Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে গত এক দশকের মধ্যে এবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সূচকে বেশ এগিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস ২০২০ প্রতিবেদনে এ সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। গত বছর ছিল ১৭৬তম। এ হিসেবে বাংলাদেশ ৮ ধাপ এগিয়েছে। তবে, গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগোলেও সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে অগ্রগতিতে ৭ নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের উপরে রয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশও ভাল এগিয়েছে। ভারত ১৪ ধাপ এগিয়ে ৬৩তম, পাকিস্তান ২৮ ধাপ এগিয়ে ১০৮তম, নেপাল ১৬ ধাপ এগিয়ে ৯৪তম এবং শ্রীলঙ্কা এক ধাপ এগিয়ে ৯৯ তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ব্যবসা সহজীকরণে যে ২০টি দেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। বাংলাদেশের এ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে মূলত তিনটি কারণে। এগুলো হচ্ছে, ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ ও ঋণপ্রাপ্তি প্রক্রিয়া আগের চেয়ে সহজ করা। উল্লেখ্য, ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংক তার ডুয়িং বিজনেস র‌্যাঙ্কিং করে থাকে। এগুলো হলো, ব্যবসা শুরুর অনুমোদন, ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ, ভূমি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ এসব সূচকের পাঁচটিতে এগিয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়া, ভবন বা অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ সংযোগ, ঋণপ্রাপ্তি এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা।

ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিঃসন্দেহে আনন্দের। অন্তত অবনমনের ধারাকে কাটিয়ে ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। গত বছর মাত্র এক ধাপ এগিয়েছিল। এ বছর এগিয়েছে ৮ ধাপ। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য সার্কভুক্ত দেশগুলো বিগত এক দশকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকে বেশি দ্রুত এগিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের পেছনে থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার মতো। বাংলাদেশ এখন খরগোশের গতিতে এগুচ্ছে। এক্ষেত্রে গতি আরও বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব কিছু ছিল না, যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতিকে পেছনে ফেলা যেত। মূলত এ দুটি সমস্যাই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানতম বাধা হয়ে আছে। বাংলাদেশে সম্পদ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে গড়ে ২৭১ দিন সময় লাগে। এই সূচকে বৈশ্বিক গড় হচ্ছে ৪৭ দিন। এ হিসেবে প্রায় ৬ গুণ বেশি সময় লাগে। যে কোনো বিষয় আদালতে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে গড়ে ১৪৪২ দিন, শিল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ে যা তিন গুণ বেশি। সরকার এসব বাধা অতিক্রমে নানা ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার পরিবেশ উন্নতি করতে সরকার ২০১৬ সালে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এর দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। লক্ষ্য ঠিক করা হয় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম স্থানে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যে, ব্যবসা শুরু করার বেশ কয়েকটি ধাপকে সহজ করা হয়। আশার কথা, তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী বছর বাংলাদেশের অবস্থান ডাবল ডিজিট বা প্রথম ৯৯ দেশের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সহজ করার জন্য দুইজন প্রথিতযশা ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত করেছে। এদের একজন সালমান এফ রহমান এবং অন্যজন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ দুইজন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অর্থনীতির অনেক কিছুতেই বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, জাপান, চীন এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের সউদী আরবসহ অন্য দেশগুলো বাংলাদেশে এখন ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। সত্যিকার অর্থে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে প্রমাণ করতে হলে আরও অনেক দূর যেতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আর্বিভূত হতে হবে। বিশেষ করে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে পেছনে ফেলতে পারলে তা হবে এক গোল্ডেন মাইলফলক। আশা করা যায়, সরকার এ অগ্রগতি ধরে রাখবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে আরও উদ্যোগী হবে। ইতোমধ্যে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম অন্তরায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়া এবং প্রশাসনিক দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি ও অর্থের অপচয়সহ নানা দিক প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। এসবই যে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক তা বোধ করি নতুন করে বলার কিছু নেই।
ডুয়িং বিজনেস সূচকে ইতিবাচক অগ্রগতি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। উন্নয়নের মহাসড়কে সবেমাত্র যাত্রা শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করব। এক্ষেত্রে আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তা মোকাবেলায় এবং অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার আগে অবাধ বিনিয়োগের পরিবেশ সহজ ও সরল করতে হবে। বিশ্বের কাছে এই বার্তা দিতে হবে, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট স্থান। নিজস্ব অবস্থানে বাংলাদেশের অবস্থানের অগ্রগতি হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অনেক পিছিয়ে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল কীভাবে এগুচ্ছে, এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের এগুনোর পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসকল বাধা রয়েছে তা দ্রুত দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং একটি সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেম গড়ে তুলে তা দ্রুত কার্যকর করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন