পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে বেলুন ফুলানো গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শিশুসহ অন্তত ১৮ জন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল বুধবার বিকালে মনিপুর স্কুলের রূপনগর শাখার বিপরীত দিকে ১১ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুরা হল- রমজান (৮), নুপুর (১০), শাহিন (৭), জান্নাত (১৪) ও ফারজানা (৭)।
রূপনগর থানার পরিদর্শক অপারেশন মোকাম্মেল হক বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আপনমনে খেলছিল শিশুরা। হঠাৎ বিলুন বিক্রেতার ভ্যান দেখে ছুটে গিয়ে সেখানে জড়ো হয়। বিক্রেতার বেলুন ফোলানো দেখছিল তারা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বেলুন ফোলানো সিলিন্ডারটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ আশপাশে থাকা শিশুরা রাস্তায় ছিটকে পড়ে। তাদের অনেকের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভ্যানে করে গ্যাস সিলেন্ডার নিয়ে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি করছিল এক বিক্রেতা। পাশেই বস্তি এলাকা হওয়ায় অনেকেই ভ্যান ঘিরে এবং আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কেউবা বেলুন কিনছিল আবার বেলুনওয়ালা বেলুন ফুলিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছিল আর শিশুরা সেটি ধরে নিয়ে আসছিল। এ সময় হঠাৎ করে বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, মিম (৮), সিয়াম (১১), মোস্তাকিন (৮), অজুফা (৭), তানিয়া (৭), জামিলা (৮) সোহেল (২৫), জুয়েল (২৯), জান্নাত (২৫), নেহা (৮), অর্নব (১০) জনি (৯), মোরসালিনা (১০) অজ্ঞাত (৫) রাকিবসহ (১২) ১৬ জন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে ১৬ জন আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এর মধ্যে ৪/৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের সব ধরনের চিকিৎসা দিচ্ছি।
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, এক নারী ও তিন শিশুসহ চারজনকে মৃত অবস্থায় এই হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিস্ফোরণে নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়ে আশপাশে ছিটকে পড়ে। এ চারজনের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢামেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। যে দু’জন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা বিপদমুক্ত।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের হাসপাতালে আসা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। আহত ও নিহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
আহত এক শিশু বলেন, বেলুন কিনতে সেখানে গেলেও একটু দূরে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে এবং বেশ কয়েকজন সমবয়সীর চিৎকার শুনতে পাই। তার পায়ের আঙুলে ভীষণ ব্যথা করছে বলে সে কান্নাজুড়ে দেয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিহত এক শিশুর খালা বলেন, তার বোনের মেয়ে বাবার কাছে বেলুন কেনার বায়না ধরলে তার বাবা তাকে টাকা দিয়ে বেলুন কিনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি এসে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ঝালমুড়ি বিক্রেতা হোসেন বলেন, তিনি ১১ নম্বর সড়কের কামরুল মাদবরের বস্তির সামনে বসে ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টার পরে ভ্যানে করে বেলুন নিয়ে আসে এক লোক। আমার ঝালমুড়ির পাশে এসে দাঁড়ালে তাকে সরিয়ে দেই। এরপর সে ১১ নম্বর সড়কের মুখে লোহার গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ সময় বাচ্চারা এসে তাকে ঘিরে ধরে। এর কিছুক্ষণ পরেই বিকট শব্দে আশপাশের পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। শিশুদের চিৎকার শুনতে পাই। এরপর দেখতে পাই লোহার গেটের সামনে রক্ত। শিশুদের ছিন্নভিন্ন দেহ। এর ১৫/২০ মিনিট পরেই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে লাশ ও আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক মোস্তফা মিয়া বলেন, যে বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে সেই বেলুনওয়ালা প্রায়ই আসতো। লোহার জিনিস, কাঁচের বোতল ও টিনের কৌটার বিনিময়ে বেলুন বিক্রি করতেন। বিস্ফোরণের সময় তার কাছে থাকা কনডেনস মিল্কের কৌটা ছিটকে গিয়ে আশপাশের অনেকে আহত হন। কমপক্ষে ২০-২৫ জনকে আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেছেন তিনি।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী বলেন, ঘটনা মর্মান্তিক। হতাহত শিশুরা অধিকাংশ নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। তারা পাশ্ববর্তী বস্তিতে থাকে। হতাহতের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। আর যাতে গ্যাস বেলুনওয়ালা এই এলাকা ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস মিরপুরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা অগ্নিকান্ডের খবর পেয়েছিলাম। এরপর আমাদের ৩টি ইউনিট সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে ৪টি শিশুর ডেডবডি দেখতে পাই। এরপর বস্তির ভেতরে আরেক শিশুর লাশ পাই। সবগুলো লাশ উদ্ধার করে আমরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। তিনি আরও বলেন, ওই ব্যক্তি ভ্যানগাড়িতে করে বেলুন বিক্রি করতেন। বেলুনে বাতাস ভরার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে- ভ্যান গাড়িটিও খন্ডবিখন্ড হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।