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। আবার দলের অনুপ্রেরণার উৎসও বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই দুই মহারথী।
টেস্টের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ পরাজিত হলেও একটি বার্তা পৌঁছে গেছে ভারতের কাছে। যেকোন সময় গর্জে উঠতে পারে বাংলার বাঘেরা। এরআগেও ২০১৭ সালে ভারতের হায়দরাবাদ টেস্টে বুক চিতিয়ে লড়েছিল মুশফিকেরা। ভারতের কন্ডিশনে অন্য যেকোন দলের বিবেচনায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। টি-টোয়েন্টি মেজাজ দেখে বাংলাদেশ দলের ভূয়সী প্রসংশা করেছিলেন সে দেশেরই তারকারা। এবার টাইগাররা অপেক্ষায় আছে তাদের টেস্ট মেজাজ দেখানোর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।