ইবি ভিসির অফিসে তালা, অডিও ক্লিপ বাজিয়ে আন্দোলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভিসি
দুর্নীতির অভিযোগ এবং আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের পাশাপাশি বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের আয়োজিত 'সংহতি সমাবেশে' এ দাবি জানান শিক্ষকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার তদন্তের দিকে যেতে ভয় পান তিনি। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোন দাবিকে এবং আন্দোলনকে তিনি কর্ণপাত করেননি। যখন শেষ পর্যন্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যায়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান করেছেন তখন ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়ে আন্দোলনকারীদের মারধর করেছে। এই অবস্থার পর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে থাকতে পারেন না পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করার অধিকার হারিয়েছেন।
সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর তপন কুমার সাহা বলেন,'চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি কিন্তু কখনো তো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নামানোর প্রয়োজন হয়নি! এখন কেন হলো? গতকালের ঘটনার আমি ব্যথিত হয়েছি। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত হওয়ার পর উপাচার্য এটিকে গণঅভ্যুত্থান বলেছে। এটি আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে দূর্ভাগ্য। জাহাঙ্গীরনগরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার আপনার সকলের। এর আগে এই আন্দোলনের সাথে আসিনাই কারণ নিজেকে বোঝাতে পারিনি কিন্তু এখন পেরেছি। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে শুধু তদন্ত না বরং তাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে। '
সংহতি সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের অন্যতম সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, 'উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত অবশ্যই হবে। এখন অপেক্ষা তিনি শিক্ষক হিসেবে থাকবেন কিনা। জাহাঙ্গীরনগরে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তা কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে করছিলেন তখন সেখানে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিলেন। তারপর আবার ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ দিলেন! এই ঘটনার পর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার পদে আর কোন ভাবেই বহাল থাকতে পারেন না।'
শিক্ষার্থী তাপসী প্রাপ্তি দে বলেন,'গতকাল হল তালা মেরে বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। যাতে করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। আমরা এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম কোন ভাবেই শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।'
আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান, অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক কবিরুল বাশার, অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে চলা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়ের সকল আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে সে দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনের বেধে দেয়া সময়ে তারা হল ত্যাগ না করে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের রাস্তায় নেমে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি আবাসিক হলের ছাত্রছাত্রীরা এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ।
গতকাল রাতের ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল থেকে আবারও ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আসতে শুরু করেছেন শিক্ষকরা। শহীদ মিনারের সামনে ব্যানার ফেস্টুন হাতে তৈরি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে ছাত্রলীগের হামলা ও হল ভ্যাকেন্টের প্রতিবাদে পুরো ক্যাম্পাসে মিছিল করছেন এসব শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছে রেখেছিলেন 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এর প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল সোয়া ১১টায় উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যকে বাসা থেকে বের করে তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে আসেন।
এ সময় উপাচার্য সমর্থক শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক-বিতণ্ডা চলতে থাকে। এর মধ্যেই পৌনে ১২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের এলোপাতাড়ি মারধর করতে শুরু করে। আর এ হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ ৩৫ জন আহত হন বলে জানা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।