প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
চলচ্চিত্রে মননশীল চিন্তা-চেতনার বিকাশ, আধুনিকতা এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে এক সময় পিছিয়ে পড়তে হয়। সাধারণত যারা চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রযোজনা করেন তাদেরকে বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে দূরদর্শী চিন্তা, নতুন চিন্তার সংযোজন এবং ভবিষ্যৎকে দেখতে হয়। আমাদের চলচ্চিত্রে নির্মাতাদের মধ্যে এই বিষয়গুলোর ঘাটতি থাকায় মাধ্যমটি এখন অত্যন্ত দুর্দশার মধ্য দিয়ে চলছে। বিগত প্রায় এক দশক ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। তবে এর মাঝেই নতুন চিন্তা, চেতনা, আধুনিকতা নিয়ে হাজির হন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক, প্রযোজক, পরিচালক এবং দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি অনন্ত জলিল। আমাদের দেশে ডিজিটাল চলচ্চিত্র এবং এতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মূলত তার হাত ধরেই শুরু হয়। তার খোঁজÑদ্য সার্চ সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তাতে এর প্রমাণ দেখতে পেয়েছেন। শুধু প্রযুক্তি যুক্ত করলেই হয় না, এর সাথে তাল মিলিয়ে নায়ক-নায়িকাদের অভিনয়ের সক্ষমতাও দেখাতে হয়। অনন্ত জলিল তার প্রথম সিনেমায়ই প্রযুক্তি এবং এর সাথে তাল মিলিয়ে পারফরম করার দক্ষতা দেখিয়েছেন। দর্শক আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের এক নতুন সূচনা দেখতে পান। বলা যায়, অনন্ত জলিল দেশের চলচ্চিত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের ক্ষেত্রে পুরধা হয় আছেন। তার পরবর্তী সিনেমাগুলোতে এই সংযোজন আরও ব্যাপকতা লাভ করে। হলিউড-বলিউডের সিনেমার যে ধারণা তা তিনিই প্রথম আমাদের চলচ্চিত্রে প্রয়োগ করেন। তিনি হয়ে ওঠেন দেশে আধুনিক প্রযুক্তির সিনেমা নির্মাণের অগ্রপথিক। তার একেকটি চলচ্চিত্রের বাজেটও গড়ে আট থেকে দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবার তার পূর্বের সব সিনেমার বাজেট ছাড়িয়ে গেছে তার নির্মাণাধীন সিনেমা ‘দ্বীন দ্য ডে’। অনন্ত নিজেই জানান, এ সিনেমার বাজেট ১০০ কোটি টাকা। আমাদের দেশে যেখানে চলচ্চিত্রের স্বর্ণ যুগে বছরে শতাধিক সিনেমা নির্মিত হতো, তখনও সব মিলিয়ে গড়ে ৬০-৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হতো। একেকটি সিনেমার গড় বাজেট ছিল ৬০-৭০ লাখ টাকা। এই সময়ে এসে কিছু সিনেমার বাজেট কোটি টাকা ছাড়ালেও শত কোটি টাকা বিনিয়োগে সিনেমা নির্মাণ কল্পনাও করা যায় না। এই অকল্পনীয় কাজটিই করছেন অনন্ত। কেন শত কোটি টাকা লাগছে তার বর্ণনা সিনেমাটির নির্মাণ প্রক্রিয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সংক্ষেপে অনন্ত তার কিছুটা বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, সিনেমাটির যে পেক্ষাপট এবং ব্যাপ্তি তা দর্শক পর্দায় দেখলেই বুঝতে পারবেন। এ সিনেমাটি তো শুধু আমাদের দেশের জন্য নির্মিত হচ্ছে না, এটি একটি আন্তর্জাতিক সিনেমা। হলিউড-বলিউডে যেসব সিনেমা নির্মিত হয়, তা কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারকে সামনে রেখে করা হয়। আমার এ সিনেমাটিও সেই লক্ষ্যেই নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর শূটিং হয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, বাংলাদেশে। বাকি শূটিং হবে তুরস্কে। সিনেমাটির গল্পের প্রেক্ষাপটে এই ব্যাপ্তি লাভ করেছে। আমরা যে ইরানে শূটিং করেছি, সেখানের রাষ্ট্রীয় স্পেশাল ফোর্স শূটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে। এটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। ইরান ও আফগানিস্তানের যেসব দুর্গম এলাকায় শূটিং হয়েছে, তাও অনেকের ধারণার বাইরে। সিনেমাটির শূটিং হবে বোয়িং বিমানের ভেতরে। এজন্য তা ভাড়া করতে হবে। তুরস্কের ইস্তানবুলসহ অন্য যে শহরে শূটিং হবে সেখানে ৮৩ জন পারফরমার অংশগ্রহণ করবেন। সত্যি কথা বলতে কি, সিনেমাটির ক্যানভাস এবং এর ব্যাপ্তি এতটাই যে, তা দর্শক না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এ সিনেমাটিতে আফগানিস্তান, ইরাণ ও লেবাননের তিন জন বিখ্যাত অভিনেতা রয়েছেন। আফগানিস্তানের কুবে, লেবাননের মাজদি এবং ইরানের রেজা। এরা প্রত্যেকেই নিজ দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত। অনন্ত বলেন, এদের সাথে অভিনয়ের বিষয়টিও অত্যন্ত জটিল। যেমন এক সিকোয়েন্সে তারা তাদের ভাষায় ডায়লগ দিচ্ছে। আমাকে বাংলা ভাষায়। আমরা কেউই কারো ভাষা বুঝতে পারি না। অথচ তাদেরকে যেমন আমার ডায়লগ শুনে অভিনয় করতে হয়েছে, তেমনি আমাকেও তাদের ডায়লগ শুনে অভিনয় করতে হয়েছে। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। কারণ ভাষা না বুঝলে তো তার সাথে যথাযথ রিঅ্যাকশন দিয়ে অভিনয় করা যায় না। এই জটিল কাজটি আমাদের করতে হয়েছে। এটা করা হয়েছে এ কারণে যে, যার যার দেশের দর্শক যাতে তাদের ভাষায় সিনেমাটি দেখতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের অভিনেতাদের তাদের ডায়লগ ঠিক রেখে বাকিদের ডায়লগ তাদের ভাষায় ডাবিং করা হবে। অনন্ত বলেন, আমরা সিনেমাটিকে শুধু একটি সিনেমা হিসেবে নির্মাণ করছি না। এটি একটি ইন্ডাস্ট্রির মতো। এটা এমন না যে, আমাদের দেশের প্রথাগত প্রযোজকের মতো শুধু বিনিয়োগ করে প্রযোজক হয়ে গেলাম। এখানে প্রযোজক বলতে একটি ইন্ডাস্ট্রি সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন হলিউডের টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স, ইউনিভার্সেল, প্যারামাউন্ট, গোল্ডমায়ার, অলিম্পাসÑযারা সিনেমা প্রযোজনা করেন, তারা শুধু প্রযোজক নয়, তারা একেকটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের প্রযোজনার ধারণাটিও তাদের মতো। আমি সিনেমা নির্মাণকে একেকটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা হিসেবে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমি এখন জয়েন্ট ভেঞ্চারে এ ধরনের একেকটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলব। পরবর্তীতে মরক্কো, মিশর, তুরস্কের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে সিনেমা নির্মাণ করব। অনন্ত বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সিনেমা নির্মাণ সহজ বিষয় নয়। এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ ও অভিনয়ের জন্য মেধা লাগে। যিনি অভিনয় করবেন, তাকে বিশ্বের চলমান ঘটনা সম্পর্কে জানতে হবে। বিশ্বে এখন কী ধরনের ক্রাইসিস চলছে, কোনটি বার্নিং ইস্যু এ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাকে ট্রাভেলার হতে হবে। বিশ্ব ভ্রমণ করে বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানতে হবে। বিশ্বের অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ইরানের সাথে দ্বীন দ্য ডে নির্মাণের পরিকল্পনা যখন করি, তখন আমাকে সেখানে তিনবার যেতে হয়েছে। সেখানের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মেয়র থেকে শুরু করে প্রশাসনের সাথে মিটিং করতে হয়েছে। তাদের বোঝাতে হয়েছে, কেন ও কি কারণে এবং কি ধরনের সিনেমা আমি নির্মাণ করতে চাই। তারাও বাংলাদেশে এসে বিভিন্নভাবে আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছে। আমি কে, কি করি, আমার অবস্থান কি, মানুষের জন্য সেবামূলক কি কাজ করেছি, আমার বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে তারা তাদের মতো করে খোঁজ-খবর নেয়। পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে তারপর এ সিনেমার সাথে যুক্ত হয়। এটা তো কোনো সহজ বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা নির্মাণ করছি বা করবÑএমন কথা কেবল মুখে বললে হয় না। এর জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতা লাগে। পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও চলমান ঘটনা সম্পর্কে ধারণা না থাকলে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়। দিন দ্য ডে’র ক্ষেত্রে আমাকে এসব ফেস করেই নির্মাণ করতে হচ্ছে। এটা এমন না যে, ইউরোপ-আমেরিকা গিয়ে একটি-দুটি গানের শূটিং করলেই তা আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা হেয় গেল। এই যে তুরস্কে সিনেমাটির বাকি বিশ ভাগের কাজ করব, এর জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাকে প্রতিনিয়ত কথা বলতে হচ্ছে। পাশাপাশি অভিনয়ের প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে। এ সিনেমায় এমন সব দুর্দর্শ দৃশ্য রয়েছে, যা কেবল হলিউডের সিনেমায়ই দেখা যায়। প্লেন থেকে প্যারাজাম্প থেকে শুরু করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে। আপনারা জানেন, এসব দৃশ্যে আমি কোনো স্ট্যান্টম্যান ব্যবহার করি না। নিজেই শট দেই। এসব শট দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তির প্রয়োজন। এজন্য কঠোর অনুশীলন ও পরিশ্রম করতে হয়। সিনেমাটির সব আয়োজনের পাশাপাশি এ প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে। এটা এমন না যে, আমি শুধু একজন অভিনেতা এবং আমি আমার শূটিং করেই দায়িত্ব শেষ করছি। এটা এক মহাযজ্ঞ। একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে যে পরিকল্পনা, শ্রম ও মেধার প্রয়োজন, ঠিক একইভাবে সিনেমাটি নির্মাণ করছি। আমাদের দেশে যে বিশ্বমানের সিনেমা নির্মিত হয়, মূলত এ ম্যাসেজটিই দ্বীন দ্য ডে’র মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরার জন্য নির্মাণ করছি। এটাকে বলতে পারেন, সিনেমার মাধ্যমে দেশের ভাবমর্যাদা বিশ্ব দরবারে উঁচু করে তোলার একটা মিশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।