পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত প্রায় দুই বছর ধরে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের শান্ত পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। সশস্ত্র এই গ্রুপগুলোর খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো হিংস্র কর্মকান্ড এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। তারা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে বসবাস করছে। ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ এনে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘পাহাড়ে আবার আগুন জ্বলবে’। তার এই ঘোষণার পর থেকেই এই অঞ্চলে হত্যাকান্ড ও অশান্তি দেখা দিয়েছে। সেই থেকে গত ২২ মাসে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হাতে ৯০ জন পাহাড়ি-বাঙালি নিহত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে ইউপিডিএফ ও জেএসএস সহ পাহাড়ি চারটি উপজাতীয় গ্রুপ। তারা অত্যাধুনিক অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা ও অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তাদের এসব অস্ত্রের জোগান দেয়া হচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। বিশেষ করে ভারত থেকে তারা সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন অভিযান পরিচালনা করে, তখন এসব সন্ত্রাসী সীমান্ত পার হয়ে ভারত গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রতিবেশি দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে সন্ত্রসী গ্রুপগুলো ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
১৯৯৬ সালে পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। চুক্তির অন্যতম শর্ত অনুযায়ী, ২৪০টি সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এসব সেনাক্যাম্প এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে আছে। তার আগে সেখানে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৫২টি অস্থায়ী নিরাপত্তা ফাঁড়ি ছিল। শান্তিচুক্তির পর বিগত প্রায় দুই দশক ধরে পাহাড়ে শান্তিময় পরিবেশ বজায় ছিল। তবে চুক্তি বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পাহাড়কে অশান্ত করে তোলার হুংকার দেয়া এবং অন্যান্য সংগঠনের অর্ন্তকলহে বিভক্তির মাধ্যমে পুরো পরিবেশকে পুনরায় অশান্ত করে তোলা হয়েছে। শান্তিচুক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক সময় পুরো পার্বত্য অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে ভারতের মদদ দেয়ার বিষয়টি ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ফলে তা বন্ধ হলেও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো পুনরায় তান্ডব শুরু করেছে। এক্ষেত্রে তারা ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে অর্থ, অস্ত্র ও আশ্রয় লাভ করছে বলে পাবর্ত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছে। গোয়েন্দা ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ১০ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র ক্যাডার ও সেমি-আর্মড ক্যাডার রয়েছে। তাদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, যা দেশের কোনো কোনো বাহিনীর কাছেও নেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ৮৫ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে কোনো সীমান্ত চৌকি নেই। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে ৪৪ কিলোমিটার পথ অরক্ষিত। ফলে এসব পথ দিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো প্রতিবেশি দেশগুলোতে সহজে যাতায়াত এবং অস্ত্র ও মাদক চোরচালান উন্মুক্তভাবে চালাতে পারছে। তাদের এসব অপকর্মে ভারত ও মিয়ানমার কোনো বাধা দিচ্ছে না। অথচ বাংলাদেশের অন্যান্য সীমান্তে ভারত অনুপ্রবেশের ছুঁতোয় বাংলাদেশীদের পাখির মতো গুলি করে মারছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সীমান্তের ক্ষেত্রেই তার ভূমিকা ব্যতিক্রম। বাইরের শক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি ছাড়া এসব সশস্ত্র গ্রুপের কোনোভাবেই টিকে থাকার কথা নয়। অথচ বারবার বলা হচ্ছে, ভারত আমাদের সবচেয়ে আপন এবং তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ বন্ধুত্বের উছিলায় ভারত তার চাহিদা মতো যা চেয়েছে, সরকার কোনো ধরনের দর কষাকষি ও প্রশ্ন ছাড়াই তা দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে আমরা কিছুই পাইনি। অথচ এ বিষয়টি বিবেচনা করে হলেও ভারতের পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে নজর দেয়া কিংবা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করার কথা নয়। দুঃখের বিষয়, ভারতের কাছ থেকে আমরা এ সহায়তাটুকু পাচ্ছি না।
সরকার পাবর্ত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা দেশের অন্যান্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, তা সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা পাচ্ছে না। এসব বাঙালি উন্নয়ন-বৈষম্যের শিকার এবং বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছে। তারপরও পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সেখানে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের দমন করতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নিতে হবে। যেসব এলাকা থেকে সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়েছে, সেগুলো পুনর্বহাল করতে হবে। অরক্ষিত সীমান্তে সীমান্ত চৌকি স্থাপন এবং কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়ে বাঙালি ও উপজাতীয়দের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়েছে, তার সমতা বিধানেও সরকারকে নজর দিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।