পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দ্রুত বধর্নশীল শহরের তালিকায় বিশ্বের মধ্যে ঢাকা এখন তৃতীয়। এশিয়ার ১৫টি এবং আফ্রিকার ৫টি দ্রুত বধর্নশীল শহরের মধ্যে ঢাকার এই অবস্থান। প্রথমে রয়েছে ভারতের দিল্লী, দ্বিতীয় চীনের সাংহাই, তারপর ঢাকা। জেনারেশন প্রজেক্ট নামে একটি গবেষণা সংস্থা সম্প্রতি এ তালিকা প্রকাশ করেছে। শহরে নতুনভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রতি ঘন্টায় নতুন করে মানুষের আগমনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কাজের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। শুধু এ কারণেই নয়, একটু উন্নত জীবনযাপনের আশায় তারা শহরমুখী হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সবকিছুই তৈরি হচ্ছে শহরকে কেন্দ্র করে। এসব কারণেই মানুষ শহরের দিকে ছুটে আসছে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকাই হয়ে উঠেছে মানুষের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির কেন্দ্রস্থল। ফলে প্রতিনিয়ত সারাদেশের মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। শ্রমজীবী, নদী ভাঙনের শিকার, উন্নত শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার প্রত্যাশী থেকে শুরু করে সবশ্রেণীর মানুষের আগমন ঘটছে। এতে জনভারে শহরটি যেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি এর সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল হয়ে গেছে। ক্রমেই এটি পরিণত হচ্ছে বিশ্বের অবাসযোগ্য নগরীতে। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় এখন পর্যন্ত বের করা যায়নি।
ঢাকা শুধু দ্রুত বর্ধনশীল নগরী নয়, বিশ্বের জনবহুল, অসভ্য, দূষিত নগীরর তালিকায়ও শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গবেষণা সংস্থাগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিগত অর্ধ যুগে যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর প্রতিবেদনে ঢাকা বেশ কয়েকবার বসবাসের অযোগ্য, অসভ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং তাই হয়ে আছে। বায়ূ দূষণের দিক থেকেও এর অবস্থান শীর্ষে। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতি শহরের মধ্যে এর অবস্থান চতুর্থ। এর জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। এত কম আয়তনে এত অধিক মানুষের বসবাস বিশ্বে আর কোনো নগরীতে নেই বললেই চলে। ঢাকার নিত্য সমস্যা যানজটের কারণে বছরে ক্ষতি হয় ১ লাখ কোটি টাকা। উৎপাদন খাত, স্বাস্থ্যগত ও দুর্ঘটনার ক্ষতি হিসাব করলে এর পরিমাণ হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এক হিসাবে দেখানো হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে কর্মজীবী মানুষের যে পরিমাণ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বসবাসের জন্য ঢাকা কতটা অসহনীয় ও দুর্ভোগের তা এই পরিসংখ্যান থেকে কিছুটা হলেও বোঝা যায়। শুধু তাই নয়, এর সমস্যার কোনো অন্ত নেই। একটি শহরে কী ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকে, তা এ শহরের মানুষের অজানাই রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এ শহরে সহজে ও স্বচ্ছন্দে যে মানুষ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাবে তার ন্যূনতম কোনো সুযোগ নেই। এতসব সমস্যা নিয়েই এর আকার ও আয়তন বাড়ছে। তাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার কোনো বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে বাড়িয়ে চলেছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেসব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় নেই। তারা তাদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। অন্তবিহীন সমস্যার এই নগরীর প্রতিই সারাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষেরও ধারণা কোনো রকমে ঢাকা পৌঁছতে পারলে আর চিন্তা নেই। জীবন-জীবিকার একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এই আশা নিয়ে তারা ঢাকার দিকে ছুটছে। ঢাকা এসেই হয় টুকরি নিয়ে ফুটপাতে বসে পড়ছে, নয়তো রিকশা নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। শুধু শ্রমজীবী এসব মানুষই নয়, অন্যান্য পেশার মানুষও ঢাকামুখী হচ্ছে। একবার ঢাকা আসতে পারলে তারা আর ছেড়ে যেতে চায় না। ফলে দিন দিন ঢাকা জনবহুল হয়ে উঠছে। প্রতিদিন যদি গড়ে আড়াই হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করে থেকে যায় এবং এর যেটুকু নাগরিক সুবিধা রয়েছে, তাতে ভাগ বসায় তবে এর পরিস্থিতি কতটা নাজুক হতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। এই জনসংখ্যার ভার সামাল দিতে অনিবার্যভাবেই এর আয়তনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঢাকা আর নিজস্ব আয়তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আশপাশের জেলাগুলোও এর আয়তনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়বে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। এখন আর মানুষ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জকে ঢাকা থেকে আলাদা মনে করে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীর আয়তনের কি কোনো সীমা থাকবে না? যদি থাকে, তবে তা কতুটুকু হবে?
সময়ের সাথে সাথে যে কোনো নগরীরই পরিবর্তন সাধিত হয়। তবে তা কী হারে এবং কতটা সুষমভাবে পবির্তন ও বর্ধিত হবে তার পরিকল্পনা অবশ্যই থাকা জরুরী। ঢাকার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা ঢাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। ফলে পুরো দেশের চাপ এর উপর এসে পড়ছে। ঢাকামুখী হয়ে পড়ছে মানুষ। অত্যধিক জনসংখ্যার কারণে এর সবকিছুই এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে রাজধানীকে ভারমুক্ত করতে হলে এর বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। প্রশাসনিক থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে যদি মানুষের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা যায়, তবে অনেক মানুষই আর ঢাকামুখী হবে না। ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেমন নিয়ন্ত্রিত হবে, তেমনি এর নাগরিক সেবার ওপর থেকে চাপ কমে জীবনযাপনও সহজ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।