মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
২০১৪ সালে নিজেকে ‘খলিফা’ হিসাবে ঘোষণা করেছিল আইএস-এর প্রধান বাগদাদি। সেই সময় থেকেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল সে। গত পাঁচ বছর ধরে তার অনুসন্ধান করছে মার্কিন বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে সাফল্য পেল তারা। লাগাতার অভিযানে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল আইএস। ক্রমশ জায়গা বদলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল বাগদাদিও। আর তাকে মরিয়া হয়ে খুঁজছিল মার্কিন বাহিনী।
বেশ কয়েকদিন ধরেই তার গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত খবরটা আসে ইরাক ও সিরিয়া জুড়ে থাকা কুর্দ বাহিনী থেকেই। বৃহস্পতিবার মার্কিন গোয়েন্দারা খবর পান বাগদাদিকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিবে পাওয়ার ‘প্রবল সম্ভাবনা’ রয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে মার্কিন প্রশাসন। শনিবার সকালে ইদলিবে অভিযান চালানোর মতো ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ পান মার্কিন গোয়েন্দারা। জানা যায়, ইদলিবের বারিশা এলাকায় আইএসের ওই ঘাঁটিতে সপরিবারে রয়েছে বাগদাদি। তার সঙ্গে রয়েছে এক দল আইএস জঙ্গিও।
মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে যে এমন ‘ঝড়ের প্রস্তুতি’ চলছে তা কোনওভাবেই আগাম টের পাওয়া যায়নি। বাগদাদির বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি যখন চলছে তখন, শুক্রবার রাতে মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাই জেরার্ড কুশনেরের দশম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার সকালে ভার্জিনিয়ায় গলফ খেলতেও যান তিনি। সেখান থেকে, বিকেলের দিকে সরাসরি ওয়ার রুমে ঢুকে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গোটা ওয়াশিংটনবাসী তখন ন্যাশনাল পার্কে ওয়াশিংটনের সঙ্গে হিউস্টনের টানটান বেসবল ম্যাচে মজে ছিল।
ওয়াশিংটন থেকে ছয় হাজার মাইল দূরে তখন বাগদাদির বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন সেনা। সেই বাহিনীতে যোগ দেয় আমেরিকার বিখ্যাত ডেল্টা ফোর্সও। পেন্টাগনের সবুজ সঙ্কেত পেতেই রোববার ভোর রাতে পশ্চিম ইরাকের আল আসাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ান শুরু করে আটটি হেলিকপ্টার। তার মধ্যে ছিল মার্কিন সিএইচ-৪৭ কপ্টারও। এই অভিযানের সময় সিরিয়া ও রুশ আকাশসীমার উপর দিয়ে যেতে হয়েছে মার্কিন কপ্টারগুলিকে। তবে সেই আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতিও পেয়েছেন তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ঘণ্টা খানেকের অভিযানেই শেষ হয়ে যায় গোটা দুনিয়ার ত্রাস, আইএস জঙ্গি প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি। মার্কিন বাহিনীর হামলার তীব্রতার সামনে ভেঙে পড়ে আইএস প্রধানের প্রতিরোধ। তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাগদাদির দেহরক্ষীদের মধ্যে। আক্রমণের তীব্রতা কেমন ছিল তা উঠে এসেছে বারিশা এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়। পরিচয় জানাতে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলাম গুলিবৃষ্টি চলছে। তাই আমরা ভিতরে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম।’ এর পরেই বাগদাদির ডেরায় একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। বুবি ট্র্যাপ থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় বাগদাদির আস্তানার একের পর দরজা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দেন মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা। একে একে ওই ঘঁটিতে থাকা আইএস জঙ্গি এবং বাগদাদির দেহরক্ষীরাও মারা পড়ে। অনেককে গ্রেফতারও করে মার্কিন বাহিনী।
শেষ পর্যন্ত পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে বাগদাদি। কম্পাউন্ডে থাকা লুকনো সুড়ঙ্গ পথ ধরে পালানোর চেষ্টা করে সে। তিন সন্তানকেও টেনে হিঁচড়ে সঙ্গে নিয়ে যায় আইএস প্রধান। সর্পিল সেই সুড়ঙ্গ পথে তার পিছনে ধাওয়া করে মার্কিন সেনাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, গোটা রাস্তাটাই কাতরাচ্ছিল বাগদাদি। সে মাঝে মাঝে চিৎকার করছিল এবং কাঁদছিলও। কিন্তু, এক সময় সুড়ঙ্গও শেষ হয়ে যায়। সে সময় সুইসাইড ভেস্ট (বোমা বাঁধা পোশাক)-এর মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায় সে। মুহূর্তেই বাগদাদি ও তার সন্তানদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, শেষ পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বাগদাদির সামান্য দেহাংশ খুঁজে পায় মার্কিন বাহিনী। কিন্তু, এর পরেও বাগদাদির মৃত্যু নিয়ে সন্দিহান ছিল মার্কিন বাহিনী। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দেহাংশের ডিএনএ পরীক্ষা করে বাগদাদির মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন তারা। জানা গিয়েছে, গোটা অপারেশন শেষ হওয়ার পর অন্তত দু’ঘণ্টা বাগদাদির গুপ্ত আস্তানায় তল্লাশি চালায় মার্কিন বাহিনী। সেখান থেকে আইএস-এর প্রচুর দলিল উদ্ধার হয়েছে। তাতে জঙ্গি সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কিত নানা নথিপত্র রয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি। বাগদাদির ওই আস্তানা থেকে কয়েক জন শিশুকেও উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বাহিনী ফিরে আসতেই তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়। মার্কিন জেট বাহিনী বাগদাদির ওই গুপ্ত ঘাঁটি লক্ষ করে ছটি রকেট বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে গোটা এলাকাই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, বাগদাদির দেহ প্রথা মেনেই সমাধি দেয়া হবে, ঠিক যেমন ভাবে সলিল সমাধি দেওয়া হয়েছিল আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের দেহ।
ওয়ার রুমে বসে বাগদাদির ঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনীর অভিযানের দৃশ্য লাইভ দেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাতে ‘উচ্ছ্বসিত’ তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কেমন তা-ও জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কথায়, ‘মনে হচ্ছিল যেন সিনেমা দেখছি।’ যে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ওই অভিযান চালিয়েছে আমেরিকা, সেই প্রযুক্তির প্রশংসা করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।