Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধান-চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষকের উৎপাদিত ধান কেনা নিয়ে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। এর মূল কারণ উৎপাদিত ধানের যথাযথ দাম না পাওয়া। প্রতি বছরই কৃষক কঠোর পরিশ্রম ও ঋণ নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পাশাপাশি আরও অধিক ধান তারা উৎপাদন করে। দেখা যায়, উৎপাদন শেষে তা বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। লাভ দূরে থাক উৎপাদন খরচই তারা পায় না। দাম না পেয়ে অনেক কৃষক ক্ষোভ ও দুঃখে ক্ষেতে ধান পুড়িয়ে কিংবা সড়কে ছিটিয়ে এর প্রতিবাদ করে। প্রতি বছর সরকার ধান ও চালের কেজি প্রতি দাম নির্ধারণ করে দিলেও তার সুফল তারা পায় না। মধ্যসত্ত¡ভোগী, মিলার ও ফড়িয়া চক্রের কারসাজিতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও আমন মৌসুমে সরকার ধান-চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টন চাল কেনা হবে। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ ধান-চাল কেনা চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এবার ক্রয় প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভিন্নতা আনা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। আমন মৌসুমে যাদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে, বোরো মৌসুমে তাদের বাদ দিয়ে অন্য কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনা হবে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এই প্রক্রিয়ায় ধান-চাল ক্রয় করলে কৃষকরা সমান সুযোগ পাবে। 

ধান-চাল, মাছ, শাক-সবজি, পশুপালনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রত্যেক খাতে জড়িত, কৃষক ও উদ্যোক্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে খাদ্যসংকটমুক্ত করেছে। একটি দেশের প্রধান লক্ষ্যই থাকে খাদ্যসংকট দূর করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখা। বেশ কয়েক বছর ধরেই, সংশ্লিষ্ট খাতের সাথে জড়িতরা এ লক্ষ্য পূরণ করে চলেছে। এমনকি খাদ্য চাহিদার চেয়েও বেশি ফসলাদি উৎপাদন করছে। সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্য রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। সমস্যা হচ্ছে, কৃষকরা তাদের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে গিয়ে দাম পাচ্ছে না। উৎপাদন খরচের চেয়েও কমমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার প্রতি বছর দাম নির্ধারণ করে দিলেও ক্রয়ের সাথে জড়িতদের কারসাজির কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারসাজির মাধ্যমে যে দাম ধরা হয়, তাতে তাদের উৎপাদন খরচই উঠে না। তাদের দুঃখ-কষ্টের অন্ত থাকে না। অনেকে এর প্রতিবাদে, রাস্তায় ধান ফেলে দেয়, কেউ ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের এ প্রতিবাদের অর্থ, এত কষ্ট করে শ্রমে-ঘামে-দামে ফসল উৎপাদন করে যদি তাই না পাই, তবে তা বিক্রি করার চেয়ে ফেলে দেয়াই ভাল। কৃষকদের এ ক্ষোভের কথা সরকারও জানে। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারির অভাব রয়েছে। সরকার যাদের ধান কেনার দায়িত্ব দেয়, তাদের কারসাজি এবং মুনাফাবাজির কারণে কৃষক নির্ধারিত দাম পায় না। সরকারও তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এতে কৃষকদের বছরের পর বছর ধরে হতাশার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে শাক-সবজি ও অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এমনকি তামাক চাষেও তারা আগ্রহী হয়ে পড়ছে। যারা তা করেন না, তারা দুঃখবোধ নিয়েই পুনরায় ধান চাষ করেন এবং সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যান। এবারের আমন মৌসুমেও তারা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছেন। ৫৮.৯৪ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ফলিয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। প্রতি বছরের মতো সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এবার সরকার অনেকটা সতর্কতার সাথে এই ক্রয় প্রক্রিয়া ঘোষণা করেছে। কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, এজন্য লটারি সিস্টেম করেছে। এতে ক্রয় প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর ফল দেবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। সরকার যাদের মাধ্যমে ধান-চাল কিনবে, তাদের কারসাজি যদি বন্ধ করা না যায়, তবে বরাবরের মতোই কৃষক প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হবে। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্তের মধ্যে থাকলেও চাল আমদানি বন্ধ করা যায়নি। দেখা যায়, প্রতি বছরই ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়। ধান-চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও কেন তা করা হয়, এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এই চাল আমদানিও কৃষককে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে। আমরা মনে করি, দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি স্থায়ী করতে চাল আমদানি নিষিদ্ধ করা উচিত। যেখানে সরকারি গুদামগুলো দেশের ফসল রাখার স্থান সংকুলান করতে পারছে না, সেখানে চাল আমদানি করার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এর মাধ্যমে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো লাভ আছে বলে মনে হয় না। পাশাপাশি দেশের কৃষককে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত ও হতাশার মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সরকার ধান-চালের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা শুধু খাতাকলমে থাকলেই হবে না এর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। ধান-চালের মূল্য না পাওয়া নিয়ে যাতে কৃষকদের আর হতাশ হতে না হয়, তা নিশ্চত করতে হবে।



 

Show all comments
  • jack ali ৪ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:৫৮ পিএম says : 0
    These people... they don't love our country'''' They just only love money------
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন