পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের জয় কোনো ‘অঘটন’ নয়, ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার কথা যে কথার কথা ছিল না, বাংলাদেশ তার প্রমাণ রেখেছে। বাংলাদেশ কেবল ভারতকেই নয়, বিশ্বের যে কোনো দলকে হারাতে সক্ষম। অতীতে নজর ফেললেই এটা দেখা যায়। টি-২০তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ভারত। ফর্ম ও ইতিহাস সবই ছিল তার পক্ষে। তারপরও দিল্লীর অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে ভারত। যোগ্যতর প্রতিপক্ষ হিসাবেই ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচটির ভাগ্যও তিন বছর আগে বেঙ্গালুরুর চিন্ন স্বামী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচটির মতো হতে পারতো। তবে হয়নি। সেদিন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ যে ভুল করে ছিলেন, সে ভুল এবার করেননি। বেঙ্গালুরুর ম্যাচে বাংলাদেশের বিজয়ের জন্য টার্গেট ছিল ১৪৬ রান। বাংলাদেশ জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছিল। ৩ বলে ২ রানের দরকার ছিল। কিন্তু মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ভুলের কারণে বাংলাদেশ হেরেছিল ১ রানে। সেই ম্যাচটি জিততে পারলে ভারতকে টি-২০ তে প্রথমবার হারানোর জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হতো না। বেঙ্গালুরুর ম্যাচটির কথা নিশ্চয়ই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর স্মরণে ছিল। তারা যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন ছিলেন। ধীরতা, স্থিরতা, কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা সবই এবার কাজে এসেছে। শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ২২ রান। ১৯তম ওভারেই ম্যাচটি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসেন মুশফিক। এ ওভারের শেষ ৪ বলে ৪ রাউন্ডারি হাঁকান তিনি। তখন শেষ ওভারের ৬ বলে দরকার ৪ রান। প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় বলে ২ রান। এরপর ওয়াইড থেকে ১ রান। ম্যাচ টাই। তৃতীয় বলে মিডউইকেট অঞ্চল দিয়ে জোর ছক্কা হাঁকিয়ে এক ঐতিহাসিক বিজয় নিশ্চিত করেন দলের ক্যাপটেন মাহমুদউল্লাহ। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ে প্রেসিডেন্ট মো: আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরাও ইনকিলাব পরিবারের পক্ষে এতবড় বিজয় উপহার দেয়ায় মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, আমিনুল, শফিউল, সৌম্য, নাঈমসহ সকলকে; কোচ ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানাই।
বাংলাদেশ দলের এরকম একটা জয় খুবই দরকার ছিল। নানা কারণে আমাদের ক্রিকেটের সময়টা এখন ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বকাপের পরে দলের পারফরমেন্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এক ধরনের অস্থিরতাও সম্প্রতি লক্ষ্য করা যায়। সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। এরওপর ভারত সফরের ঠিক আগ দিয়ে আইসিসির পক্ষ থেকে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর একটা জোর আঘাত হিসাবে বিবেচিত। গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফরে দলের হয়ে সাকিব আল হাসানের খেলতে না পারা, নাম্বার ওয়ান ওপেনার তামিমের পারিবারিক কারণে দেশে থেকে যাওয়া ইত্যাদি বাংলাদেশ দলের ওপর একটা প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। এর বাইরে দিল্লীর বায়ু দূষণও বিরাট উপদ্রব হিসাবে দেখা দেয়। সব মিলে পরিস্থিতি ছিল নেতিবাচক। এরমধ্যে থেকেও সেদিন দলের খেলোয়াড়রা যে আত্মদৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, যে উজ্জীবিত নৈপণ্যের নজির স্থাপন করেছেন, তা অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। সাকিব-তামিম ছাড়াও যে দল গৌরবময় বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা তরুণ খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস আরো দৃঢ় করবে। বাংলাদেশের এ বিজয় ভবিষ্যতে নানাভাবে উল্লেখিত হবে। এটা ছিল টি-২০’র ইতিহাসে এক হাজারতম ম্যাচ, যাতে বাংলাদেশ বিজয়ের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। এটা ছিল প্রধান ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মাদুগালের শততম ম্যাচ। এর আগে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত ৮টি টি-২০ ম্যাচের প্রত্যেকটিতে বাংলাদেশ হেরেছে। নবম ম্যাচটিতে জিতেছে এবং জিতেছে ভারতের ম্যাটিতে।
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এতে বিজয় ও পরাজয় কোনোটাই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে নিশ্চিত করে বলা যায়না। ক্রিকেটের পরাশক্তির ও তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী দলের কাছে পরাজিত হয়েছে, এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বে কয়েকটি দেশ নিজেদের কুলিন হিসাবে মনে করে। তারা অন্যদের তুল্যমূল্য দেয় না এবং নানা উপলক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করে। ভারতের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে। যা হোক, বিজয় কারো জন্যই ধরাবাধা থাকে না। যে কোনো খেলায় জয়-পরাজয় আছে এবং থাকবে। এজন্য একে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে নেয়াই উচিৎ। বাংলাদেশে এতদিন টি-২০ তে ভারতের কাছে হেরেছে। এবার জিতেছে। এটা অস্বাভাবিক নয়। আগেই আমরা উল্লেখ করেছি, দেশের ক্রিকেটের এখন একটা দু:সময় যাচ্ছে। এমুহূর্ত এমন একটা বিজয় দরকার ছিল। তবে এতে অতিতুষ্ট ও আত্মহারা হওয়া যাবে না খেলোয়াড়দের। তাদের আগামী ম্যাচগুলোতে উজ্জীবিত খেলাই উপহার দিতে হবে। বিজয়ের ধারাবাহিকতা সুরক্ষার চেষ্টায় প্রাণপণ লড়তে হবে। আমরা তাদের আরো বিজয় কামনা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।