Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিপু সুলতানের নাম মুছে ফেলতে চাইছে বিজেপি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:২০ এএম

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারানো দক্ষিণ ভারতের মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান সম্বন্ধে যা যা লেখা আছে কর্নাটকের স্কুলে ইতিহাসের পাঠ্য বইগুলোতে, তা সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সে রাজ্যের সরকার। বর্তমানে কর্নাটকে বিজেপি-র সরকার ক্ষমতাসীন।

মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, "টিপু জন্ম-জয়ন্তী আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল পাঠ্য বইতে যা রয়েছে টিপু সুলতানের সম্বন্ধে, সেগুলোও সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।"

সিদ্ধান্ত নেওয়া যে সময়ের অপেক্ষা, সেটাও উল্লেখ করেছেন মি. ইয়েদুরাপ্পা।

বিজেপির এক নেতা এর আগে দাবি করেছিলেন যে টিপু সুলতানকে যেভাবে গৌরবান্বিত করা হয় স্কুলের পাঠ্য বইগুলিতে, তা বন্ধ করা উচিত। টিপু সুলতান হিন্দুদের ওপরে সাংঘাতিক অত্যাচার করতেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন কোডাগু জেলা থেকে নির্বাচিত বিধানসভা সদস্য, বিজেপির এ. রঞ্জন।

টিপু সুলতানের ওপরে বহুদিন ধরে গবেষণা করেছেন মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান যোসেফ। তিনি বলেন টিপু সুলতানকে ভারতীয় ইতিহাসের একজন 'খলনায়ক' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

"টিপু সুলতানকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে, সেগুলো রাজনৈতিক কথাবার্তা। টিপু সুলতানকে একজন খলনায়ক করে তোলার এই প্রচেষ্টাটা কয়েক বছর ধরেই শুরু হয়েছে, '' বলেন মি. যোসেফ, যিনি বর্তমানে 'নলওয়াঢি কৃষ্ণারাজা ওয়াদিয়ার চেয়ার'-এর ভিসিটিং প্রফেসর।

সেরিঙ্গাপত্তমের যুদ্ধে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াইয়ে মারা যান মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান।
এই প্রথম নয়, এর আগেও কর্নাটকে সরকারিভাবে যে টিপু জয়ন্তী পালিত হত, তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিজেপি-র আমলে।

বিজেপি এবং হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস মনে করে টিপু সুলতান কুর্গ, মালাবার সহ নানা এলাকায় কয়েক লক্ষ হিন্দুকে মেরে ফেলেছিলেন এবং বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছিলেন।

আরএসএসের মতাদর্শে বিশ্বাস করে, এমন একটি সংগঠন, ইতিহাস সংকলন সমিতির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ইতিহাসের অধ্যাপক রবিরঞ্জন সেন বলছিলেন, তার মতে, বাস্তবে যা যা করেছেন টিপু সুলতান - সবটাই থাকা উচিত।

''তিনি যেমন ধর্মীয় নিপীড়ন চালিয়েছেন তেমনই বলপূর্বক ধর্মান্তকরণও করিয়েছেন। এগুলো ঐতিহাসিক সত্য,'' তিনি বলেন।

''আমাদের মতে তার যদি কিছু অবদান থেকে থাকে সেগুলোর সঙ্গেই নেতিবাচক দিকগুলোও থাকা দরকার,'' মি. সেন বলেন।

তার মতে, অনেক সময়েই পাঠ্য পুস্তকে একপেশে, একধরণের ইতিহাস লেখা হয়ে এসেছে। কিন্তু তার জীবন আর শাসনামলের দুটি দিকই তুলে ধরা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

টিপু সুলতান যে হিন্দুদের ওপরে নিপীড়ন চালিয়েছিলেন বা লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে মেরে ফেলেছিলেন বলে আর এসএস যা দাবী করে, তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন অধ্যাপক যোসেফ।

"টিপু সুলতানকে নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, তাতে এরকম তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না যে তিনি নির্দিষ্টভাবে হিন্দুদের ওপরেই অত্যাচার করেছিলেন,'' তিনি বলেন।

''কুর্গ বা মালাবার উপকূলে যুদ্ধ নি:সন্দেহে হয়েছিল সেখানকার হিন্দু শাসকদের সঙ্গে। এবং সেই যুদ্ধে অনেক হিন্দুর যে প্রাণ গিয়েছিল, সেটা অস্বীকার করা যাবে না - কিন্তু সেটাকে একটা ধর্মীয় অত্যাচার বলা ভুল,'' অধ্যাপক যোসেফ বলেন।

তিনি বলেন, মহাভারতের কাহিনিতে তো যারা নিহত হয়েছিলেন, তারাও হিন্দুই ছিলেন। আবার মারাঠারা যখন মহীশূর দখল করতে এসেছিল, তখন তারা অতি পবিত্র হিন্দু তীর্থ শৃঙ্গেরি মঠ ধ্বংস করে দিয়েছিল - এমনকী বিগ্রহটিও ধ্বংস করে দেয় তারা।

''শৃঙ্গেরি মঠ পুণর্নিমানে অর্থ দিয়েছিলেন টিপু সুলতান। এগুলোকে তো ধর্মীয় নিপীড়ন বলা যায় না," ব্যাখ্যা করছিলেন অধ্যাপক যোসেফ।

টিপু সুলতান যখন ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতেন, রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে শাসন চালাতেন একজন হিন্দু - পুন্নাইয়া। আবার মালাবার দখল করার সময়েও টিপুর সেনাপতি ছিলেন শ্রীনিবাস রাও - তিনিও হিন্দু।

অধ্যাপক যোসেফের যুক্তি, "টিপুর পরেই যার হাতে সব ক্ষমতা, সেই পুন্নাইয়া, কুর্গে হিন্দুদের ওপরে অত্যাচার করতে দিয়েছেন, এটা কি যুক্তিগ্রাহ্য বা হিন্দু হয়েও শ্রীনিবাস রাও মালাবারে হিন্দুদের ধর্মান্তকরণ করানোতে মদত দিয়েছিলেন - সেটা কি মেনে নেওয়া যায়?"

কলকাতায় টিপু সুলতান শাহী মসজিদ। টিপু সুলতানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র প্রিন্স গুলাম মোহাম্মদ কলকাতায় এই মসজিদ তৈরি করেন ১৮৩২ সালে।
টিপু সুলতান ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরে তার ১২জন পুত্র এবং পরিবার পরিজন সবাইকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয় ব্রিটিশ সরকার।

সেই থেকে কলকাতাতেই টিপুর পরিবারের বসবাস। শহরের সবথেকে পরিচিত মসজিদ 'টিপু সুলতান মসজিদ' যেমন এই কলকাতাতেই, তেমনই তার পুত্র আনোয়ার শাহ এবং পরিবারের আরও কয়েকজনের নামে রয়েছে শহরের বড় বড় কয়েকটি রাস্তার নাম। বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিজেপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ