পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
তিন দিকে ভারতের স্থলসীমা বেষ্টিত বাংলাদেশের দক্ষিণের খোলা জানালাটি হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। ভারত এবং মিয়ানমার ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই সম্পন্ন হয় বঙ্গোপসাগর দিয়ে। এছাড়াও বিপুল মৎস্যসম্পদসহ নানা প্রকার সামুদ্রিক সম্পদের ভান্ডার এ সাগর, যা আগামীদিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে। ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যা মিটে যাওয়ার পর এর তলদেশের সম্পদ আহরণ এবং তা কাজে লাগানোর সুযোগ অনেকটা বেড়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ যখন বঙ্গোপসাগর কেন্দ্রিক ‘বু-ইকোনমি’র সুফল ঘরে তুলতে সচেষ্ট, তখন বসে নেই অন্যরাও। ভৌগোলিক অবস্থানসহ নানা কারণে উপকূলবর্তী দেশগুলো ছাড়াও আঞ্চলিক পরাশক্তি চীনসহ অন্যান্য শক্তিগুলোর দৃষ্টি বঙ্গোপসাগরের অমিত সম্ভাবনার প্রতি নিবদ্ধ ছিল আগে থেকেই। সম্প্রতি তাদের সেই দৃষ্টির প্রভাব যেন বাড়ছে আরো দ্রুত গতিতে। বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে নানা রকম উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা, অবকাঠামো নির্মাণে অনুদান, ব্যবসায়িক অংশীদার, সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নিরাপত্তা জোরদারসহ বিভিন্ন আবরণে তাদের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তারে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও বিদ্যমান, যাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি। এর সর্বশেষ উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় নয়া দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যকার স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা, যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উপকূল জুড়ে স্থাপন করা হবে ২০টি রাডার। বাংলাদেশের উপকূলে ভারতের যে রাডার সিস্টেম বসাতে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, তার ধরন এবং ব্যবহার কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে দু’দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সমুদ্রপথে আসা বিভিন্ন ধরনের হুমকি মোকাবেলায় এই রাডার ব্যবস্থা দু’দেশের জন্যই কার্যকর হবে। তবে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যে এই সহযোগিতা চীনকে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। চীনা নীতিনির্ধারকরা এটা মনে করতে পারে যে, আসলে সমুদ্রপথে চীনের সামরিক গতিবিধি নজরে রাখার জন্যই ভারত এই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। কেননা, ভারত ইতোমধ্যে মরিশাস, সেশেলস এবং মালদ্বীপে এ ধরনের রাডার ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। মিয়ানমারেও একই ধরনের ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে রাডার সিস্টেম স্থাপনে সফল হলে এই পুরো অঞ্চলই ভারতের নজরদারি চালানোটা সহজ হয়ে যাবে। এ অবস্থা চীনের জন্য অস্বস্থিজনকই বটে। তাই তারা বিকল্প কোনো উদ্যোগ নিতে পারে এ অস্বস্থি কাটানোর জন্য।
এ অঞ্চলের দিকে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের গভীর দৃষ্টি এবং প্রভাব থাকলেও ভারত এবং চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাটা যেন একটু বেশিই দৃশ্যমান। ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমান্ত নৈকট্যের কারণে সেটা সঙ্গতও বটে। ২০১৬ সালে চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন কিনেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের সমুদ্রসীমায় নজরদারি ও নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিই ছিল এর লক্ষ্য। কিন্তু চীনা প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সাবমেরিন দু’টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে খবর পাওয়া যায়, মিয়ানমারকে সাবমেরিন বিধ্বংসী অত্যাধুনিক হালকা টর্পেডো (টিএএল) ‘শেয়েনা’ দিতে যাচ্ছে ভারত। চলতি বছরের গত ১২ জুলাই মিয়ানমার নৌবাহিনীর কাছে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির প্রথম চালান সরবরাহ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, সাবমেরিন বিধ্বংসী অত্যাধুনিক হালকা টর্পেডো দেওয়ার পর নিজেদের নৌবাহিনীর বহরে থাকা একটি রাশিয়ান সাবমেরিন মিয়ানমারকে হস্তান্তর করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। জানা যায়, কিলো ক্লাসের এই সাবমেরিনটি ১৯৮০ সালে রাশিয়া থেকে কিনেছিল ভারত। বর্তমানে সাবমেরিনটিকে আধুনিকায়ন করার কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৯ সাল শেষ হওয়ার আগেই সাবমেরিনটিকে পুরো আধুনিকায়ন সম্পন্ন হবে এবং মিয়ানমারকে হস্তান্তর করার পর্যায়ে পৌঁছাবে। এর মধ্য দিয়ে ভারত-মিয়ানমারের কৌশলগত নিরাপত্তা জোট নতুন উচ্চতায় পৌঁছার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় নৌবাহিনীর অস্ত্রসম্ভার রফতানি নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যকার রশি টানাটানির বিষয়টিও এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের কাছে চীনা সাবমেরিনের মালিকানা চলে আসার পর নীরবে শক্তির ভারসাম্য আনার প্রয়াস থেকেই ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে পরিমার্জিত কিলো-ক্লাস সাবমেরিন ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে মিয়ানমার। বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের ভূকৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় ভারতের সাবমেরিন হস্তান্তরের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক ও যথার্থই বলা চলে। কিন্তু চীন ও মিয়ানমারের মধ্যকার জটিল সামরিক ও অর্থনৈতিক যোগসূত্রগুলোকে খতিয়ে দেখলে বিষয়টির জটিলতাও ফুটে ওঠে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই চীনের সঙ্গে এক জটিল সম্পর্ক বজায় রেখেছে মিয়ানমার। কূটনৈতিক সম্পর্কে কখনো কখনো টানাপোড়েন দেখা দিলেও সেখানে সামরিক ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। সুতরাং, বলা চলে চীনের সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের দিক দিয়ে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা মিয়ানমারের রয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক ফ্যাক্টশিটে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৮ সালের মধ্যে মিয়ানমারের প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশ ছিল চীন। সুতরাং, মিয়ানমারের ওপর থেকে চীনের সামরিক প্রভাব রাতারাতি উবে যাবে, এ ধরনের প্রত্যাশা একেবারেই অমূলক। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ব্যাপারে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বিভিন্ন মহলে এই আলোচনা রয়েছে যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী কোনো কোনো দেশের আপত্তির কারণেই সরকার শেষ সময়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর থেকে সরে আসে। চীনের এ অঞ্চলে প্রবেশ নিয়ে এই দেশগুলোর আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের ব্যাপারে চীন সমঝোতা স্বাক্ষর করতে না পারলেও তারা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রজেক্টের আওতায় কয়েকশ’ কোটি টাকা ব্যায়ে মিয়ানমারে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে। ভারত ঘেঁষে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার পর চীনা অর্থায়নে এটি তাদের তৃতীয় গভীর সমুদ্র বন্দর। অন্যদিকে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের আশাও যে তারা ছাড়েনি, সেটিও বোঝা যায়। এখন বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ভারতীয় রাডার সিস্টেম স্থাপনের বিষয়টি সামনে আসায় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে নতুন তৎপরতা দৃষ্টিগোচর হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
মার্কিন নৌকৌশলবিদ আলফ্রেড থায়ার মাহান তার ‘দ্য ইন্টারেস্ট অব আমেরিকা ইন সি পাওয়ার’ (১৮৯৭) শীর্ষক বইয়ে জোর দিয়ে লিখেছেন, সমুদ্রবাণিজ্য বা নৌশক্তি যেভাবেই হোক, সমুদ্র যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পক্ষে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তার যুক্তি হচ্ছে, স্থলভূমিতে যতই সম্পদ থাকুক না কেন, সমুদ্রপথে সম্পদ বিনিময় বা বাণিজ্য যত সহজ, অন্য কোনো পথে অত সহজ নয়। তিনি লিখেছেন, একটি দেশ যদি দুনিয়ায় বড় শক্তি হতে চায়, তবে তাকে তার আশপাশের জলসীমায় নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে হবে। দেশটিকে এমন এক অঞ্চল তৈরি করতে হবে, যাতে অন্যরা তাকে সমঝে চলে এবং বাইরের শক্তিকে তার আশপাশ থেকে দূরে রাখা যায়। আলফ্রেড মাহানের এই বক্তব্য যে শত বছরেরও বেশি সময় পর সমান সত্য, তা স্বীকার না করে উপায় নেই। আজকের দুনিয়ায় বিশ্ববাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় সমুদ্রপথে এবং সমুদ্র যোগাযোগব্যবস্থার ওপর কার্যত একক নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ছড়ি ঘুরিয়ে যেতে পারছে। এখন চীন, রাশিয়া এবং ভারতের মতো দেশগুলোও একই নীতিতে তাদের চারপাশের সমুদ্রে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তৎপর। তার ধারাবাহিকতায় এটা পরিষ্কার যে, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এসব শক্তির সহযোগিতার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিরোধের আশঙ্কাও। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির আধিপত্য বিস্তার ও বাণিজ্যস্বার্থের এই জটিল হিসাব-নিকাশে বাংলাদেশের কৌশলী অবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই ভারতীয় রাডার স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। বিবিসি বাংলার একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে যৌথভাবে একটি কোস্টাল সার্ভেইল্যান্স বা উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে। তবে এই রাডার উপকূলের কোথায় স্থাপন করা হবে কিংবা এই ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বে কারা থাকবে সে বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, রাডার ব্যবস্থা স্থাপনের পর তার পরিচালনার দায়িত্বে কারা থাকবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাডার পরিচালনায় শুধুমাত্র বাংলাদেশের লোকবল ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু, ভারতের পক্ষ থেকে যৌথ লোকবল ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতের নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং দিল্লির সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের পরিচালক কমোডোর উদয় ভাস্কর বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে রাডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে লোকবল সাধারণত যৌথভাবেই সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে মরিশাস ও মালদ্বীপে রাডার ব্যবস্থা স্থাপনের উদাহরণ তুলে ধরে মি. ভাস্কর বলেন, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোকে উন্নত নজরদারিতে সক্ষমতা বাড়াতে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যার অংশ হিসেবে মরিশাস, সেশেলস, মালদ্বীপে রাডার ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের অমিত সম্ভাবনার বিষয়টি বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরপরই উপলব্ধ হয়। একাত্তরের পর চট্টগ্রাম বন্দরে পেতে রাখা মাইন অপসারণ করে বন্দর চালুকরণে সহায়তা দেয় তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর মধ্য দিয়ে তাদের প্রত্যাশা ছিল, পরবর্তীতেও বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবে দেশটি। বঙ্গোপসাগরের অবস্থানিক এবং কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়টি তখনই গভীরভাবে উপলব্ধি করে সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈরী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বস্তুত ওই সময় থেকে বিগত চার দশক যাবৎ ধাপে ধাপে, এ অঞ্চলে নিজের অবস্থান মজবুত করতে নানাবিধ প্রয়াস নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত। বঙ্গোপসাগরের ব্যাপারে অনাগ্রহী থাকতে পারছে না জাপানও। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত অর্থনৈতিক বন্ধন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) নামে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এর আওতায় দেশের দক্ষিণে মাতারবাড়িতে তৈরি হচ্ছে একটি মাল্টি-বিলিয়ন-ডলার গভীর সমুদ্র বন্দর। দেশের দক্ষিণে পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। এ লক্ষ্যে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে ইতোমধ্যে। গভীর সমুদ্রে তেলগ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বঙ্গোপসাগর ঘিরে বড় দেশগুলোর এ জাতীয় তৎপরতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এক ইতিবাচক প্রণোদনা। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত, অর্থনীতির ভরকেন্দ্র পশ্চিম থেকে ক্রমশ সরে আসছে পূর্বদিকে। স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতেও গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের। একই সাথে স্বার্থগত সংঘাতের আশঙ্কা থেকে বঙ্গোপসাগরে নৌ-নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ, যা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। তবে অন্যদের স্বার্থ বাদ দিয়ে কেবল নিজের কথা ভাবলেও বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কৌশলী উদ্যোগী হতে হবে বাংলাদেশকেই। কেননা, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিধি। বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে ওঠার চলমান প্রক্রিয়াটি অব্যাহত থাকবে আগামী দিনেও। সেক্ষেত্রে সংঘাতের চেয়ে সহযোগিতার পথ ধরে হাঁটলেই সকল পক্ষ অধিকতর উপকৃত হবে। পাশাপাশি, বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থ কাজে লাগিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করায় উদ্যোগী হতে পারবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী ক্ষুদ্র দেশ ও জাতিগুলো। তার জন্য সবাইকেই উদ্যোগী হতে হবে, যাতে বজায় রাখা সম্ভব হয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা। সেইসাথে এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যা থেকে লাভবান হতে পারে প্রতিটি পক্ষই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।