Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রথমবারের মতো সচিত্র রায়, ৪ পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

ফেনী জেলা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম

আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়াও রায়ে চারজন পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় দেন। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ মামলার রায়ে সচিত্র ঘটনাপ্রবাহ ব্যবহার করা হয়।

রায়ে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় ১৬ আসামির অংশগ্রহণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হলো।

মামলার ৮০৮ পৃষ্ঠার রায়ে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

মামলায় পুলিশের অবহেলার অভিযোগে ১৩ মে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করা হয়। থানায় হেনস্তা হওয়ার নুসরাতের ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর ৮ মে সোনাগাজী থানা পুলিশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেয়াজ্জেমসহ পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শককে (এসআই) বহিষ্কার করা হয় ৮ মে। এরপর তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ১৬ জুন তাকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনা হয়। এগুলো হলো- ১. মামলার কালক্ষেপণ, ২. এজহার নিয়ে কূটচাল, ৩. গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ, ৪. নুসরাতকে থানায় জবানবন্দির নামে ওসির হেনস্তা, ৫. আইনি বহির্ভূত জিজ্ঞাসাবাদ, ৬. প্রথমে অজ্ঞাত মামলা, পরে ৮ জনের নামোল্লেখ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।



 

Show all comments
  • Mir Mosharof Hossain ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ২:২৭ পিএম says : 0
    হত্যামামলা গাফেলতির জন্য এসপি জাহাংগীর বেকছুরই রয়ে গেল!
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ২:৫৫ পিএম says : 0
    প্রেসিডেন্ট যদি বলেন, " এ মামলার কোন অপরাধীকে আমি প্রাণ ভিক্ষা দেব না।" তবে পুরো শান্তি পেতাম।
    Total Reply(0) Reply
  • sats1971 ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৩৫ পিএম says : 0
    thanks to justice
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Sharafat Hossain ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৪৮ পিএম says : 0
    Nice
    Total Reply(0) Reply
  • Yourchoice51 ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:২৬ পিএম says : 0
    ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার অর্থ হলো এ দুজন ছাড়া পেয়ে গেলো। এ দুজনের ফাঁসি কিংবা অন্তত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হয়ে উচিত ছিল। এদের সহযোগিতা না পেলে এতগুলো লোক এই জঘন্য কাজে এগুতে পারতো না। এদেশের সর্বত্র জঘন্য অপরাধী সৃষ্টির একটি মূল উপাদান হলো জঘন্য ব্যক্তিদের সাথে তথাকথিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষিদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ; এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ডজন-ডজন লোককে ফাঁসি দিয়েও জঘন্য অপরাধ কমানো যাবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নুসরাত হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ