পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতির একটি চিত্র সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’র (সিপিডি) মূল্যায়ণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে সামগ্রিক অর্থনীতির দিক তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে দেশ। হয় কর ফাঁকি, না হয় বিদেশে টাকা পাচার, না হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেয়া এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে ১০ টাকার জিনিস হাজার টাকায় কেনার মতো এক দুষ্টচক্রে আবর্তিত হচ্ছে। এর ফলে অর্থের যে সংকট দেখা দেয়, তা সরকার হয় টাকার যোগান বা কর রেয়াতসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অর্থনীতির ভেতর এক ধরনের প্রণোদনা আকর্ষণ বা আসক্তি তৈরি করেছে। তবে সরকারের এই প্রণোদনা দেয়ার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দেশের জিডিপি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, জিডিপির হিসাব সুতা ছাড়া ঘুড়ির মতো। এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। কী তথ্যের ভিত্তিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করা হয় তা জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত। বর্তমানে দেশে একনীতিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা চলছে। সরকার শুধু রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগনীতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে নিয়ে এসেছে। যে ধরনের বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা সরকারিভাবে অবকাঠামো খাতে।
সিপিডি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও অনেক কিছু বলেছে। যার সরমর্ম হচ্ছে, বৃহৎ পরিসরে দেশের অর্থনীতি ভাল নেই। নির্মোহ দৃষ্টিতে সিপিডির এই পর্যবেক্ষণ আমলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবে দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যাবে, তাদের অনেকেই ভাল নেই। আয় বৈষম্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিকসহ সবক্ষেত্রে ব্যয় অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্য সাধারণ মানুষের জন্য জীবনের অনেক ক্ষেত্রই সহজগম্য নয় বা সব ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব নয়। তারা তা চায়ও না। তারা শুধু বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারলেই সন্তুষ্ট। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট সম্পদের পঞ্চাশ ভাগের বেশি মাত্র ৫ শতাংশ লোকের কাছে রয়েছে। এ হিসাবে, ১৬-১৭ কোটি মানুষের মধ্যে এই পরিমাণ সম্পদ ভোগ করছে ৮০-৮৫ লাখ মানুষ। বাকি সম্পদ রয়েছে ১৫-১৬ কোটি মানুষের মধ্যে। এর মধ্যেও কারো বেশি, কারো কম, কারো নেই। এ থেকে বোঝা যায়, ৫ শতাংশের বাইরে যেসব মানুষ রয়েছে, তাদের অবস্থা ভাল নয়। অথচ সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন হলে ধনীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ভাল থাকত।
দুই.
আমরা উন্নতি করছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। উন্নয়ন ছাড়া গতিও নেই। এক জায়গায় থেমে থাকা মানে পিছিয়ে যাওয়া। কেউ পিছিয়ে যেতে চায় না। প্রত্যেক মানুষকেই জীবিকার তাকিদে উন্নয়নের পিছনে ছুটতে হয়। এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, উন্নয়নটা কিভাবে হচ্ছে? সকলের, না একটি শ্রেণীর? এর উত্তরে বলা যায়, বেশিরভাগ উন্নয়ন হচ্ছে, একটি শ্রেণীর। এই যে বলা হচ্ছে, আমাদের মাথাপিছু আয় এখন ১৯১৯ ডলার। এ হিসাবটার মধ্যে এক ধরনের ফাঁক রয়েছে। ফাঁকটি হচ্ছে, আয়ের ক্ষেত্রে একজন কোটিপতির আয় আর একজন মুটেমজুরের আয় সমান দেখানো হয়েছে। এই দুই জনের আয় নিশ্চয়ই সমান নয়। কিংবা একজন বেকার যার কোনো আয়ই নেই, হিসাবে তার আয়ও ১৯১৯ ডলার পড়েছে। এগুলো অর্থনীতির সূত্রের মারপ্যাঁচের হিসাব। তবে বেশিরভাগ মানুষ যখন দেখে তার চারপাশের কিছু মানুষের শনৈশনৈ উন্নতি হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের জীবন চালাতে যারপরনাই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তখন বোঝা যায় উন্নতিটা একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিকভাবে উন্নতি হওয়ার কথা সুষম ও আনুপাতিক হরে। অনেকটা পিরামিডের মতো। নিচ থেকে উন্নতি হতে হতে উপরের দিকে উঠে যাওয়া। তা না হয়ে উন্নতির চিত্রটি হয়ে গেছে উল্টো-পিরামিডের মতো। নিচের মানুষ গরীব হচ্ছে, আর ধনী আরও ধনী হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক শক্তি ক্রমেই নিঃশেষ হয়ে চোঙ্গাকৃতির হয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে যদি ভারসাম্য থাকত তবে তা অর্থনীতির পিরামিডিয় সূত্রাকারে উপরের শ্রেণীর সম্পদ সম্প্রসারিত হয়ে নিচের দিকে বা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছত। তা না হয়ে, এ সূত্র উল্টা পিরামিডে পরিণত হয়ে সাধারণ মানুষের সম্পদ ধনী শ্রেণীর কাছে চলে যাচ্ছে। উন্নতিটা এখন এভাবেই হচ্ছে, যেখানে সমতা বা সুষম হার বলে কিছু নেই। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ‘মাথাপিছু আয়ের হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছে। এর পরের স্তর হচ্ছে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এ স্তরে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয়কে ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি মাথাপিছু আয়ের কথা বিবেচনা করি, তাহলে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ বা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে মাথাপিছু গড় আয় হতে হবে ৪ হাজার ডলারের বেশি। আগামী পাঁচ বছরে কি এটা করা সম্ভব? যেখানে বর্তমান মাথাপিছু আয় নিয়েই যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে? হ্যাঁ, সরকার তার ইচ্ছা মতো ঘোষণা করে সম্ভব বলে দেখাতে পারে। চার হাজার কেন, পাঁচ-ছয় হাজার বা তার বেশিও ঘোষণা করে দিলেও সাধারণ মানুষের বাস্তব অবস্থার কোনো হেরফের হবে না। আবার যদিও হয়, তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ছাড়া কখনোই কমে না। ফলে মানুষ কেবল জানবে তার মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলার হয়েছে। পকেট হাতড়ে খুঁজে পাবে না। বলা বাহুল্য, কোটি কোটি বেকার রেখে এবং লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হওয়ার মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কিনা, তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হয়ে যাবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ চিন্তা করা খুবই কষ্টকর। আমরা ভাল করেই জানি, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। বিগত বছরগুলোর তুলনায় বিনিয়োগ বাড়লেও তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই। শিল্প কারখানা চালু হওয়ার পরিবর্তে বন্ধ হচ্ছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ৮৩ ভাগ অর্জন করা গার্মেন্টস শিল্প এখন ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে। শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। পরিসংখ্যানের তথ্য দিয়ে যদি এখনই ঘোষণা করা হয় আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি, তাতে কী আসবে যাবে! তাতে কি সাধারণ মানুষের জীবনমান ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে? হবে না। বরং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আনন্দচিত্তে আলোচনা করবে। বিশ্লেষকরা কিছুদিন এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এবং সমালোচনা করবে, তারপর থেমে যাবে। সাধারণ মানুষের জীবনের টানাপড়েন যে বদলাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তিন.
ক্ষমতায় কে থাকল বা না থাকল, সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন কতটা হচ্ছে এবং কীভাবে হচ্ছে। এটা কি শুধু কাগজে-কলমে নাকি, টেকসইভাবে হচ্ছে। সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা অগোচরে রেখে সরকার হয়তো ঘোষণা দিয়ে বাহবা নিতে পারে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও পড়তে পারে। ঘোষণা আর বাস্তবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হলে, উন্নয়নের ফানুস চুপসে যেতে বেশি সময় লাগে না। সরকারের মধ্যে এমন আত্মতুষ্টি রয়েছে, যে উন্নয়ন হচ্ছে তা বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমরা এখন যথেষ্ট উন্নতি করছি। উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও কিছু ‘লুপ হোল’ থেকে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটি শ্রেণী এই উন্নয়নকে কেন্দ্র করে তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তাদের এতই অর্থ-বিত্ত যে খরচ করার জায়গা পাচ্ছে না। বিদেশে অর্থ পাচার এবং সেখানে তারা সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে। অনেকে দেশ ত্যাগ করে চলে যেতেও দ্বিধা করছে না। এক ক্যাসিনো কান্ডের মধ্য দিয়েই তার সামান্য নমুনা দেখা গেছে। এর বাইরে যে আরও কত রয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। দেখা যাচ্ছে, যারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে, তারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিংবা অনুকূল্যপ্রাপ্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষকে জীবনযাপন করতে টানাপড়েনের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অর্থনীতির হিসাবে বাংলাদেশ হয়তো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তবে কতটুকু উন্নয়ন গতি নিয়ে বের হচ্ছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাওয়ার শঙ্কাই বেশি। কারণ, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে বাংলাদেশ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে সুদবিহীন বা ন্যূনতম সুদের বিনিময়ে যে ঋণ ও সহযোগিতা পেত, তা আর পাবে না। রপ্তানি ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়াসহ দাতা সংস্থাগুলোর ঋণ ও সহায়তা কম পাওয়া যায়, পেলেও তার সুদের হার বেশি। এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে বিশ্বের সব দেশগুলোর উন্নতি নিয়ে তিনটি শ্রেণীতে একটি তালিকা করে। শ্রেণী তিনটি হচ্ছে, স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল এবং উন্নত। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে স্বল্প সুদে ঋণ ও সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ তালিকায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় ঠাঁই পায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এ তালিকা থেকে বের হতে বাংলাদেশের সময় লেগেছে প্রায় ৪৫ বছর। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হতে যে তিনটি শর্ত রয়েছে তার মধ্যে মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি। বাকি দুটি সূচক মানব সম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জনের কাছাকাছি রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে তিনটি সূচককেই নির্ধারিত পয়েন্ট অর্জন বা অতিক্রম করতে হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিনটি সূচকের পয়েন্ট বাংলাদেশ অর্জন করেছে, যদিও এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন, এ পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়নের সূচক নির্দেশ করা কঠিন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশে পরিণত হোক এটা সবাই চায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ শ্রেণীতে উঠার জন্য যে টেকসই উন্নয়ন দরকার, তা হচ্ছে কিনা? বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিলে, এ ধরনের উন্নয়ন গতি অত্যন্ত ধীর হিসেবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা জানি, দেশে বিনিয়োগের চিত্র আশাপ্রদ নয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যে হারে হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোর অবস্থা তথৈবচ। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে ৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হওয়ার খবর ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজারে কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, কোটি কোটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, বিভিন্ন ব্যাংকে অনিয়ম ও দুর্নীতি ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এই বিশৃঙ্খলায় ধনিক শ্রেণী আরও ধনী হচ্ছে, গরীব আরও গরীব হচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ত্রাহি অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে দেশ প্রকৃত অর্থে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টি আনন্দের হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অনেকটা শুভংকরের ফাঁকি হয়েই থাকবে।
চার.
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে উন্নতি করতে চায় না। তবে উন্নতি করতে চাইলেও সবাই তা পারে না। সক্ষমতার একটা পর্যায় পর্যন্ত সে থেমে থাকে। এক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করতে পারে রাষ্ট্র ও সরকার। এখন সরকারের দায়িত্ব এসব মানুষকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসা। যদি উন্নয়নের ফাঁপা হিসাব দেখায়, তবে ঐ ব্যক্তিকে উন্নতির ফোকরে পড়ে থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তার কথা বলারও উপায় থাকে না। অর্থনীতি এবং এর উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। অর্থনীতিবিদদের এই আলোচনা-সমালোচনা সরকারকে আমলে নিতে হবে। আমলে নিয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করে অর্থনীতির পরিকল্পনা করলে তা দেশের জন্যই কল্যাণকর হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাদের গবেষণায় অর্থনীতির উন্নয়ন নিয়ে এবং এর ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে প্রতিবেদন ও মন্তব্য প্রকাশ করতেই পারে। তাদের সব কথাই যে সরকারকে উড়িয়ে দিতে হবে, এমন নয়। আবার সরকারের সিদ্ধান্তই সঠিক, অন্যদেরটা বেঠিক-এ মনোভাব থাকলে তা গণতান্ত্রিক উন্নয়ন বলে বিবেচিত হয় না। সরকারও ভুল করতে পারে কিংবা তার ভুল হতে পারে-এ বোধ থাকলে তা সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভিত্তি লাভ করে। আমরা আশা করি, সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে হাই ওয়েতে রয়েছে, তাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত করে একটি ভারসাম্যমূলক ও সমতাভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।