Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাশ্মীর ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু: বরিস জনসন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৫৯ পিএম

অধিকৃত কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেখে এসেছে ব্রিটেন। সেই অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে বলে বুধবার জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

যদিও উপত্যকাটির পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক বলে মনে করেন তিনি। এমন এক সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করলেন, যখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দুইদিনের কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছেন।

পার্লামেন্টে রক্ষণশীল দলের এমপি স্টিভ বেকারের এক প্রশ্নে বরিস জনসন বলেন, কাশ্মীরিদের সংকট ও নিরাপত্তা যুক্তরাজ্য সরকারের জন্য গভীর উদ্বেগের। তবে ব্রিটেন সরকারের দীর্ঘদিনের অবস্থান হচ্ছে, কাশ্মীর মূলত ভারত পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু। তাদেরই সমাধানে আসতে হবে।

কাশ্মীরে ভারতীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে একজন হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের ওয়েকমবি থেকে নির্বাচিত বেকার। তিনি বলেন, কয়েক হাজার ব্রিটিশ নাগরিকের পরিবার ও স্বজন নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশে বসবাস করছেন। সেখানে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

এদিকে বেশ কয়েক মাস ধরে সাংবাদিক, ভারতীয় আইনপ্রণেতা ও এক মার্কিন সিনেটরকে অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অথচ মঙ্গলবার সেই রাজ্যটিতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সবচেয়ে উগ্রডানপন্থী সদস্যরা সফরে গেছেন।

যাদের মধ্যে অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দেয়ার ইতিহাস এমন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে এমন তথ্যই জানা গেছে।

মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সদস্যদের কাশ্মীর ভ্রমণের কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। গত ৫ আগস্ট রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হরণ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।

এর পর থেকে হিমালয় উপত্যকাটিতে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অধিকাংশ স্থানীয় রাজনীতিবিদকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানকার ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

চলতি মাসে কাশ্মীরের মোবাইল সংযোগ অংশত ফিরিয়ে দেয়া হলেও অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম বন্ধই রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান প্রতিনিধিরা কাশ্মীরে যান। তাদের অধিকাংশই উগ্রডানপন্থী। এসব রাজনৈতিক দলের মধ্যে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি, পোল্যান্ডের ল’ অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ও ফ্রান্সের ন্যাশনাল র‌্যালি দলও রয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, কাশ্মীর সফরে যাওয়া ২৭ আইনপ্রণেতার ২২ জনই ইউরোপিয়ান উগ্রডানপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য।

এসব দেশের দূতাবাস মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে তাদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেনকে কাশ্মীরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। অবরুদ্ধ রাজ্যটির পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে ভারতীয় পার্লামেন্ট সদস্যরা ঢুকতে চাইলেও তাদের নিবৃত্ত করা হয়েছে।

ইউরোপিয়ান উগ্রপন্থীদের এই সফরের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে কারাবন্দি কাশ্মীরি নেতা মেহবুবা মুফতির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট দেয়া হয়েছে।

এমনকি মেহবুবা মুফতির দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

তার টুইটার পোস্টে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে, আন্তর্জাতিক মহলকে সেটি বোঝাতে ভারত সরকারের এটি বেপরোয়া চেষ্টা। অভিবাসীবিরোধী, ডানপন্থী ও ফ্যাসিবাদী ইউরোপিয়ান এমপিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সরকার।

মেহবুবা মুফতি কারাগারে থাকায় তার টুইটার অ্যাকাউন্ট তার মেয়ে চালাচ্ছেন বলে সমর্থকরা দাবি করছেন।

আগস্টে হঠাৎ করেই কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাতিল করে দেয় মোদি সরকার। ভূখণ্ডটির ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করবে ভারত। এর পর ভূস্বর্গ বলে খ্যাত রাজ্যটি কেন্দ্রীয় সরকারনিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে পরিণত হয়ে যাবে।

অর্থাৎ মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীর একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে নিজের মর্যাদা হারাবে।

কাশ্মীরকে ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের দুটি ভূখণ্ডে ভাগ করা হবে। লাদাখ হবে একটি, আর জম্মু ও কাশ্মীর মিলে আরেকটি স্বতন্ত্র ভূখণ্ড হয়ে যাবে।

বিরোধপূর্ণ রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হরণের উদ্যোগ ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে। এমনকি বিরোধী দলেরও এতে সায় রয়েছে।

কিন্তু কীভাবে সেটি করা হয়েছে, তা নিয়েই কেবল মৃদু প্রতিবাদ জারি ছিল। বিশেষ করে, কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের কারাবন্দি, ভ্রমণ ও যোগাযোগ অচলাবস্থা আরোপ করার বিরোধিতা করেছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, অচলাবস্থায় তল্লাশিচৌকিতে অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ায় রোগীদের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের আইনপ্রণেতা গৌরব গগৈ বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের নিজ দেশের ভূখণ্ডের মধ্যে যেতে দেয়া হচ্ছে না, এটি ভারতীয় পার্লামেন্টের জন্য অপমানজনক।

তিনি বলেন, কাশ্মীর ভ্রমণে ইউরোপিয়ান প্রতিনিধিদের যেভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে, ভারতীয় এমপিদের প্রতি তেমন আচরণ করা হবে বলে আমি আশা করছি।

তবে ইউরোপিয়ানরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজ্যটিতে গেছেন বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও দাবি নয়াদিল্লির।

সোমবার এসব প্রতিনিধি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নাম প্রকাশে এক সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা এই সফরের আয়োজন করেছে। এর বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে তিনি অস্বীকার করেন।

ওই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, কেবল উগ্রডানপন্থীরাই নয়, ইউরোপের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর সফরে যান এসব প্রতিনিধি। এ সময় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন।

তবে এ বিষয়ে অন্ধকারে থাকার কথাই জানিয়েছে নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন ইউরোপীয় দূতাবাস। কেবল গণমাধ্যমের খবরে এ সফর সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মির ইস্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ