Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অপ্রতিরোধ ডাকাতি-ছিনতাই

| প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা যাত্রী সাধারণ, এমন কি থানা-পুলিশের কাছেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন নতুন কৌশলে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গত ২২ অক্টোবর নৌবাহিনীর একজন ক্যাপটেন নিজে গাড়ি চালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন। পথে মিরসরাইয়ের ছোট কমলদহ এলাকায় এলে তার গাড়ি লক্ষ্য করে একটি লোহার রড ছুড়ে মারা হয়। বিকট শব্দ শুনে গাড়ি থামালে মুহূর্তে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরে এবং কিল-ঘুষি মেরে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা, তিনটি মুঠোফোন, লাগেজ ও হাতঘড়ি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। গত ২৩ অক্টোবর বারইয়ার হাট পৌরবাজারের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুই লাখ টাকা তুলে বাসে করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পথে কোনাপাহাড় এলাকায় এলে একটি মাইক্রোবাস তার বাসটির গতিরোধ করে। অতঃপর র‌্যাবের পরিচয়ধারী দুই ব্যক্তি তাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তোলে। পরে তার সঙ্গে থাকা দুই লাখ টাকা, দুটো মুঠোফোন নিয়ে হাত-পা বেঁধে কুমিল্লার চিওড়া এলাকায় ফেলে যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাস কোনোটাই যে নিরাপদ নয়, এ দুটি ঘটনা তার প্রমাণ বহন করে। ডাকাতির ভিন্ন ভিন্ন কৌশলও এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানায় গত দেড় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও ডাকাতি চেষ্টার ৮টি মামলা হয়েছে। লাগাতার এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে দুই থানার পক্ষ থেকে যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে। বার্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা গাড়ি বা গাড়ির মূল্যবান কোনো যন্ত্র চালকদের গাড়ি থামিয়ে তা নিতে বারন করা হয়েছে এবং অনিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামাতে না করা হয়েছে। এছাড়া রাত্রিবেলায় ভ্রমণ না করতে, অপরিচিত ব্যক্তির মাইক্রোবাস বা গাড়িতে না উঠতে এবং অপরিচিত লোকের দেওয়া খাবার না খেতে বলা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, এই সতর্কবার্তা থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা মোটেই নতুন নয়। এই দীর্ঘ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় নিয়মিতই ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কখনো কমে, কখনো বাড়ে। তবে কখনই ডাকাতি-ছিনতাই মুক্ত হয় না। হঠাৎ মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ এলাকায় ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, তিন মাস আগে পুলিশের তল্লাশিচৌকি তুলে নেয়া, ডাকাত-ছিনতাইকারীদের জামিনে বের হয়ে আসা এবং ভোররাতে বৃষ্টি ও কুয়াসাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী ডাকাতি বা ছিনতাই করাই নয় বরং, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আমদানি-রফতানির মালামাল ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অতি সাধারণ ঘটনা। কখনো কখনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান পর্যন্ত ছিনতাই হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা এনিয়ে বিভিন্ন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিশ্চিত নিরাপত্তা দাবি করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের দাবি মোতাবেক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনিরাপত্তার সঙ্গী হয়ে আছে যানজট। ৩০-৪০ এমনকি ৭০-৮০ কিলোমিটার যানজটের খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। চার লেন করার পরও যানজট নিরসিত হয়নি। নানা উপলক্ষে প্রায়ই যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে যানবাহন ও যাত্রীদের। ক’দিন আগেও যানজটে নাকাল হয়েছে যাত্রীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে বলার কিছু নেই। রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াতে এটাই প্রধান সড়ক। দেশের আমদানি-রফতানির ৭৫ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। আর এই মহাসড়ক দিয়েই অধিকাংশ পণ্য আনা-নেয়া করা হয়ে থাকে। শুধু পণ্য ও পণ্যবাহী যানবাহনই নয় বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস এবং যাত্রী চলাচল করে এই মহাসড়ক দিয়ে। এহেন একটি গুরুত্ববহ ও প্রয়োজনীয় মহাসড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত হতে হবে, তেমনি হতে হবে মসৃণ ও যাতায়াত উপযোগী। এই একান্ত প্রত্যাশা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে অবস্থান করছি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা আবশ্যক, শুধু এই মহাসড়কই নয়, অন্যান্য মহাসড়কেও অনিরাপত্তা যেমন প্রধান সমস্যা, তেমনি যানজটও। ডাকাতি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। পাল্লা দিয়ে চলছে যানজট ও অচলাবস্থা। মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তার যে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, এটা তারই সাক্ষ্য দেয়। মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, সহজ যাতায়াত সম্ভবযোগ্য হবে না। এদিকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দেবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমরা আশা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন