পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতির মূল কেন্দ্র ঢাকা। সারাদেশের মানুষেরও নজর ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিনে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে এবং তারা স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে। এতে সীমিত সুযোগ-সুবিধার রাজধানী যেমন মানুষের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে, তেমনি বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধায়ও টান ধরাচ্ছে। ফলে রাজধানী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, রাজধানীকে ভারমুক্ত করতে না পারলে একে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার উদ্বোধনকালে বলেছেন, মানুষের নগরমুখী প্রবণতা বন্ধ করতে গ্রামের জনগণের কাছে নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের পর আর কোনো মানুষ কর্মের বাইরে থাকবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্রামে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে এবং দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পুরোপুরি চালু হলে রাজধানী বা নগরমুখী মানুষের স্রোত যেমন কমবে, তেমনি বেকারত্বের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
রাজধানীতে ফুটপাত দখল থেকে শুরু করে বস্তি গড়ে উঠা সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষের প্রবেশ এবং স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার বিষয়টি অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। শহরমুখীরা মনে করে, একবার রাজধানীতে প্রবেশ করলে আর চিন্তা নেই। কোনো না কোনোভাবে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ফুটপাতে টুকরি নিয়ে বসে পড়া কিংবা রিকশা নিয়ে বের হয়ে গেলেই উপার্জনের পথ খুলে যাবে। রাজধানীর বাইরের সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের এই চিন্তাই রাজধানীকে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরে পরিণত করেছে এবং নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। রাজধানীর দখল, দূষণ এবং অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এই মানুষের চাপ বড় ধরনের বাধা হয়ে রয়েছে। বলা বাহুল্য, দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে যদি রাজধানীর মতো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল হ্রাস পেত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে এ পরিস্থিতির উত্তরণ তখনই হবে যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে, সেগুলো পুরোপুরিভাবে চালু হবে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে লাখ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। ইতোমধ্যে মিরেরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অর্থনৈতিক শিল্প অঞ্চলের কাজ শেষের পথে। অচিরেই এখানের শিল্পকারখানাগুলো উৎপাদনে যাবে। এছাড়া, মহেশখালী, কতুবদিয়াসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোও কর্মসংস্থানের বড় উৎসে পরিণত হবে। অর্থমন্ত্রী আগামী দশ বছরে যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বলেছেন, তা মূলত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে ধরেই বলেছেন। তবে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে লোকবলের প্রয়োজন পড়বে তাদের দক্ষ হতে হবে। এ কারণেই তিনি শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তদের অনুরোধ করে বলেছেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। অর্থমন্ত্রীর এ কথা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের জন্য একটি দিক নির্দেশনা। কারণ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যেসব শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে, সেগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় চালানো হবে। যন্ত্রের মাধ্যমেই বেশিরভাগ কাজ হবে। এসব যন্ত্র চালাতে দক্ষ শ্রমিকের বিকল্প নেই। ফলে এখন থেকেই যদি পরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানার ধরন অনুযায়ী বেকার তরুণ ও যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়, তবে এসব শিল্পকারখানায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদেরকে আর ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যেতে হবে না কিংবা বিদেশ থেকে শ্রমিক আনতে হবে না। এতে একদিকে যেমন দেশের টাকা দেশে থেকে যাবে, বেকারত্ব ঘুচবে, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নও দ্রুতায়িত হবে।
দেশের যেসব অঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠছে, তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল কোথায় কোথায় গড়ে উঠছে, এ ব্যাপারে শ্রমিকদের অনেকেরই জানা নেই। যদি অঞ্চলগুলো সম্পর্কে তাদের জানা থাকত বা জানানো হতো, তাহলে অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য সেসব অঞ্চলমুখী হতো। আমরা মনে করি, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর অবস্থান এবং সেগুলোতে শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তার তথ্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার। বেকারত্ব ঘুচানোর জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোই যে অন্যতম নিয়ামক শক্তি, এই বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তখন বেকার শ্রমিকরা শুধু রাজধানীমুখী না হয়ে অর্থনৈতিক শিল্পাঞ্চলমুখী হবে। এতে রাজধানীমুখী মানুষের ঢলও অনেকটা হ্রাস পাবে। আশা করা যায়, আগামী দশ বছরে শিল্পাঞ্চলগুলো যখন পুরোপুরি চালু হবে, তখন অর্থমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী কোনো মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে থাকবে না। এই লক্ষ্য সামনে রেখে, এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।