পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) কে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সাথে তৌহিদি জনতার সংঘর্ষে ৪ জন ও পুলিশসহ প্রায় দুই শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল ৬ দফা দাবিতে ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে সমাবেশের ডাক দেয় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টায় সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভোলার পুলিশ সুপার ও বোরহানউদ্দিন থানার ওসির অপসারণসহ ৬ দফা দাবিতে ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলন শেষে ভোলা শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।
এদিকে, বোরহানউদ্দিনে গতকালও পরিস্থিতি থমথমে ছিল। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে জেলার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান বাস মালিক সমিতির সভাপতি আকতার হোসেন। তবে বিকেলের দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিকি গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ভোলায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সকল সভা সমাবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে বোরহানউদ্দিনে ৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে। আরো ৪ প্লাটুন বিজিবি আসতেছে। এদিকে সকাল থেকেই বিজিবি, র্যাব, পুলিশ এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। দোকান পাট অনেকাংশে বন্ধ রয়েছে।
মুসলিম ঐক্য পরিষদ সদস্য মাওলানা তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু প্রশাসনের আমাদের অনুমতি না দেয়া দুঃখজনক। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কোন সভা সমাবেশ না করতে দেয়া অগণতান্ত্রিক আচরণ। সরকারি স্কুল মাঠে ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ঐক্য পরিষদের কোন লোকজন দেখা যায়নি। ফাঁকা মাঠে পুলিশ, র্যাব, ডিবির উপস্থিতি দেখা গেছে।
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) কে কট‚ক্তি করা বিপ্লব চন্দ্র শুভর ফাসির দাবি, প্রতিবাদী মুসলিম জনতার উপর পুলিশ কর্তৃক বর্বরোচিত হামলায় চার জন শহীদ হওয়ার ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। সকাল ১১.৪০টায় ভোলা জেলা প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্য রাখেন পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা মিজানুর রহমান, যুগ্ন আহ্বায়ক মাওলানা তৈয়বুর রহমান, মাওলানা বশির উদ্দিন, মাওলানা তাজ উদ্দিন ফারুকি প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, এসপি ও ওসির অপসারণসহ তাদের ৬ দফা দাবি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুরণের সার্বিক ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে না করা হলে তারা আরো কঠিন আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। তারা নতুন করে আরো কিছু কর্মসূচির ঘোষণা দেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বিকেলে প্রতি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল, জেলা শহরে মানববন্ধন, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে মসজিদে মসজিদে দোয়া করা।
ঘটনার সঠিক তথ্য উৎঘাটন করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তারা। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও প্রশাসনকে সঠিক ভ‚মিকা পালনের আহবান জানান। তারা বলেন, পুলিশ গুলি না করে কাদুনে গ্যাস বা টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা গুলি করে চারটা তাজা প্রাণ কেড়ে নিল। এর দায়ভার কে নেবে? একজন প্রকৃত মুসলমান কখনও কোন ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মোহাম্মদ (স.) এর নামে কট‚ক্তি করতে পারেনা। সঠিক মুসলমান কখনও কোন সন্ত্রাসী বা অন্যায় কাজের সাথে জড়িত হতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, একদল সুযোগ সন্ধানী লোক থাকতে পারে হিন্দু ভাইদের উপর বা তাদের ধর্মীয় উপাসানালয়ে হামলা করে মুসলিমদের উপর দোষ চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে অন্যদিকে চাপানোর চেস্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের যাতে কোন রকম সমস্যা না হয় সেদিকে সকল মুসলিমদের খেয়াল রাখার কথা বলেন।
প্রেসক্লাবের সামনে শত শত মুসলিম জনতা সংবাদ সম্মেলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে যে ৬ দফা দাবি করা হয় সেগুলো হল, অনতিবিলম্বে ভোলা জেলা পুলিশ সুপার, বোরহানউদ্দিনের ওসি এবং তদন্ত সাপেক্ষে গুলির হুকুমদাতা ও গুলি বর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে, মহান আল্লাহ তায়ালা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও ইসলাম নিয়ে ব্যাঙ্গ এবং কট‚ক্তিকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে, মহানবী (স.) ও মহান আল্লাহ তায়ালা এবং ইসলাম নিয়ে ব্যাঙ্গ ও কট‚ক্তিকারী বিপ্লব চন্দ্র শুভকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দিতে হবে, বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সরকারি খরচে আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে এবং হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না।
এদিকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নিহতদের দু’জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। বাকি দুইজনের লাশ এখনও সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে বলে জানান ঐক্য পরিষদের নেতা তাজ উদ্দিন ফারুকি। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছেন।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কাউসার জানান, ফেসবুকে এ কট‚ক্তির ঘটনায় বিপ্লব চন্দ্র শুভ, মো. শাকিব ও লিমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাদের ভোলা কোর্টে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বোরহানউদ্দিন থানার এসআই আজিজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাত পাঁচ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সর্বশেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত বোরহানউদ্দিনে বিকেল থেকে কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। ভোলায় মোতায়েনকৃত বিজিবি, র্যাব, পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে। ভোলা শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিতে দেখা গেছে। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি ডিআইজিকে প্রধান করে অন্যটি ভোলা ডিডিএলজিকে প্রধান করে।
বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনায় একাধিক তদন্ত টিম কাজ করছে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া পুলিশ সুপার, ওসির অপসারণসহ ৬ দফা দাবির বিষয় বলেন, এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে তারা দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।
আত্মরক্ষার্থে ভোলায় গুলি চালিয়েছে পুলিশ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ কিংবা অন্য কারও দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও অবহেলা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি অবশ্য ওসি এবং এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের এক যুবকের হ্যাক করা ফেসবুক আইডি থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট’ দেয়াকে কেন্দ্র করে তারা ( তৌহিদি জনতা) সমাবেশ করে। একটা পর্যায়ে সমাবেশ শেষ তারা চলে গিয়েছিলেন। এই সমাবেশের ২০০ থেকে ৩০০ লোক এসে পুলিশ এবং ইউএনও যেখানে ছিলেন সে জায়গাটি এসে মারমুখি আচরণ শুরু করেন। একই সঙ্গে দরজা ভাঙা শুরু করেন। তখন ইউএনও গুলি বর্ষণ করতে বলেন। এটাও অবশ্য শোনা কথা। তবে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলেই বুঝা যাবে কে গুলি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনাটা ঘটার পর পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য ওপেন গুলি করে। সেই গুলিতে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহতসহ একজন পুলিশও আহত হন। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, ওই এলাকার সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিক ওখানে যান। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং যারা মৃত্যুবরণ করেন তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। এ বিষয়ে সরকার আরও ব্যবস্থা নিচ্ছে। যাতে করে তারা আর্থিক সহযোগিতা পায়। তারা (তৌহিদি জনতা) যে সব দাবি করছে তার ভিত্তিতে এক্ষেত্রে কেউ (ওসি এবং এসপি) যদি কর্তব্যে অবহেলা করে থাকে অবশ্যই তার বিচার হবে। তাকে সরিয়ে দেবো, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে বরিশাল ব্যুরো জানায়, ভোলায় পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত এ পর্যন্ত ৩১ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে। রোববার সন্ধ্যা থেকেই একের পর এক আহত গুলিবিদ্ধ মানুষকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে, ভোলায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে গতকাল বরিশালে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিএম কলেজ শাখা। মিছিলকারীরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে নগরীর কয়েকটি সড়কেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ইসলামী শাষনতন্ত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ ভোলায় নিরীহ তৌহিদি জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।