Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছেলে করলো ধর্ষণ, পালাতে সাহায্য করলো বাবা-মা

বিভিন্ন স্থানে শিশু-কিশোরীসহ ধর্ষণের শিকার ৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ভোলার মনপুরায় নির্জন চরে গৃহবধূকে ধর্ষণকারী চারজনকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়ার পর এক ছাত্রলীগ নেতা ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে সেই নেতাকে। গতকাল সোমবার ভোররাতে তাকে মনপুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পটুয়াখালীতে ফলের শাস খাওয়ানোর কথা বলে ধর্ষণ করা হয়েছে এক কিশোরীকে। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে দুজনকে। অন্যদিকে বিশ্বনাথে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে টানা ১০ দিন আটকে রেখে ধষর্ণের শিকার হয়েছে হয়েছে দরিদ্র পরিবারের এক কিশোরী । এ ঘটনায় ১ লাখ টাকায় মিমাংসা করতে সক্রিয় রয়েছে এলাকার মাতবররা। আর পুলিশের হস্তক্ষেপ না থাকায় গ্রেফতার করা যায়নি জড়িত কাওকে। এছাড়া শেরপুরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ছেলেকে পালাতে সহায়তা করেছে বাবা-মা। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ধর্ষকের পরিবারের সকলকে। আর নারায়নগঞ্জে ৩ বছরের প্রেমের সম্পর্ক শেষ হয়েছে বিয়ের প্রলোভনে ধষর্ণে।
ভোলা : ভোলার দুর্গম চরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় মনপুরা উপজেলার সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুল ইসলামকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোররাতে মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মনপুরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে আমরা ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার ভোরের দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত শনিবার ওই গৃহবধূ তার আড়াই বছরের শিশুকে নিয়ে মনপুরা যাওয়ার জন্য চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাটে আসেন। তিনি ঘাটে এসে দেখেন মনপুরাগামী লঞ্চটি ছেড়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে তিনি ওই রুটে নিয়মিত যাত্রী পারাপারকারী একটি স্পিডবোটে চড়েন। এ সময় বোটে আরও দুই যাত্রী ছিলেন। পথিমধ্যে জনতার খালপাড় এলাকা থেকে আরও দুই যাত্রী ওঠে। পরে বোটটি মনপুরার উদ্দেশে কিছুক্ষণ চলার পর একপর্যায়ে চারযাত্রী মিলে জোরপ‚র্বক স্পিডবোটটি চরপিয়ালে এলাকায় থামিয়ে ওই গৃহবধূকে চরে নিয়ে ধর্ষণ করে।
বিষয়টি স্পিডবোটের মালিক সাকুচিয়া ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুলকে জানালে তিনি অপর একটি স্পিডবোটে চড়ে চরপিয়াল আসেন। নজরুল এসে ওই চার ধর্ষককে মারধর করেন এবং তাদের কাছে থাকা ৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন।
পটুয়াখালী : তালের ফোপড়া (তালের বীচের মধ্যের নরম অংশ) খাওয়ানোর কথা বলে পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরে এক কিশোরী গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর সে দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ঐ কিশোরীর। ধর্ষনের শিকার কিশোরীকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। সদর থানার পুলিশ ইতোমধ্যে ধর্ষকদের সহায়তাকারী ২জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার কিশোরী ঢাকায় একটি গার্মেন্টস চাকুরী করতো। চাকুরী পরিবর্তনের কারণে কিছুদিন ছুটির সুয়োগ পায় এ কিশোরী। ছুটির ফাঁকে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের উত্তর বাদুরা গ্রামে বেড়াতে আসে কয়েক দিন পূর্বে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর চাচাতো ভাবী কহিনুর বেগম তাঁকে তালের ফোপড়া খাওয়ার জন্য তার ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একই বাড়ির শাহ আলম মৃধার ছেলে ইসা (১৯) এবং বারেক মৃধা ছেলে কাওসার(২০) ঐ কিশোরীর মুখ চেপে তাঁকে ঘরের মধ্যে ধর্ষন করে। পরে কিশোরীর বাবা ঘটনা জানতে পেরে বিকেল চারটার দিকে কিশোরীকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পুলিশ ঘটনা জানতে পেরে অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যায় মুসা(২২) ও সোহেল(২৩) নামে দুই জনকে আটক করে।
বিশ্বনাথ (সিলেট) : অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান টিটুর পাশের বাড়িতে একটি কিশোরী মেয়ে গৃহকর্মীর কাজ করত। মেয়েটির প্রতি কুদৃষ্টি পড়ে বখাটে হাবিবুর রহমানের। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১১ অক্টোবর টিটু তার বাড়ির পাশের একটি নির্জন বাড়িতে আটক রেখে ১০ দিন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় মাতবররা মেয়েটিকে দোষী সাব্যস্থ করে টিটুর সাথে মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জোর তদবির শুরু করেন। এক পর্যায়ে ছেলে ও মেয়ের পক্ষকে থানায় নিয়ে আসা হয়। মেয়ের পিতা সফিক আলী নিরক্ষর ও অসহায় দরিদ্র থাকায় মাতবরদের কথার বাইরে যাওয়ার সাহস পাননি। ছেলের পক্ষ মেয়েটিকে বিবাহের আশ্বাস দিলে থানা পুলিশ বখাটে টিটুকে ছেড়ে দেয় এবং বাড়িতে গিয়ে আত্মীয় স্বজনরা বিবাহে অস্বীকৃতি জানায়।
স্থানীয়রা জানান, মেয়েটিকে বিবাহ দেয়ার কথা বলে মাতবররা ছেলের পক্ষ থেকে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেন মেয়েকে টিটুর সাথে বিবাহ না দেয়ার মত দেন। অসহায় পিতা সফিক আলী নির্যাতিত মেয়েকে নিয়ে অন্ধকার দেখছেন। তার পাশে পুলিশ ও নেই সমাজপতিরাও নেই।
শেরপুর : নালিতাবাড়ী উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী (৮) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ধর্ষককে পালাতে সহায়তা করায় পরিবারের সবাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সন্ধ্যায় টঙ্গী থেকে ধর্ষক আজিজুল হককে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন আজিজুলের বাবা আলম মিয়া (৪০), মা আছমা বেগম (৩০), মামা দুলাল মিয়া (৪০) ও চাচা নুরুল হক (৪০)।
পুলিশ ও ধর্ষণের শিকার শিশুর পরিবার জানায়, উপজেলার আন্দারুপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তির মেয়ে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার আন্দারুপাড়া গ্রামে মামার বাড়ি বেড়াতে যায় ওই ছাত্রী। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মামার বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফেরার সময় ছাত্রীর পথরোধ করে আজিজুল হক। সেই সঙ্গে রাস্তা থেকে ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধানক্ষেতের আইলে ধর্ষণ করে আজিজুল।
নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় এক পোশাককর্মীকে (১৮) বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় মো. রাসেল (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ধর্ষণের শিকার তরুণী বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। গ্রেফতার রাসেল চাঁদপুরের শাহরাস্তির রাজাপুর এলাকার আবুল কাশেম পাটোয়ারির ছেলে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শনিবার সকালে তরুণীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত রাসেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।



 

Show all comments
  • Abdul Mannan ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩০ এএম says : 0
    ধিক্কার জানানোর মতো কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না, তাই সমস্ত দেশবাসীর কাছে একটি আকুল আবেদন এই যে আপনারা এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিন এবং রুখে দারান,প্রকৃত দোষীদের পৃথিবী কাঁপানো শাস্তি প্রদান করা হোক এটাই কামনা
    Total Reply(0) Reply
  • Asish Mondal ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি,
    Total Reply(0) Reply
  • MD Rasel Sk ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    ওরে জনসম্মুখে ফাসি দেওয়া হোক, তাতে করে ওর মত এই রকম কাজ আর কেউ করতে সাহস পাবেনা,সরকারের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ, স্বাধীন দেশে ধর্ষকে ঠাই নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Humayun ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ,তাহলেই মহামারী আকার থেকে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোন দেশ ই এটা চিরতরে বন্ধ করতে পারে নাই হয়তোবা সম্ভব ও নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • কাবাতুল্লাহ ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    দেশে প্রতিদিনই এমন বর্বরতার ঘটনা ঘটছে। আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের ‍মুক্তি দেবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Saifur Rahman ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    কি যে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে
    Total Reply(0) Reply
  • বিদ্যুৎ মিয়া ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    এরা মানুষের মধ্যে পরে না, এরা পশুর চেয়েও অধম
    Total Reply(0) Reply
  • খোরশেদ ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৩ এএম says : 0
    কোরআনের আইন যতক্ষণ না বাস্তবায়ন হবে। কোন আইনে ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ আপনি আমাদের বাংলাদেশে কোরআনের আইন ব্যবস্থা করে দেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ