Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলমান অভিযানকে আরো শাণিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রায় এগারো বছরের শাসনকালে তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের একশ্রেণির নেতা-কর্মী এবং প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কতিপয় লোকজন যে বেশুমার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে, তা এখন দৃশ্যমান। দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে তাদের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হওয়ার কাহিনী বের হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের মানুষ তা দেখতে পাচ্ছে। দুর্নীতি বিরোধী এই অভিযানে এখন পর্যন্ত যাদের ধরা হয়েছে, তাদের উপার্জিত অর্থ-সম্পদের হিসাব দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়ছে। কপর্দকহীন অবস্থা থেকে তাদের কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া রূপকথাকেও হার মানায়। আশার বিষয়, চলমান এই অভিযানে যারা এখনও ধরা পড়েনি তাদের ভেতরও কাঁপন ধরিয়েছে। অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখানো থেকে বিরত রয়েছে, অনেকে দেশ ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে আপাত একটা স্বস্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও সর্বত্র ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের যে দাপট দেখা গেছে, তা এখন অনেকটাই থিতিয়ে এসেছে। তারা সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের ধারণা, যত দিন যাবে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ক্রমেই আড়ালে চলে যাবে, তারপর আবার আগের মতো দাপট দেখানো যাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হলেও এ ধারণা রয়েছে যে, অভিযান বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় ক্ষমতাদর্পীরা স্বরূপে ফিরে আসবে। ফলে সচেতন মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অভিমত, দুর্নীতি বিরোধী এই অভিযান পূর্ণ গতি নিয়ে বলবৎ থাকুক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন সময়ে সৎ পরামর্শ এবং মানুষের জন্য কাজ করার তাকিদ দিয়েছেন। এক শ্রেণির নেতা-কর্মী তা আমলে নেয়নি। তারা শুনেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেনি। তারা তাদের মতো করেই দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে এ ধারণা হয়তো বদ্ধমূল হয়েছিল যে, তাদের দল ক্ষমতায়, তাদের ধরবে কে? আর ধরলেও তাদের কোনো বিচার হবে না। এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই তারা একের পর এক অপকর্ম করে গেছে। তবে তারা বুঝতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী যে সতর্কবার্তা বারবার উচ্চারণ করেছেন, তা আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবায়িত হবে। প্রধানমন্ত্রী যখন অভিযান শুরু করলেন, তখন তাদের টনক নড়েছে। অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো তাদের ওপর আঘাত এসেছে। যারা ক্ষমতার দাপট ও দুর্নীতিতে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিল তারা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি তাদের অপকর্মের জন্য গ্রেফতার এবং দল থেকে বহিষ্কার হতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ধারণা ছিল, তাদের দমন ও প্রতিরোধ করা যাবে না। যখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু এবং প্রভাবশালী বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়, তখনও ভাবা হয়েছিল তারা অচিরেই ছাড়া পেয়ে যাবে। তবে যখন দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে এবং প্রভাবশালী অপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানো হচ্ছে না, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে এ বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করেছে যে, এদের দমন করা সম্ভব। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অপসারণ, যুবলীগের প্রভাবশালীদের গ্রেফতার, ক্যাসিনো সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে শুদ্ধি অভিযানের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আপাতত স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অভিযানের শুরুতে কয়েকজনকে গ্রেফতার করার পর দুর্নীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়কে দিনের পর দিন যে চাঁদাবাজি চলত তা বন্ধ হয়েছে। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী এবং তাদের পেছনে থাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারাও এখন সতর্ক। তাদের মধ্যে ধরা পড়া এবং নাম প্রকাশ হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে নিজ অপকর্ম ঢাকতে এবং ধরা পড়া থেকে বাঁচতে বিভিন্ন লবিং ও তদবিরের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে যাওয়ারও পথ খুঁজছে।

বহুদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতা-কর্মী ও দুর্নীতিবাজদের দাপটে যে অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষ জিম্মিদশার মধ্যে ছিল, তা থেকে পরিত্রাণে ‘শূন্য সহিষ্ণু’ শুদ্ধি অভিযানের প্রয়োজন ছিল। সরকার এ কাজটি শুরু করেছে। এতে আপতদৃষ্টিতে জনমনে এক ধরনের স্বস্তি ও শান্তি বিরাজ করছে। আমরা মনে করি, জনমনে সৃষ্ট স্বস্তি ও শান্তি স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে চলমান অভিযান অব্যাহত এবং আরও বেগবান করতে হবে। এটিকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক এবং যে দলেরই হোক, তাদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না কিংবা যাবে না-এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে, অভিযানে যাতে নিরীহ ও নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা অভিযান পরিচালনা করছে তাদের সততা ও নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এমনকি এ বাহিনীর মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ এবং অপরাধকর্মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করা যাবে না। প্রশাসনসহ দুর্নীতিপ্রবণ অন্যান্য যেসব খাত রয়েছে, সেখানেও অভিযান পরিচালনা করতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং অপরাধীকে শাস্তি পেতে হবে- এমন শাসন কায়েমের এখনই সুযোগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন