পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইলিশ প্রজনন সময়কে সামনে রেখে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩ সপ্তাহের জন্য বঙ্গোপসাগর ও উপকুলীয় নদী মোহনায় বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও বাংলাদেশের পানিসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করা ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। অপেক্ষাকৃত বড় ট্রলার, উন্নত কারেন্টজাল, ওয়াকিটকি এবং শক্তিশালী দূরবীন নিয়ে তারা বাংলাদেশের সীমান্তে মাছ ধরতে আসে। বাংলাদেশের কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর গতিবিধির উপর লক্ষ্য রেখে নিরাপদ দূরত্বে থেকে তারা দিব্যি মাছ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেরা কখনো কখনো এসব ভারতীয় জেলেদের হামলা ও লুন্ঠনের শিকার হয়। সাগরে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় জেলেরা বিপদে পড়লেও অন্য জেলে নৌকা বা কোস্টগার্ডের সহায়তা চাইতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে ভারতীয় জেলেদের হাতে ওয়াকিটকি থাকায় তারা ভারতীয় সীমান্তরক্ষি বাহিনীর সাথে যোগাযোগ রেখেই বাংলাদেশ সীমান্তে মাছ ধরতে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ভারতীয় জেলেরা কোস্টগার্ড বা বিজিবি’র হাতে আটক হওয়ার সাথে সাথেই বিএসএফ’র তৎপরতা চোখে পড়ে। সম্প্রতি বিজিবি’র হাতে আটক ভারতীয় জেলেদের উদ্ধার করতে আসা বিএসএফ সদস্যদের সাথে গোলাগুলিতে বিএসএফ সদস্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রজনন সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা এবং জাটকা শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বছরে অন্তত দুইবার জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখেন। এ সময়ে জেলেদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এর সুফলও মিলেছে হাতে হাতে। জাটকা নিধনের কারণে বড় ইলিশের উৎপাদন যখন দ্রæত কমছিল, তখন সরকারের সময়োপযোগি সিদ্ধান্তে গত দুই দশকে দেশে ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। ২০০০ সালের দিকে দেশে ইলিশ উৎপাদন বছরে ২ লাখ টনের নিচে নেমে যাওয়ার পর ডিমওয়ালা ইলিশ এবং জাটকা নিধন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন ইলিশের উৎপাদন ৪লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মৎস্য ধরা বন্ধ করতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের অভিযানে অনেক জেলে আটক ও শাস্তির মুখোমুখি হয়। তবে নিষিদ্ধ সময়ে বাংলাদেশি জেলেদের অনুপস্থিতিতে ভারতীয় জেলেদের বেপরোয়া মৎস্য শিকার সরকারের নিষেধাজ্ঞার সাফল্যকে অনেকটা ¤øান করে দিচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর থেকে দেশের নৌসীমায় ইলিশমাছ ধরা বন্ধ থাকলেও এ সময়ে ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ও মাছ শিকার অনেক বেড়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল দলের হাতে বেশ কিছু ভারতীয় জেলে নৌকাসহ আটক হওয়ার পরও তাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় জেলেরা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের পানিসীমায় মাছ ধরলেও বাংলাদেশের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল ছিল অপ্রতুল। মা ইলিশ ও জাটকা নিধনের কারণে ইলিশের সম্ভাব্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলেও প্রজনন সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় জেলেদের বেপরোয়া মৎস্য শিকার সে সম্ভাবনাকে অনেকটা নস্যাৎ করে দিচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষি ও কোস্টগার্ড এ সময়ে তাদের টহল ও নজরদারি বাড়ানোর ফলে প্রায়শ: ভারতীয় জেলেরা আটক হচ্ছে। গত জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চারমাসে অর্ধ সহ¯্রাধিক ভারতীয় জেলে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বিএসএফ’র ফ্লাগ মিটিংয়ের সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়া পেলেও সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে আটক অনেকে অনুপ্রবেশসহ নানা অভিযোগে মামলার সম্মুখীন হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছে। আটক জেলেদের উদ্ধার করতে এসে বিএসএফ জোয়ানরা বিজিবি’র সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া এবং বিজিবির গুলিতে একজন বিএসএফ সদস্য নিহত এবং আরেকজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও অতি সাম্প্রতিক। আমাদের জন্য বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় বøু ইকোনমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে আমাদের ইলিশসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ। দেশীয় জেলেরা যখন সরকারী নিষেধাজ্ঞা মেনে কর্মহীন সময় পার করছেন, তখন ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমার ৫০-৬০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে মাছ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্যিক স্বার্থ থাকলেও অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ। অন্যদিকে বিজিবি ও কোস্টগার্ড অনুপ্রবেশকারী ও জলদস্যু ভারতীয়দের প্রতি নমনীয়তার সুযোগ নিয়ে তারা শত শত নৌকা নিয়ে মাছ চুরি অব্যাহত রেখেছে। তাদের এহেন তৎপরতা বন্ধে কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশীয় জেলেদের হাতে ওয়াকিটকিসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণেরও কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।