Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ মাস পর মায়ের কোলে শিশু চোর চক্রের ৩ জন গ্রেফতার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পাঁচ মাস সাত দিন পর মায়ের কোল পেল শিশু মোহাম্মদ আলী। নতুন জামা কিনে দেওয়ার কথা বলে ভিখারি মায়ের কোল থেকে কেড়ে নেওয়ার সময় তার বয়স ছিলো দুই মাস। এরপর শিশুটিকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। শনিবার গভীর রাতে নগরীর দামপাড়া পল্টন রোডের একটি বাসা থেকে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। তার আগে পাকড়াও করা হয় শিশু চোর চক্রের তিন সদস্যকে। শিশু মোহাম্মদ আলীকে তার মায়ের কোলে তুলে দেয় পুলিশ। বুকের ধন ফিরে পেয়ে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়েন শেফালী বেগম।

গ্রেফতারকৃতরা হলো শিশু চোর চক্রের হোতা মো. আফসার ওরফে জাফর সাদেক (৩৫), তার সহযোগী পারভীন আকতার (৩০) ও সুজিত কুমার নাথ (৪৫)। অপর একটি মামলায় আগে গ্রেফতার হয় এ চক্রের অপর সদস্য ইকবাল হোসেন। সুজিত কুমার নগরীর মেহেদিবাগের ন্যাশনাল হাসপাতাল ও সিগমা ল্যাবের রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট। জাফর সাদেকও একসময় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করতেন। ওই চাকরির সুবাদে চমেক হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের আয়াদের সাথে তার সম্পর্ক হয়। আর তাদের মাধ্যমে শিশু চুরির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে জাফর সাদেক।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন ইনকিলাবকে জানান, গ্রেফতার চারজন সংঘবদ্ধ শিশু চোরচক্রের সদস্য। এরা নগরীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ফুটপাতে থাকা হতদরিদ্রদের শিশু চুরি করে। পরবর্তীতে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে মোটা অঙ্কে এসব শিশুদের বিক্রি করা হয়। এ চক্রটি চমেক হাসপাতাল থেকে মৃত নারীদের ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে শিশুটির মা মারা গেছে বলে জাল কাগজপত্র তৈরি করে চোরাই শিশুদের দত্তক দেয়।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ মে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় শিশুপুত্র কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন শেফালী বেগম। এ সময় চোরচক্রের সদস্য ইকবাল তার কোলের শিশুকে নতুন জামা কিনে দেয়ার কথা বলে তাদের রেয়াজুদ্দিন বাজারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে কৌশলে দুই মাসের শিশু মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে পালিয়ে যায় ইকবাল। এ ঘটনায় শেফালী বেগম ২৮ মে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা তদন্তের সূত্রে ধরে শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের কলাতলী থেকে প্রথমে আফসার এবং পরে নগরীর মেহেদীবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে থেকে সুজিত এবং নগরীর অক্সিজেন এলাকার সৈয়দপাড়ায় এক বাসা থেকে পারভীনকে গ্রেফতার করা হয়।

তাদের দেওয়া তথ্যে, নগরীর দামপাড়ায় পল্টন রোডে জনৈক পবন কান্তি নাথের বাসা থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। ওসি মহসীন জানান, নিঃসন্তান পবন কান্তি নাথ এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় জাফরের কাছ থেকে শিশুটিকে কিনে নিয়েছিলেন। শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার সময় জাফরের সঙ্গে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে পবনের চুক্তিও হয়। পুলিশ জানায়, শিশুটি চুরি করে ইকবাল ও জাফর নামে দুজন। এরপর শিশুটিকে পারভীনের হেফাজতে রাখা হয়। তাদের কাছে একটি শিশু আছে জেনে সুজিত কুমার নাথ সেটি বিক্রির প্রস্তাব দেন এবং মধ্যস্থতা করেন।
এ চক্রের অপর সদস্য ইকবাল নগরীর ইপিজেড এলাকায় একটি শিশু চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হলে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জাফরসহ অন্যদের নাম প্রকাশ করে সে। ওই সূত্র ধরে এ মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ