Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনে লেবার পার্টি জিতলে দেশ ছাড়বে ‘অতি ধনীরা ব্রিটিশরা’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ পিএম

যুক্তরাজ্যের আগামী নির্বাচনে দেশটির বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি জিতলে ‘মিনিটের মধ্যেই’ দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অতি ধনী ব্রিটিশরা। আর এর মূল কারণ বামঘেঁষা হিসেবে পরিচিত লেবার নেতা জেরেমি করবিনের এক ঘোষণা। করবিন জানিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে তার সরকার লন্ডনসহ সম্পদশালী অঞ্চলে ‘ওয়েলথ ট্যাক্স’ বা সম্পদ-কর আরোপ করবে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে দেশজুড়ে অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যয় করবে তার সরকার। এখন করবিনের ঘোষিত ওয়েলথ ট্যাক্স এড়াতেই দেশ ছাড়তে চাইছেন অতি ধনী ব্রিটিশরা।
ব্রেক্সিট নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন আর অনিশ্চয়তার পর আগামী ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬৪৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেছে লেবার পার্টি পেয়েছে ২৬১টি আসন। আর কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৩১৭টি আসন। কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ছোট দলের সমর্থনে সরকার গঠন করে কনজারভেটিভ পার্টি।
এবারের নির্বাচনকে ঘিরে অতি ধনী ব্রিটিশদের আশঙ্কা, নির্বাচনে জিতলে ওয়েলথ ট্যাক্স বাস্তবায়ন করতে পারেন করবিন। আর সেটি হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাবেন তারা। শুধু নতুন কর আরোপই নয় মূলধন নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি স্কুলগুলোকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে করবিন সরকার। ফলে সব মিলিয়ে দেশ ছাড়াতেই সমাধান দেখছেন অতি ধনীরা। ২ নভেম্বর শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এই প্রতিবেদেন তৈরিতে যুক্তরাজ্যের ধনী পরিবারগুলোর আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছে গার্ডিয়ান। তারা জানিয়েছেন, লেবার পার্টি জিতলে কিভাবে অর্থকড়ি নিয়ে দেশত্যাগ করা যায়, সে ব্যাপারে তাদের সহায়তা ও উপদেশ চাইছেন ধণাঢ্য ক্লায়েন্টরা।
জেরেমি করবিন চাইছেন, ওয়েলথ ট্যাক্স থেকে উপার্জিত অর্থ তুলনামূলক অনগ্রসর অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যয়ের পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো খাতেও খরচ করা হবে। এ থেকে বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যায়ও বছরে বাড়তি প্রায় তিন বিলিয়ন পাউন্ড-স্টার্লিং ব্যয় করতে আগ্রহী করবিন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, অতি ধনীদের কাছ থেকে কর বাবদ উপার্জিত অর্থ রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী বিভিন্ন সেবামূলক (স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ) খাতে ব্যয় করা হবে।
বর্তমানে যেখানে করমুক্ত ভাতার পরিমাণ তিন লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড সেখানে এর পরিসীমা এক লাখ ২৫ হাজার পাউন্ডে নামিয়ে আনতে চান জেরেমি করবিন। অর্থাৎ আয়ের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড ছাড়ালেই কর পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম আয়েও কর দিতে হবে। করপোরেশন ট্যাক্সের হারও ১৯ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে উন্নীত করতে চান জেরেমি করবিন। ফলে তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধনীদের সম্পদ ও জীবনযাত্রার মানের জন্য একটি কঠোর ব্রেক্সিটের চেয়েও এক ধাপ বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন অতি ধনী ও তাদের পরামর্শদাতারা।
আইনি সংস্থা বুদল হ্যাটফিল্ডের একজন অংশীদার জেফ্রি টড। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, তার অনেক ক্লায়েন্ট ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন, জেরেমি করবিন নির্বাচিত হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে তারা সম্পদ দেশের বাইরে পাঠাবেন।
২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দলীয় নির্বাচনি প্রচারণার উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে দেশে সত্যিকারের পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেন জেরেমি করবিন। যুক্তরাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনি ‘কারচুপির ব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর কঠোর আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা চালাচ্ছে সুবিধাভোগী অভিজাত কর ফাঁকিবাজ, কোটিপতি ব্যবসায়ী ও দুর্বৃত্ত মালিকরা। তাই আসন্ন নির্বাচন হচ্ছে দেশকে বদলে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, যাতে করে কোনও সম্প্রদায়কে পিছিয়ে থাকতে না হয় এবং সত্যিকার পরিবর্তন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
মুষ্টিমেয় সংখ্যক মানুষের জন্য নয় বরং বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সত্যিকার পরিবর্তন আনতে চান লেবার নেতা জেরেমি করবিন। পশ্চিমা পুঁজিবাদী ঐক্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের শোষণকারী, জনগণকে হেয় করা এবং পরিবেশ দূষণকারী অভিজাত দুর্নীতিগ্রস্তদের উৎখাত করতে এই নির্বাচন একটি সুবর্ণ সুযোগ। নির্বাচনি ভাষণে রেল, ডাক ও পানি সেবার রাষ্ট্রীয়করণেরও প্রস্তাবনা দিয়েছেন করবিন। ব্যাংকারদের উপর উচ্চহারে করা আরোপের কথাও বলেছেন এ রাজনীতিবিদ। লেবার নেতা বলেন, ‘অনেকে বলেন পরিবর্তন সম্ভব নয়, সত্যিই কি তাই? এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা যেখানে লোকজনকে অপেক্ষা করতে হবে না এবং বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যাবে। এটি কি খুব বেশি চাওয়া? বিনামূল্যে ব্যক্তিগত সেবাযতœসহ একটি লালন-পালন ব্যবস্থা কি খুব বেশি চাওয়া হয়ে যায়? ১৬ বছরের তরুণ থেকে শুরু করে সবার জন্য বাঁচার মতো মজুরির প্রত্যাশা কি খুব বেশি চাওয়া? কষ্ট করে ঘুমানো বন্ধে সামর্থ্যের মধ্যে ঘর কেনা ও সঞ্চয়ের মধ্যে ঘর ভাড়ার ব্যবস্থা করা কি বেশি কিছু? শিশুদের জন্য ৩০ ঘণ্টা যতœ, উন্নত শিক্ষা থেকে সমাধিতে মোমবাতি কি খুব বেশি চাওয়া? না, এসব খুব বেশি চাওয়া নয়। কারণ ঝুঁকিপূর্ণ ও মৃতপ্রায় পৃথিবীতে বসবাস এড়াতে হলে আমাদের বৈপ্লবিকভাবে পরিবর্তনের পথে এগুতে হবে।’
আইনি সংস্থা বুদল হ্যাটফিল্ডের একজন অংশীদার জেফ্রি টড বলেন, বহু বিত্তবান ব্যক্তিরা তাদের সম্পদে উচ্চ মাত্রার শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন। সম্ভাব্য একটি করবিন সরকারের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যেই সম্পদ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই চুক্তিতে শুধু একটি স্বাক্ষরই বাকি রয়েছে।
লেবার পার্টির নেতা ও ছায়া অর্থমন্ত্রী ক্লিভ লিউস অবশ্য বিবিসি-কে বলেছেন, ‘বিলিওনিয়ার’ থাকাই উচিত নয়। এটা হাস্যকর যে, এই গ্রহে এমন মানুষও রয়েছে যারা দিনে এক ডলারেরও কম আয় করে। তার ভাষায়, ‘এমন লোকও রয়েছেন, যখন আমি পার্লামেন্টে যাই, তখন তারা রাস্তায় ঘুমায়। অথচ এটি বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী দেশ।’ যুক্তরাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলোকে অসমতার ইঞ্জিন হিসেবেও আখ্যায়িত করেন এ রাজনীতিক।
পিনসেন্ট ম্যাসনসের সিনিয়র ট্যাক্স ম্যানেজার জোসি হিলস বলেন, তার আইনি সংস্থার ধনাঢ্য ক্লায়েন্টদের প্রধান উদ্বেগ তাদের সন্তানদের ইটন, হ্যারো বা উইনচেস্টারের মতো স্থানে পড়াশোনা করাতে না পারা নিয়ে। তারা সুইজারল্যান্ড এবং স্বল্প করের অন্য দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে আগ্রহী যেখানে ভালো মানের প্রাইভেট স্কুল রয়েছে। করবিন সরকারের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আমাদের ক্লায়েন্টদের ৮০ ভাগেরই একই চিন্তাভাবনা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাজ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ