Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের জায়গায় রাশিয়ান সৈন্যরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৪ পিএম

উত্তর সিরিয়ায় আমেরিকান সৈন্যদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলে এখন টহলে নিয়োজিত রয়েছে রাশিয়ান সৈন্যরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার উত্তর সিরিয়ার দুইটি ঘাঁটি ত্যাগ করে তার সেনারা। এই শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া। উত্তর সিরিয়ার পরিত্যক্ত মার্কিন ঘাঁটিতে এখন রাশিয়ানদের পদচারণা। এ সংক্রান্ত ভিডিওতে ভরপুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

গত সপ্তাহে অকস্মাৎ উত্তর সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে মার্কিন সেনাদের চলে আসার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর ফলে সিরিয়ার কুর্দি সেনাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্রতার অবসান ঘটে। সিরিয়ার কুর্দিদের সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করে তুরস্ক।

মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরপরই তুরস্ক ওই অঞ্চলে প্রবেশ করে। ফলে সেখান থেকে লাখ লাখ শরণার্থী নিজ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। উপায়ান্তর না দেখে সিরিয়ান কুর্দিরা মৈত্রী গড়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে।

সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও তুরস্কের সেনাবাহিনীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে টহল দিচ্ছে রাশিয়ার সামরিক পুলিশ। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর মানবিজের দায়িত্ব নিয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাশিয়া। রাশিয়ার ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তুরস্কের সঙ্গে এ বিষয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে বলা হয়, সিরিয়া ও তুরস্কের সেনাবাহিনীর মধ্য কোনো সামরিক সংঘাত হতে দেবে না রাশিয়া।

তবে মানবিজে রাশিয়ান বাহিনীর পাশাপাশি সিরিয়ার সরকারি সৈন্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে। অপরদিকে তুর্কি নেতৃত্বাধীন বাহিনী শহরের বাইরে গ্রাম্য অঞ্চলে রয়েছে।

অন্যদিকে কুর্দি বাহিনীরা তুরস্ক সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর রাস আল-আইন তুর্কি বাহিনীর হাত থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ওই শহরের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ভারি মেশিনগানের গোলাগুলি শোনা গেছে।

তবে কুর্দিদের সঙ্গে মৈত্রী হলেও বাশার আল আসাদের সরকারি সৈন্যরা রাস আল-আইনের আশেপাশে যায়নি। সেখানে কুর্দি বাহিনী একাই লড়াই করছে তুর্কি বাহিনীর বিরুদ্ধে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে অন্যান্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নগরীতেই বেশি মোতায়েন করা হয়েছে, যেন সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা কুর্দি বাহিনীর ওপর চাপ কমে।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে শেষ মুহূর্তের এই মৈত্রীর বিনিময়ে ব্যাপক ছাড় দিতে হয়েছে কুর্দিদের। তাদের দীর্ঘদিনের স্ব-শাসনের দাবি থেকে তারা কার্যত সরে এসেছে।
২০১২ সালে আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর সরকারি বাহিনী উত্তর সিরিয়া থেকে সরে যায়। তখন থেকেই কুর্দি মিলিশিয়ারা স্ব-শাসনের কাঠামো সৃষ্টি করেছিল সেখানে। পরবর্তীতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটবাহিনীর সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের মাধ্যমে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হয় কুর্দিরা। আইএস-কে পরাজিত করার পর সিরিয়ার মোট আয়তনের প্রায় এক-চতুর্থাংশই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে কুর্দি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়টি ক্ষুব্ধ করে তুর্কিকে। সিরিয়ার কুর্দি মিলিশিয়ারা একটি গেরিলা গোষ্ঠীর শাখা, যে গোষ্ঠী কিনা কয়েক দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। তুরস্ক অনেক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিয়েছে যেন কুর্দিদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন এই দাবি অগ্রাহ্য করেছে। ফলে তুরস্কের পক্ষে এতদিন সিরিয়ান কুর্দিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। মার্কিন সৈন্যরা দীর্ঘদিন রাস আল-আইনে অনেকটা শান্তিরক্ষীদের মতো অবস্থান করছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে আচমকা ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তের ফলে আক্রমণ চালানোর সুযোগ পেয়ে যায় তুরস্ক। প্রথমে রাস আল আইন ও পরবর্তীতে পুরো উত্তর সিরিয়া থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সৈন্যরা সরে যায়। সেই রাস আল-আইন শহরেই শুক্রবার সবচেয়ে বেশি লড়াই হয়েছে কুর্দি ও তুর্কিদের মধ্যে।

এদিকে কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের এই সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি রাষ্ট্র একযোগে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিন পর বৃটেনও তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে।

তবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেছেন, চাপের মুখে তিনি আক্রমণ থেকে সরে আসবেন না। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শিগগিরই মানবিজ থেকে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে আনবো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ