পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। কলড্রপ, মিউটকল ও ইন্টারনেটে ধীরগতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই সরকার দেশে ফাইভ-জি (পঞ্চম প্রজন্ম) মোবাইল ফোন সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার গত বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেছেন, ফাইভ-জি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জরুরি। ফাইভ-জি হলো একটি শিল্প বিপ্লবের মহাসড়ক। যথাসময়ে এ মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, এর আগের ফোর-জি, থ্রি-জি ইত্যাদির যথাযথ সেবা কি মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকরা পাচ্ছে? পাচ্ছে না। তার প্রমাণ বিটিআরসি ও অপারেটরদের কাছে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকদের হাজার হাজার অভিযোগ। ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীতেই ফোর-জি সেবা না পাওয়ার অভিযোগ আছে। জেলা-উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে ফোর-জি সেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতা গ্রাহকদের নেই বললেই চলে। ফোর-জির বদলে তারা টু-জি কিংবা থ্রি-জির সেবা পাচ্ছে। কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগের কোনো প্রতিকার বিটিআরসি কিংবা অপারেটররা করছেনা। বাংলাদেশ মুটোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অভিযোগ করেছেন, ফোর-জি চালুর সময় টেলিযোগাযোগের যে অবস্থা ছিল বর্তমানে তাও নেই। ফোর-জি চালুর ১৮ মাস পার হলেও সারাদেশে এখন পর্যন্ত ফোর-জি দূরে থাক, থ্রি-জি পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। বর্তমানে সেবার মান সর্বনিম্ন। আজো রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক ফোর-জি চালু করতে পারেনি। গ্রাহকদের ৯০ শতাংশ এখনো ফোর-জি সেবা গ্রহণই করেনি। তিনি জানিয়েছেন, ফাইভ-জির ডিভাইস দেশে পর্যাপ্ত নয়। দামও খুব বেশি। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা দুর্বল। এখন পর্যন্ত অপারেটরদের স্পেকট্রাম আছে ৩৫ মেগাহার্জ। অথচ ফাইভ-জিতে লাগবে প্রায় ১০০ মেগাহার্জ। এমতাবস্থায়, ফাইভ-জি চালু করা হলে তা হবে কাগজ-কলমে। গ্রাহকদের সাথে হবে প্রতারণা।
সর্বত্র ফোর-জি সেবাই যেখানে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, সেখানে ফাইভ-জি সেবা দেয়ার কথা উঠছে কেন? আমরা যতদূর জানি, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি আছে। নির্বাচনী ইশতেহারে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকলে তা পূরণ করার নৈতিক বাধ্যবাধকতা সরকারের থাকে। এবং এ নৈতিক বাধ্যবাধকতা তখনই কার্যকর করা সম্ভব যখন উপযুক্ত সামর্থ ও অনুকূল বাস্তবতা বিদ্যমান থাকে। আলোচ্য ক্ষেত্রে সেটা কি আছে? শুধু লোক দেখানোর জন্য বা ‘কৃতিত্বের’ তালিকা দীর্ঘ করার জন্য এটা করা হলে দেশের ও দেশের মানুষের কোনো উপকার হবে না। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফাইভ-জি সেবার যুগে প্রবেশ করেছে। এর সুফল সে সব দেশের গ্রাহক ও সমাজ লাভ করছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন ও অগ্রগতির একেকটি সোপান রচনা করে। তাই সব সময় নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়। আমরাও ফাইভ-জি সেবার সুফল পেতে চায়। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই প্রযুক্তির একটি বড় সেবা হলো আইওটি, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকে গ্রাহক হিসাবে বিবেচনা করা হবে। কাজেই আমাদের দেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর উদ্যেগকে গ্রাহকদের পক্ষ থেকেই সর্বাগ্রে স্বাগত জানানোর কথা। কিন্তুু গ্রাহকরা কিছুটা চিন্তিত ও কিছুটা শংকিত বোধ করছে কেন? তাদের চিন্তার কারণ, ফোর-জি সেবা এখনো দূরাগত বংশীধ্বনির মতই হয়ে আছে, ফাইভ-জি সেবার পরিনামও না জানি একই হয়। অনেকে মনে করেন, ফাইভ-জির লাইসেন্স দিয়ে অর্থ আদায়ের জন্যই এই সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকদের কোনো লাভ নেই। বরং সেবা বঞ্চিত হয়েও তাদের এজন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে।
মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির যেখানে অন্ত নেই, সেখানে সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত করা। থ্রি-জি-ফোর-জি সেবাই যখন আক্রা তখন ফাইভ-জি সেবার কথা বলা পরিহাসতুল্য। এখন কলড্রপ ও নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সমস্যার শিকার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট গ্রাহকরা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে ইন্টারনেটের গতিশ্লথতার কারণে। অপারেটরদের ব্যাপারেও রয়েছে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ। নানা কায়দা- কৌশলে অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয় বলে জোর অভিযোগ রয়েছে। বাড়তি সেবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেয়ে আগে প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করা উচিৎ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। সেবার প্রশ্নে গ্রাহকদের কাছ থেকে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব অভিযোগের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতি-অস্বচ্ছতা দূর করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। অত:পর ফাইভ-জি সেবা প্রদান অনেক সহজ হবে এবং যথার্থ ফলপ্রসুও হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।