Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হস্তশিল্পের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে হবে

নাজমুল হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মানব সভ্যতার ইতিহাস ও ক্রমবিবর্তনের ধারার সঙ্গে মৃৎশিল্পের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের ধারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য শত-সহস্ত্র বছর আগের। ধারণা করা হয় মধ্যপ্রাচ্যেই সর্বপ্রথম মাটির পাত্র তৈরি হয়। মধ্যপ্রাচ্যেই সবচেয়ে উন্নতমানের অলংকৃত মৃৎপাত্র তৈরি হতো দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের সুসা অঞ্চলে। মিশর, মেসোপটেমিয়া ছাড়াও সিন্ধু তীরবর্তী এলাকা, চীন ও এশিয়া মাইনরের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন মৃৎশিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের মৃৎশিল্পের ইতিহাস কমপক্ষে পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন। আর বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের ইতিহাসও সমৃদ্ধ, বহু প্রাচীন। অথচ দিনের পর দিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প, হস্তশিল্প ও মৃৎশিল্প। এক সময় এই শিল্পই ছিল অনেকের বেঁচে থাকার সম্বল, রুটি-রোজগারের অবলম্বন। পরিবেশ বান্ধব এই সব পণ্য যেমন সস্তা ছিল, তেমনি ছিল সৌন্দর্যবর্ধক। একটা সময় ছিল যখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মেলা, পূজা-পার্বণ ইত্যাদিতে গেলেই চোখে পড়তো বাহারি ও চোখ ধাঁধানো নানা রকম হস্তশিল্পের উপকরণ। যেমন- মাটির কলসি, সানকি, সরা বা ঢাকনা, ছোট-বড় তাগার, হুক্কা, বিভিন্ন রকম পুতুল, দেব-দেবীর মূর্তি, গার্হস্থ্য দ্রব্যাদি, মাটির ভাস্কর্য, টালি, শখের হাড়ি, ফুলদানি ইত্যাদি। আজ আর আগের মত মেলা, পূজা-পার্বণে এসব মাটির তৈরি জিনিস তেমনটা চোখে পড়ে না। গুঁটি কয়েক বিক্রেতা দেখা যায় এসব পণ্য নিয়ে বসতে। আর বড় বড় শহরের কিছু অভিজাত হ্যান্ডিক্রাফটসের শো-রুমেই কেবল এই সব পণ্য কিছুটা চোখে পড়ে। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই শিল্প আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষ আজ ঝুঁকে পড়েছে এর বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিক ও এলুমিনিয়ামের তৈরি পরিবেশ বিধ্বংসী পণ্যের দিকে। নিত্য ব্যবহার্য জিনিস, ঘরের নানা রকম আসবাব পত্র ব্যবহারেও মানুষ এখন এক রকম বাধ্য হয়েই প্লাস্টিক, স্টিল ও এলুমিনিয়ামের তৈরি পণ্য ব্যবহার করছে। ফলে ন্যায্য দাম না পাওয়া, সময়মত কাঁচামাল না পাওয়া, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা, স্বল্প সুদের পরিবর্তে চড়া সুদে কঠিন শর্তে ঋণ ইত্যাদি কারণে ঐতিহ্যবাহী এইসব শিল্পের সাথে জড়িতরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকেই আজ বেকার ও এই শিল্প আজ এক রকম বিলুপ্তির পথে। আর আমরা পরিবেশকেও ঠেলে দিচ্ছি ধংসের মুখে।

হস্তশিল্প রপ্তানিতে ভালো সম্ভাবনা থাকলেও দ্রুত এগুতে পারছে না দেশ। ২০১০ সালের পর থেকে গত ৫-৬ বছরে এ খাতের রপ্তানি আয় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এখনো আশানুরূপ মাইলফলক স্পর্শ করতে পারেনি। সারা বিশ্বে হস্তশিল্পের আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি বাজার রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, অনেকটা অগোছালোভাবেই সারাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো প্রদর্শন ব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে এসব তৈরি পণ্যের অধিকাংশই পৌঁছায় না। এছাড়া পণ্যের নকশা, কারুশিল্পীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য নেই তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে শন, বাঁশ-বেতের চাষ কমে যাওয়ায় কাঁচামালের সংকট প্রকট হচ্ছে। জানা যায়, হস্তশিল্পের আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন, ফিলিফাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত যাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব নকশা উন্নয়ন ও গবেষণা কেন্দ্র আছে। সেখানে বৈশ্বিক গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা হয়। আমাদের দেশে হস্তশিল্পের মধ্যে বিভিন্ন রকম বস্ত্র যেমন- শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ধুতি, নকশীকাঁথা, মশারি, তোয়ালে, উপজাতীয় বস্ত্র, মসলিন, জামদানী, মলমল টরোয়ো শাড়ি, পাবনার শাড়ি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, কাতান, রেশমবস্ত্র, খদ্দর বস্ত্র ইত্যাদি তৈরি হয়। এছাড়াও হাতপাখা, মোড়া, সোফাসেট, টেবিলম্যাট, ওয়ালম্যাট, ট্রে, ফুলদানি, শীতলপাটি, ছাইদানি ইত্যাদি তৈরি হয়। এগুলোর অনেক পণ্যের উপরেই আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি, রূপ, এবং সৌন্দর্যকে কারুকাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় যেগুলোর দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের ভিতরে রয়েছে কারুপণ্য রংপুর, ঢাকা ট্রেড, আস্ক হ্যান্ডিক্রাফটস, কুমুদিনী, আড়ং, নিপুন ক্রাফটস, ক্রিয়েশন্স সান ট্রেডসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যারা হস্তজাত পণ্য রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফট) তথ্যানুযায়ী, শতরঞ্জী, পাটের তৈরি থলে, পাপোশ, টেরাকোটা, বাহারি নকশীকাঁথা, বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন সামগ্রী, ঝুড়ি, বেল্ট, চামড়ার তৈরি মুদ্রার বাক্স বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছেন এসব উদ্যোক্তা। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানেরও আন্তর্জাতিক বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সক্ষমতা থাকলেও বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এগুতে পারছে না বাংলাদেশ।

তাই এই সব শিল্পকে বাঁচাতে হলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাক্সিক্ষত মাইলফলক ছোঁয়া যাবে। সে জন্য স্থানীয়ভাবে হস্তশিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বল্প সুদে ঋণ, সরকারিভাবে খাস জমি বরাদ্দ এবং হস্তশিল্প গবেষণা ও ডিজাইন উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। শিল্পে আবারও প্রাণ ফিরে আসবে। পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার দখলের মাধ্যমে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
লেখক: প্রকৌশলী ও প্রাবন্ধিক

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->