পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ‘জঙ্গী’ হামলার হার আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে কমেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক ‘কান্ট্রি রিপোর্ট অব টেরোরিজম ২০১৮’ প্রতিবেদনে অবশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, এই সময়ে একজন লেখক নিহত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাফলের পেছনে বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে ধর্মমন্ত্রণালয়, জঙ্গীবাদ দমনে জাতীয় কমিটি, ইমাম ও মওলানারা (ওলামা)। মন্ত্রণালয় ও কমিটি ইমাম ও মওলানাদের নিয়ে জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়া পুলিশও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান ও শিক্ষার্থীদের সহিংস জঙ্গীপন্থায় জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আইনশৃংখলা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নিরাপত্তাবাহিনীর লাগাতার অভিযান তো চলছেই। তারা হামলা রুখছে, সন্দেহভাজন জঙ্গীদের গ্রেফতার করছে, অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক জব্দ করছে। আর সরকার জঙ্গী ও জঙ্গীদের অভয়ারন্য গড়ে তোলার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। তবে এই সাফল্য প্রতিবেদন মোতাবেক, ম্লান করে দিচ্ছে সন্ত্রাসীদের বিচার প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড। র্যাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ বাংলাদেশ পুলিশের অন্য সব সংস্থা সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। এসব অভিযানে অনেক সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে। অনেক সময় এগুলোকে ক্রসফায়ার বা ‘শুটআউট’ বলে অভিহিত করা হয়।
জঙ্গীবাদ নিরোধে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণা, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মটিভেশন কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা। জঙ্গীবাদ আসলে সন্ত্রাসবাদ। ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং মুসলিম নামধারীরা যখন কোনো সন্ত্রাস করে তখন ওই সন্ত্রাসকে জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসকারীদের জঙ্গীবাদী বলে অভিহিত করা হয়। এটা পশ্চিমাদের এক বিশেষ উদ্ভাবন এবং মুসলমানদের প্রতি তাদের দ্বেষ, হিংসা ও বৈরিতার প্রকাশ। যেহেতু জঙ্গীবাদ মুসলমানদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সে কারণে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে আলেম, ইমাম, মাদাসার শিক্ষক, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতাদের সক্রিয় ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। তারাই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় সর্বোচ্চ কার্যকর অবদান রাখতে পারে। এই বিবেচনা থেকেই ধর্মমন্ত্রণালয় ও জঙ্গীবাদ দমনে জাতীয় কমিটি এবং পুলিশ ইমাম, মওলানা ও ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে, যার সুফল হাতে হাতেই পাওয়া যাচ্ছে। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার. ইসলামে জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম অহেতুক মানুষ হত্যা, ধ্বংসাত্মক তৎপরতা এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে মনে করে। অর্থাৎ ইসলাম প্রকৃতিগতভাবে যে কোনো নামের যে কোনো সন্ত্রাসবাদের বিরোধী। আমাদের দেশে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার প্রতিটির ক্ষেত্রে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন আমাদের ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতারা। তারা একবাক্যে ঘোষণা করেছেন, মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাস নিষিদ্ধ ও গর্হিত অপরাধ। তাদের এই ঘোষণার সচেতন হয়েছে ধর্মপ্রাণ জনগণ। তারাও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে কঠোর অবস্থান। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাফল্যের এটাই আসল কথা।
ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-মওলানা ও ধর্মীয় নেতাদের জঙ্গীবাদবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের পাশাপাশি সরকারও বরাবরই অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনী সদাতৎপর। সরকারের জিরো টরারেন্স নীতি বাস্তবায়নে তারা যথেষ্ট সক্রিয় বলেই জঙ্গী হামলার হার কমিয়ে আনা সম্ভবপর হয়েছে। তবে তাদের বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকান্ড সব সময়ই সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে আছে। কোনো নীতিবিধানে বিচারবর্হির্ভূত হত্যাকান্ড সমর্থিত নয়। যে যত বড় অপরাধই করুক, প্রচলিত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার ফয়সালা হওয়া উচিৎ। হত্যাকান্ডের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ সাময়িকভাবে কিছুটা দমিত হলেও পুরোপুরি নির্মূল হয় না, এটাই পরীক্ষিত সত্য। কাজেই, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি জনগণকে সর্তক ও সচেতন করার ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। এব্যাপারে সমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম, ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় নেতাদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। আশা করা যায়, তাতে দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাওয়া যাবে। ধর্মমন্ত্রণালয়সহ সরকার এ বিষয়ে আরো ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, এটাই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।