২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
জীবনকে উপভোগ করতে প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া জরুরি। কিন্তু কিভাবে সুস্থ থাকা যায়? সহজ করে বললে, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুমানো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও কর্মময় থাকাটাই মূল বিষয়। এ ছাড়া রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জানা ও স্বাস্থ্য সচেতন থাকাই আসল। তাই অনেক আগে থেকেই চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা মেনে আসছেন হাঁটাই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম-ডধষশরহম রং ঃযব শরহম ড়ভ ঃযব বীবৎপরংব । সব বয়সের মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী এ ব্যায়ামটি সবচেয়ে কম খরচে শারীরিকভাবে সবচেয় ভালো থাকার অন্যতম উপায়। জন্মের এক বছরের মাঝেই শিখে নেয়া এ ব্যায়ামটি ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গায় করা যায়, ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী এর তীব্রতা বাড়ানো-কমানো যায়, উপযুক্ত পোশাক এবং এক জোড়া ভালো জুতো ছাড়া এর জন্য আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন পড়ে না।
ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে নিয়মিত হাঁটার স্বাস্থ্যকর উপযোগিতা অনেক- হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদযন্ত্র স্বল্প চেষ্টায় দেহে অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে এবং ধমনীর ওপরও চাপ চাপ কম পড়ে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই হাঁটা অনেকটা উচ্চ রক্তচাপরোধী ওষুধের মতোই কাজ করে। এ ছাড়া হাঁটার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল নামে পরিচিত লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কমে যায়। এই খল কোলেস্টেরল পরিমাণে বেড়ে গেলে তা ধমনীর গায়ে জমা হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭২ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত তিন ঘন্টা অথবা দৈনিক আধা ঘন্টা হাঁটেন, তাদের ক্ষেত্রে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।
ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকিহ্রাস- যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিস প্রিভেশন প্রোগ্রামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা আর দৈহিক ওজন ৭ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫৮ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। অন্য দিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানান, দৈনিক এক ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ হ্রাস পায়। হাড়ের ক্ষয় ও ভাঙন রোধ- গবেষণায় দেখা গেছে, রজঃনিবৃত্ত-পরবর্তী বয়সে যেসব মহিলা প্রতিদিন অন্তত এক মাইল করে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে হাঁটেন, তাদের হাড়-ঘনত্ব কম-সচল মহিলাদের তুলনায় বেশি। হাঁটার ফলে যেমন হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা হ্রাস পায়, তেমনি আর্থ্রাইটিসসহ হাড়ের নানা রোগের আশঙ্কাও কমে যায়। কমে যায় বয়সকালে সহজেই কোমরের হাড় ভাঙার ঝুঁকিও। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন-হাঁটার ফলে ভালো লাগার অনুভূতি জাগে মনে, মানসিক চাপ বোধ হয় কম। এ সময় শরীরে এন্ডোরফিন নামে রাসায়নিকের ক্রিয়া বেড়ে যায় বলে ঘুম হয় আরামদায়ক।
মেডিসিন নেট ডটকম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন হাঁটার ফলে বিষণœতার উপসর্গ ৪৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা সপ্তাহে অন্তত দেড় ঘন্টা হাটেন, তাদের বোধশক্তি সপ্তাহে ৪০ মিনিটের কম হাঁটা মহিলাদের তুলনায় বেশি। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস-মহিলাদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে সপ্তাহে অন্তত দেড় থেকে আড়াই ঘন্টা হাঁটেন, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি, যারা হাঁটেন না তাদের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যান্সার স্টাডিতে প্রকাশিত আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাঁটার ফলে খাদ্যনালীর নি¤œাংশের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি-স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার এবং নিয়মিত হাঁটা দীর্ঘমেয়াদি ওজন নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। হাঁটার মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও সবলতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটা প্রয়োজন। তালিকা এভাবে বাড়তেই থাকবে। হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। যেকোনো ধরনের হাঁটাই উপকারী। তবে প্রকৃত সুফল পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন মধ্যমগতির হাঁটার উপদেশ দেন। তবে কোনো শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো হাঁটার অভ্যাস করুন।
ষ মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।